যে কারণে রওশনের সঙ্গে দেখা হল না জিনপিংয়ের

দশম জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ টানা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে আসা বিদেশি অতিথির সাক্ষাৎবঞ্চিত হলেন। এবার চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং’র সঙ্গে দেখা করতে ব্যর্থ হলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদপত্মী রওশন। বহু চেষ্টা তদবির করেও শি’র শিডিউলে নিজের সাক্ষাতের বিষয়টি তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।

জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতারা মনে করছেন, ধারাবাহিকভাবে বিদেশি অতিথিদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির বৈঠক না হওয়ার বিষয়টি তাদের ‘গুরুত্ব না দেওয়া’। দলটির একটি সূত্র মনে করে, দেশের রাজনীতিতে জাপার ভূমিকা নিয়ে সন্দিহান বলেই চীনের প্রেসিডেন্ট ও তার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ পাননি জাপার কোনও নেতা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব ও জাপার প্রেসিডিয়ামের সদস্য ফখরুল ইমাম এমপি বলেন,‘আমি দেশের বাইরে ছিলাম, বলতে পারবো না’।

জাপার কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী জিএম কাদের বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও তার প্রতিনিধি দল সরকারের সঙ্গে বৈঠক করবে এটা স্বাভাবিক। পাশাপাশি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও বৈঠক করে। কিন্তু জাপার সঙ্গে জিনপিং এর বৈঠক হয়নি, না চেয়ারম্যানের না বিরোধী দলীয় নেতার। ফলে, এটি পরিষ্কার বিরোধীদল হিসেবে তাদের উপেক্ষা করা হয়েছে। এই গুরুত্বহীনতা দল হিসেবে জাপার অবনমন।

জিএম কাদের মনে করেন, একটি বিদেশি রাষ্ট্র তার বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি সম্ভাব্য শক্তিশালী দলগুলোর সঙ্গেও কথা বলে। বিনিয়োগের নিশ্চয়তা বাড়াতেই এ ধরনের বৈঠক করা হয়। কিন্তু, এবার চীনের প্রেসিডেন্ট বিরোধীদলের সঙ্গে বৈঠক করেনি। এর মানে হচ্ছে দল হিসেবে জাপা গুরুত্ব হারাচ্ছে। বিদেশিদের কাছে গুরুত্ব হারালে, দেশেও তো এমন দলের দাম নেই।

চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর নিয়ে রাষ্ট্রীয় শিডিউলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং বিরোধীদলীয় নেতা ও জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের বৈঠক নিয়ে কোনও তথ্য ছিল না। যদিও হোটেল লা মেরিডিয়ানে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে শিডিউল বৈঠক করে খালেদা জিয়া ও বিএনপির একটি প্রতিনিধিদলকে সাক্ষাৎ দেন চীনা প্রেসিডেন্ট। তারা অন্তত ৪০ মিনিট কথা বলেন।

জাপার সাবেক এক যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিরোধী দলের বৈঠক না হওয়া জাতীয় পার্টির আন্তর্জাতিক উইংয়ের ব্যর্থতা। যারা বিদেশি ডেলিগেটদের বিষয়টি দেখেন, তারাই এই ব্যর্থতার কারণ।

যদিও এ ব্যাপারে জিএম কাদের বলেন, এটি মাত্র একটি বিভাগের ব্যর্থতা নয়, সামগ্রিকভাবে বিচার করতে হবে। এর থেকে জাপাকে উত্তরণ ঘটাতে হবে। না হলে দলকে খারাপ রেজাল্ট দেখতে হবে। আগামীতেও কোনও বিদেশি ডেলিগেটও জাপার সঙ্গে বসতে চাইবে না।

গত ১৯ আগস্ট বাংলাদেশে কয়েক ঘণ্টার সফরে এসেছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। ওই সফরেও তার সাক্ষাৎবঞ্চিত হন রওশন। যদিও ওইদিন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার অফিশিয়াল প্যাডে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে রওশন জানান, যে তার সঙ্গে কেরির বৈঠক হয়েছে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ক্যারির সঙ্গে সাক্ষাতে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এ দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে উন্নয়নে অন্যতম অংশীদার হতে পারে। মার্কিন দূতাবাসের উদ্যোগে রাজধানীর এডওয়ার্ড এম কেনেডি সেন্টার ফর পাবলিক সার্ভিস অ্যান্ড আর্টস (ইএমকে সেন্টার) মিলনায়তনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’

গণমাধ্যম এই সংবাদ প্রচার করার পর জাপার সূত্রে জানা যায়, ওইদিন কেরির সঙ্গে কোনও বৈঠকই হয়নি রওশনের। আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ হয়নি, উপরন্তু তাদের মধ্যে দুয়েক শব্দের সৌজন্য বিনিময় হয়েছে মাত্র। কেরির ওই দিন ধানম-ির ইএমকে সেন্টারে কর্মসূচি ছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। জন কেরি আসেন এবং নির্ধারিত বক্তব্যের পর বেরিয়ে যাওয়ার সময় ঢাকায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট জন কেরিকে রওশন এরশাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। জবাবে মুচকি হেসে হেঁটে চলে যান ব্যস্ত জন কেরি।

জাপা সূত্রে জানা যায়, চীন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি চীনা দূতাবাস আরও প্রায় ৬ মাস আগেই চূড়ান্ত করেছে। ওই সময় থেকেই রওশন এরশাদ প্রেসিডেন্টের সফর শিডিউলে তার সাক্ষাতের বিষয়টি ওঠানোর চেষ্টা করেন। যদিও চীনের তরফে কোনও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।

দলীয় সূত্র জানায়, বিরোধী দল হিসেবে জাপা নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে পারেনি। এ কারণে দেশ ও দেশের বাইরে কোথাও দলটির বিরোধী দলের ইমেজ দাঁড়ায়নি।

শুক্রবার রাতে চীনের প্রেসিডেন্টের সম্মানে বঙ্গবভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ নৈশভোজ আয়োজন করেছিলেন। ওই ভোজে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, রওশন এরশাদসহ সংসদ সদস্যরাও আমন্ত্রণ পান। ওই ভোজেও অংশ নেননি রওশন এরশাদ।

তার ঘনিষ্ঠ এক জাপা নেতা জানান, তিনি সিএমএইচ এ চিকিৎসাধীন। অসুস্থ আছেন। জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও জাপা মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে ফোন করা হলেও তারা ফোন ধরেননি। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।



মন্তব্য চালু নেই