রঙে ঢঙে আমির খান

পিকে চলচ্চিত্রে আমিরের নতুন লুকের পরপরই আলোচনায় উঠে আসে এ অভিনেতার নতুন ছবি দাঙ্গাল। কারণ পিকের পরপরই চরিত্রের প্রয়োজনে আবার নিজের পুরোটা পাল্টে ফেলেন আমির।

রেসলার মহাবীর সিং পোঘাটের জীবনভিত্তিক এই ছবিতে নিজের ওজন প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ফেলে ইতোমধ্যেই সবাইকে চমকে দিয়েছেন মিস্টার পারফেকশনিস্ট। তবে এটা আমিরের জন্যে নতুন কিছু নয়। সেই কেয়ামত সে কেয়ামত তাক ছবির পর থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত নানা বেশভুসা পরিধান করেছেন তিনি। আমিরের এমন নানা রঙে ঢঙের বেশভুসা নিয়ে এ প্রতিবেদন।

কেয়ামত সে কেয়ামত তাক : আমিরের ভাগ্যের প্রথম শিকে ছেঁড়ে ২৩ বছর বয়সে। কেয়ামত সে কেয়ামত তাক ছবিতে জুহি চাওলার বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। ব্লকবাস্টার এই ছবিতে কলেজ পড়ুয়া ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেন আমির। যে কিনা হঠাত্ করেই ভালোবেসে ফেলে বাবার শত্রু স্থানীয় এক ব্যক্তির মেয়েকে। চরিত্রের প্রয়োজনেই এ ছবিতে খুব একটা খাটতে হয়নি আমিরকে। এখানে নিজে যা সেই বেশেই এসেছেন আমির। ২৩ বছরের এক প্রাণচাঞ্চল্যতায় পূর্ণ যুবকের চরিত্রে বেশ ভালোভাবেই মানিয়ে যান তিনি। আর ধরে রাখেন নিজের এই অবয়ব দিল, আন্দাজ আপনা আপনা, দিল হ্যায় ক্যায় মানতা নেহি এবং যো জিতা ওহি সিকান্দরসহ পরবর্তী বেশকিছু চলচ্চিত্রে।

রঙ্গিলা : পরপর বেশকিছু ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র উপহার দেওয়ার পর রঙ্গীলা ছবির জন্য নিজেকে একেবারে পাল্টে ফেলেন। পুরোদস্তুর একজন বখে যাওয়া মাস্তান চেহারা নিয়ে আসেন তিনি। অনেকটাই ভবঘুরে ধরনের এই চরিত্রে তাকে সাহায্য করেন আরেক অভিনেত্রী উর্মিলা মাতন্ডকার।

গলায় স্কার্ফ, পরনে রঙচঙে শার্ট আর নেটের গেঞ্জি, খোঁচা খোঁচা দাড়ি এবং মাথার টুপিতে নিজেকে বেশ বদলে নিয়েছিলেন এই অভিনেতা।

গোলাম : গোলাম ছবিতে এসে নিজের অন্যরকম আরেকটি দিক উপস্থাপন করেন আমির। শেকলসহ ডেনিম, বুট, জ্যাকেট, এক হাত পেঁচানো ও টুপিতে নিজের ক্যারিয়ারের অন্যতম ভালো অভিনয় উপহার দেন এই চলচ্চিত্রে।

তবে কেবল দর্শনধারীই নয়, গুণবিচারী হিসেবে আতি কা খান্ডালা গানটিও গেয়ে ফেলেন তিনি।যেটা কেবল তার উপস্থাপনাতেই নয়, চরিত্রতেও প্রভাব ফেলে অনেকটা।

লাগান : নিজের পরবর্তী চলচ্চিত্র আর্থ ও মেলাতে বেশ কয়েকবার নিজেকে পাল্টানোর চেষ্টা করেন আমির। তবে সেটা সবাইকে নাড়াক দেয় লাগান চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। আশুতোষ গোয়ারিকরের লাগান চলচ্চিত্রে ভুবন চরিত্রের মধ্য দিয়ে গ্রামের এক সাধারণ ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেন আমির।

যে ব্রিটিশদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে পুরো গ্রামকে সোচ্চার হতে সাহায্য করে। তাও ক্রিকেট খেলার ভেতর দিয়ে। ধুতি আর সাধারণ একটা ওয়েস্টকোট, সেই সঙ্গে মাথার পাগড়িতে অসাধারণভাবে মানিয়ে যান মিস্টার পারফেকশনিস্ট।

দিল চাহতা হ্যায় : লাগান চলচিত্রে আমিরের প্রচন্ড সাফল্যের পর সবার মনে প্রশ্ন জন্মেছিল- এবার? আর কি পারবে আমির তার নতুন কোনো রূপ নিতে? তাদের প্রশ্নের ইতিবাচক জবাব দিয়ে পরবর্তী চলচ্চিত্র দিল চাহতা হ্যায়-তে তরুণ এক পুরুষের চরিত্রে অভিনয় করেন আমির। ৩৬ বছর বয়সে নতুন করে আবার নিজের চুল পরিবর্তন করেন তিনি। ঠোঁটের নীচে ছোট দাড়ি রাখেন যেটা পরবর্তীতে হয়ে ওঠে তরুণ প্রজন্মের কাজে নতুন ধরনের ফ্যাশন!

মঙ্গল পান্ডে- দ্য রাইজিং : এ ছবিতে মুক্তিযোদ্ধা মঙ্গল পান্ডের ভূমিকায় অভিনয় করেন আমির। একমাথা কোঁকড়া লম্বা চুল আর তার সঙ্গে মানানসই একটা গোঁফে বেশ মানিয়ে যান আমির। এতে ভারতের স্বাধীন হওয়ার পথ পরিক্রমায় বিশাল ভূমিকা রাখতে দেখা যায় আমিরকে।

ভারতীয় সৈন্যদের পোশাক, সেই সঙ্গে ধুতি কুর্তাতেও দেখা যায় আমিরকে। ২০০৫ সালে ছবিটিতে আমিরের গোঁফ ভারতের সবাইকে কম-বেশি প্রভাবিত করে।

রঙ্গ দে বাসন্তী : ৪০ বছর বয়সে এসে ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের ভূমিকায় রাকেশ ওম প্রকাশ মেহরার রাঙ্গ দে বাসন্তীতে অভিনয় করেন আমির। কোনো দাড়ি-গোঁফ ছাড়াই নিজের অর্ধেক বয়সী চরিত্রটিতে এতটাই বেশি মানিয়ে যান আর দর্শক ছবিটিকে এতটাই ভালোবেসে ফেলেন যে খুব দ্রুতই নিজের ব্যবসা সফল ছবিগুলোর তালিকায় আরেকটি নাম যোগ হয় আমিরের।

তারে জামিন পার : কেয়ামত সে কেয়ামত তাক ছবিটির মধ্য দিয়ে শুরু করে শেষ অব্দি তারে জামিন পার ছবিটিতে শিক্ষকের ভূমিকায় নাম লেখান আমির খান।এ ছবিতে কোনো রকম অভিক্ততা ছাড়াই, অসাধারণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আর সাধারণত্বের সঙ্গে নিজেকে ফুটিয়ে তোলেন আমির।

গজনি : এ সিনেমার মাধ্যমে আমির ভক্তসহ চলচ্চিত্রের সব দর্শককেই অবাক করে দেন মিস্টার পারফেকশনিস্ট।একই ছবিতে দুটো রূপ নিয়ে আসেন আমির। একটি মিষ্টি স্বভাবের গোছালো।আরেকটি ছোট চুলের ভেতরে লম্বা দাগ মাথায় নিয়ে পাগলের মতন ঘুরতে থাকা।ছবিটিতে প্রথমবারের মতো নিজের শরীরকে সাজান আমির। সিক্স প্যাকে আবির্ভূত হন তিনি গজনিতে। আর সঙ্গে নিয়ে আসেন আকর্ষণীয় শরীরের ওপর কালির আঁচড়ে লেখা নানারকম নাম আর সংখ্যা!

থ্রি ইডিয়টস : আমির খানের যে কখনোই বয়স হয় না সেটা বোঝাতেই যেন আবার ৪৫ বছর বয়সে এসে নিজের ছেলের বয়সের চরিত্রে অভিনয় করেন আমির। কলেজ পড়ুয়া চরিত্রটিতে অভিনয়ের জন্যে নিজের ছেলেকে অনুকরণ করেছিলেন বলে জানান আমির। তবে সেটা যাই হোক আর যতটুকুই হোক, নিজের ভুল পুরোটাই পাল্টে মিষ্টি স্বভাবের সদ্য কলেজে ওঠা বুদ্ধিদীপ্ত একটি চরিত্রে মিশে যান আমির।

মাথার চুলের অগোছালো ভাব এবং অবশ্যই আচরণ! নিজের হাত-পা নাড়ানো কিংবা অঙ্গ ভঙ্গীতেও যেন পুরোপুরি কিশোর সেজে গিয়েছিলেন আমির।

তালাশ-দ্য আনসার লাইস উইদিন : এ ছবিতে এসে আবার ঝুপ করে গুরুগম্ভীর ধারায় নিজেকে সাজিয়ে ফেলেন আমির। পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।খাকি পোশাক, ছোট ছোট মানানসই চুল, গাম্ভীর্য আর ছোট্ট গোঁফে নিজের বাইরের ভুলটা আবার নতুন করে সবার সামনে তুলে ধরেন এই তারকা।

ধুম থ্রি : ধুমের এই সিক্যুয়েলে এসে সবাইকে আবার চমকে দেন আমির নিজের অভিনয়ে মাধ্যমে। এখানেও গজনির মতো দুটো রূপ দেখা যায় তার। দুই ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। হাতাকাটা শার্ট, কলার পুরোটা তোলা আর মাথায় একটা টুপি- নিজেকে এভাবেই সাজান আমির ছবিটিতে। তবে এটাই শেষ নয়, এক চরিত্রে বুদ্ধিমান আর চতুর এবং অন্যটিতে পুরোটাই অন্যরকমভাবে নিজেকে সাজান এ অভিনেতা।

পিকে : সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া আমিরের আরেকটি ব্যবসা সফল ছবি পিকে। এতে অন্য গ্রহের মানুষ হিসেবে অভিনয় করেন আমির। যেখানে নিজের ভুল আরো একবার পুরোপুরি পাল্টে ফেলেন তিনি। আর পোশাক? বোরকা থেকে শুরু করে ঘাঘড়া, শার্ট-প্যান্ট এবং জন্মদিনের পোশাক কোনোটাই বাদ রাখেননি এ অভিনেতা। নিজেকে ভিনগ্রহ থেকে পৃথিবীতে চলে আসা অসহায় এক প্রাণীর চরিত্রে পুরোপুরি মিলিয়ে নেন আমির।



মন্তব্য চালু নেই