‘যে কোনো সময় ভেঙে যাচ্ছে ২০ দলীয় জোট’

‘যে কোনো সময় ভেঙে যাচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।’ জোটভুক্ত একাধিক দলের নেতা এই তথ্য বক্তব্য জানিয়েছেন। তারা বলছেন, পরপর দু’বার সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থ ২০ দলীয় জোটে বর্তমানে অবিশ্বাস-সন্দেহ চরম আকার ধারণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি সিনিয়র এক নেতার জোটবিরোধী বক্তব্য অবিশ্বাস-সন্দেহ আরও বাড়িয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীর আলোচনা সভায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে তার উপদেষ্টা শাহজাহান ওমর জোটবিরোধী বক্তব্য রাখেন। তার এ বক্তব্য জোট ভাঙার ইন্ধনকে আরও উস্কে দিয়েছে।

২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো সূত্রে জানা গেছে, রীতিমত ক্ষুব্ধ ও অপমানিত জোটের শরিক নেতারা নিজেদের মধ্যে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন। শনিবার রাতে রাজধানীর একটি অভিজাত এলাকায় জোটের এক নেতার বাড়িতে ১২টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসছেন। সেই বৈঠক থেকেই তারা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জোট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক কর্নেল ড. অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম কাছে শনিবার দুপুরে জোট ছাড়ার বিষয়ে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে ওই দলের নেতা ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহজাহান ওমর জোটবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। তার এ বক্তব্যে আমরা রীতিমত অপমানিত ও অসম্মানিত।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির পুরোধা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান গণতান্ত্রিকভাবে বিএনপি গঠন করেছিলেন। তিনি জোর করে বা ভয় দেখিয়ে কাউকে দলে (বিএনপি) যোগ দিতে বাধ্য করেননি। জাতীয়তাবাদের চেতনায় ও জিয়াউর রহমানের সঠিক নেতৃত্বের কারণে তৎকালীন নেতারা প্রথমে জাগো দল পরে বিএনপিতে যোগ দেন। এ দেশের জাতীয়বাদী আদর্শের রাজনীতিকে তারা শক্তিশালী করেন। কিন্তু শাহজাহান ওমর যেভাবে বক্তব্য রেখেছেন, তাতে তিনি শহীদ জিয়াকেই খাটো করেছেন। প্রকৃতপক্ষে জিয়ার অন্যতম এক খুনীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হিসেবে শাহজাহান ওমরের পক্ষেই এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া সম্ভব।’

এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘আমরা নিজেদের মধ্যে ইতোমধ্যেই আলোচনা করেছি। আজও করব। ১২ শীর্ষ নেতা রাতে বৈঠক করবেন। তারা সিদ্ধান্ত নেবেন কীভাবে বাকি সম্মানটুকু বজায় রেখে জোট থেকে বের হওয়া যায়।’

বিএনপি নেতা শাহজাহান ওমরকে সরকারের এজেন্ট হিসেবে দাবি করে জোটের অন্যতম নেতা শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘শুধু বিএনপির সঙ্গে জোট করার কারণে বিগত ৫/৬ বছর যাবত আমরা আমাদের হক-হালালি ব্যবসাও করতে পারছি না। জোটের হেন কোনো নেতা নেই যার বিরুদ্ধে নাশকতাসহ বিভিন্ন ফৌজদারি মামলা নেই। অনেক মামলায় চার্জশিটও দাখিল হয়েছে। আমাদের চেয়ারম্যান কর্নেল অলি আহমদ, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ডেমোক্রেটিক লীগের মহাসচিব সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি মো: ওয়াক্কাস, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাইদ আহমেদ, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন জেলে গিয়েছেন। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবুদল লতিফ নেজামীর মতো প্রবীণ ও নিতান্তই ভদ্রলোককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। ভয়-ভীতি দেখিয়েছে। বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মর্তুজাসহ জোটের অনেক নেতার নামে মামলা হয়েছে। অথচ শাহজাহান ওমর বলছে, জোটের নেতারা নাকি আন্দোলনে সক্রিয় নয়।’

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘জোট শরিকরা যদি আন্দোলনে সক্রিয়ই না থাকেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কেমন করে একাধিক মামলা হল? আর সরকারের এজেন্ট শাহজাহান ওমরের বিরুদ্ধে গত ছয় বছরেও কেন একটি মামলা হল না। যেখানে বিএনপির হেন কোনো নেতা মামলা থেকে রেহাই পাননি, সেখানে কেমন করে তিনি মামলাহীন থাকেন।’

সেলিম আরও বলেন, ‘আমরাও বুঝতে পারি ও মানি যে, বর্তমানে আগের মত ২০ দলীয় জোটের প্রয়োজনীয়তা ও আবেদন নেই। তা ছাড়া, বিএনপি নিজেই তো জোট গড়ার মূল কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে বর্তমানে সরে এসেছে। বিএনপির অনাগ্রহের কারণেই জোটকে আরও কার্যকর করা যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘শাহজাহান ওমরের জোটবিরোধী এ ধরনের বক্তব্যের পেছনে নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য আছে। আমরা বিএনপির কাছে তার বক্তব্যর ব্যাপারে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করছি। বিএনপি যদি আমাদের সঠিক ব্যাখ্যা না দেয়, তাহলে আমরাও আর অপমানিত হয়ে তাদের সঙ্গে থাকব না। এটি পরিষ্কার।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান বলেন, ২০ দল কোনো আদর্শিক জোট নয়। এ জোট গঠন হয়েছিল আন্দোলন ও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। যেহেতু এ মুহূর্তে আমরা আন্দোলনকে নয়, দল পুনর্গঠনে গুরুত্ব দিচ্ছি। নিকট ভবিষ্যতে নির্বাচনের সম্ভাবনা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সেহেতু জোট থাকার যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি না।

তিনি আরও বলেন, আমি দলের নীতিনির্ধারণী কেউ নই, তবে হাজারো নেতাকর্মীর যে মতামত আমিও তার পক্ষে। জোট বিলুপ্ত করে দল পুনর্গঠনে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

এদিকে, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মুস্তফা ভূঁইয়া, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান দ্য রিপোর্টের কাছে শাহজাহান ওমরের বক্তব্যের বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা জানান, রাতের (শনিবার) বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিএনপি এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত বলে আমরা দাবি করি। না দিলে আমরা পরবর্তীতে করণীয় নির্ধারণ করব।



মন্তব্য চালু নেই