যে তথ্যগুলো জানার পর আপনার কাছে নাকের গুরুত্ব বেড়ে যাবে বহুগুনে!

আপনাকে যদি বলা হয় ইন্দ্রিয়শক্তিগুলোর যে কোন একটি বিসর্জন দিতে, কোনটি বেছে নেবেন আপনি? আপনার কাছে হয়ত সবচেয়ে অপ্রয়োজনীয় মনে হবে আপনার ঘ্রাণশক্তি। আপনি ধরেই নেবেন, না দেখলে, না স্পর্শ পেলে চলবে না, কিন্তু ঘ্রাণ না পেলেও চলবে। আপনি যতটা হেলাফেলা করছেন আপনার এই ইন্দ্রিয়টিকে এটি কিন্তু ততটাই কাজের বস্তু। ভাবুন তো, ড্রয়িং রুমে বসে আরাম করে টেলিভিশন দেখছেন। রান্নাঘরে খাবার পুড়ছে বসে বসেই কী করে জানতেন? অফিস থেকে বাসায় ফিরেছেন। দরজা খুলতেই টের পেয়ে গেলেন, গ্যাস অন করা ছিল? কীভাবে টের পেলেন এত দূর থেকে? আসুন জেনে নিই ঘ্রাণ নিয়ে আরও মজার কিছু কথা যা জানার পর আপনার কাছের নাকের গুরুত্ব বেড়ে যাবে বহুগুণে।

১। নারীরা পুরুষের কামোত্তেজনার ঘ্রাণ পায়
কখনও কি এমন হয়েছে যে, আপনার কারও প্রতি আকর্ষণ কাজ করছে কিনা তা আপনি সচেতনভাবে প্রকাশের আগেই সেই মানুষটি বুঝে গেল? আপনি হয়ত ভাবছেন, আপনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজের কারণে এমনটি হয়েছে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এর জন্য দায়ী ঘ্রাণশক্তি। একজন পুরুষ যখন কোন নারীর প্রতি কামোত্তেজণা বোধ করে তখন তার শরীর থেকে ভিন্ন গন্ধের ঘাম নিঃসৃত হয়। তার গন্ধেই নারীটি টের পেয়ে যায় কী ঘটছে। আরেকটি গবেষণা আরও মজার। সেখানে নারী-পুরুষ উভয়কে ভয়ের এবং হাসির সিনেমা দেখানো হয়। ঘামের গন্ধ থেকে চিহ্নিত করতে বলা হলে নারীরা ভয়ের গন্ধ আলাদা করতে পারেন। মূলত গন্ধ শোঁকানোর সময় মস্তিষ্কের এম আর আই করার মধ্য দিয়ে এটি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, তারা আসলে ভয়ের গন্ধ চিনতে পারেন। পুরুষের ঘ্রাণশক্তি এই প্রতিটি ক্ষেত্রেই দূর্বল!

২। ঘ্রাণ খসায় মানিব্যাগের টাকা
রেস্টুরেন্টের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ক্ষুধা না থাকলেও খাবারের গন্ধে ক্ষুধা পেয়ে যায় আমাদের। শুধু গন্ধ টেনে নিয়ে বসায় দোকানের ভেতর, কতসময় পকেটে কম টাকা থাকলেও তাই দিয়েই খেয়েদেয়ে বেরিয়ে ভাবি, ‘হায়! সব খরচ করে ফেললাম!’ শুধু খাবারে নয়, খরচের ক্ষেত্রে ঘাণের প্রভাব অন্য পণ্যেও আছে। কখনও কি এমন হয় নি আজিজ সুপার মার্কেটে নতুন বইয়ের গন্ধে পাগল হয়ে বই কিনে ফেলেছেন? বইপ্রেমীদের নেশা থাকে ওই গন্ধে! ঘ্রাণ শক্তির এই ক্ষমতা আপনি খেয়াল না করলেও ব্যবসায়ীরা কিন্তু ঠিকই খেয়াল করেছেন। পোশাকের দোকানে মেয়েদের পোশাকের স্টোরে এবং ছেলেদের পোশাকের স্টোরে তাই তারা ব্যবহার করেন পৃথক পৃথক সুগন্ধি। লাস ভেগাসে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন পণ্যের গন্ধ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিক্রয় বাড়ায় সেখানকার স্টোরগুলোতে!

৩। স্মৃতিকে প্রভাবিত করে
আপনি হয়ত একটা হরর সিনেমা দেখছেন। অথবা খুব হাসির কোন সিরিয়াল। কোন কারণ নেই কিন্তু হঠাৎ আপনার মনে পড়ে যাচ্ছে, ছেলেবালায় কবে অংকে ফেল করেছিলেন অথবা গাছে চড়তে গিয়ে পড়ে গিয়ে খুব ব্যাথা পেয়েছিলন। কেন মনে পড়ে যাচ্ছে এসব? কারণ আপনার ঘ্রাণশক্তি। ঘ্রাণ স্মৃতিতে জমা করে রাখে অনেক তথ্য। হয়ত আশপাশে এমন কোন খাবারের গন্ধ আপনি পাচ্ছেন যা আপনার ছেলেবেলার সেই স্মৃতিকে সম্পর্কিত করে। আপনি কিন্তু স্মৃতির এই যাদুকে কাজে লাগাতে পারেন! কিভাবে? ধরুণ, আপনার পরীক্ষা। পড়ার সময় কোন একটা খাবার বেক করুন। কেক হতে পারে, বিস্কিট হতে পারে। পরীক্ষার দিন একই গন্ধযুক্ত কেক/বিস্কিট নিয়ে গেলেন সাথে। বিজ্ঞান বলে, এতে আপনার ফলাফল ভাল হবে, কারণ গন্ধের সাথে সম্পর্কিত করে মনে করতে পারবেন পড়াগুলো! এখন আপনার শিক্ষক যদি পরীক্ষার হলে কেক নিয়ে প্রবেশ করতে না-ই দেন তাহলেও হতাশ হবেন না। আপনার নাক তারপরও আপনাকে সাহায্য করে যাবে।

৪। মনের উপর প্রভাব ফেলে
ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরেছেন। ঘরের সুগন্ধে অর্ধেক ক্লান্তি চলে গেল। কখনও হয় এরকম? আবার ধরুন, বসে বসে একাগ্র মনে কাজ করছেন। হঠাৎ উদ্বিগ্ন বোধ করছেন। কোথাও কি কিছু হচ্ছে যা হওয়া ঠিক নয়? এই দুশ্চিন্তার সূত্রও গন্ধ। আমরা যে বলি, বিপদের গন্ধ পাচ্ছি। সত্যিই কিন্তু তাই। আমরা সত্যিই বিপদের গন্ধ পাই। মন্দিরে মাজারে এমন একটা গন্ধ থাকে যা আপনার মনে ভক্তি উদ্রেক করে। কারণ কিছুই না। সবসময় ওই পরিবেশে ওই গন্ধ পেয়েই আপনি অভ্যস্ত। অভ্যাসের কারণে একই গন্ধ একই আবেশ এনে দেয় বারবার। কিছু গন্ধ আপনাকে বিরক্ত করে। কিছু গন্ধ জাগিয়ে তোলে পুরোনো কষ্ট। খেয়াল করে দেখুন তো, শেষ বৃষ্টিতে ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধটা কোন অতীতে নিয়ে গিয়েছিল কি না আপনাকে? হঠাৎ পথ চলতে বেলীর ঘ্রাণ কি কখনও মনে করিয়ে দিয়েছে কারও কথা? ঘ্রাণ এভাবেই রাজত্ব করে মনের অবস্থার উপর!

৫।ডিপ্রেশন
বিষন্নতা বা ডিপ্রেশনের বিভিন্ন কারণ আপনি হয়ত জানেন। কিন্তু কখনো ভেবেছেন কি, ঘ্রাণশক্তিও একটি কারণ হতে পারে? ঘ্রাণশক্তি কম থাকার ব্যাধিকে এনোজমিয়া বলে। আপনি হয়ত ভাবছেন ঘ্রাণশক্তি কম থাকা কোন সমস্যাই না! এতে বরং টয়লেটের বাজে গন্ধসহ আরও নানান গন্ধ যা আপনার মেজাজ খারাপ করে দেয় তা থেকে মুক্তি পাবেন আপনি! হ্যাঁ, তা হয়ত পাবেন। কিন্তু এতে আপনার জীবনের ঝুঁকিও বাড়বে। কারণ আপনাকে সতর্ক করে দেয় যেসব গন্ধ সেগুলোও কম পাবেন আপনি। কিন্তু আপনার অজানা যে সমস্যাটি আপনার হতে পারে, তা হল ডিপ্রেশন। আপনার কাছে তথ্য ঠিকমত না পৌঁছানোর কারণে আপনি যা যা মিস করেন তা একপ্রকার শূন্যতা তৈরি করে। অন্যদের আপনার নিজের চেয়ে বেশী অগ্রসর বোধ হতে থাকে। তাই আপনি হতাশায় ভুগতে শুরু করেন।



মন্তব্য চালু নেই