যে কারণে মাহীর ওপর হামলা

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র প্রার্থী হওয়ায় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রফেসর এ কি এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে মাহী বি চৌধুরীর ওপর হামলা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যাতে ভয়ে তিনি দ্রুত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। স্পষ্ট করে কারো নাম বলা না হলেও অভিযোগের তীর তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের দিকেই। মাহী বি চৌধুরী ও তার ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই মিলেছে।

রোববার দিবাগত রাত ২টায় রাজধানীর সাতরাস্তা এলাকার বিজিপ্রেসের সামনে এটিএন নিউজের প্রোগ্রাম শেষে মাহী তার স্ত্রীসহ বাসায় ফেরার পথে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হন। এ সময় তার গাড়ির গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়।

ঘটনাস্থলে মাহী ও তার স্ত্রী লোপা আহত হন। পরে তাদের ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় রোববার বিকেলে রাজধানীর শিল্পাঞ্চল থানায় অজ্ঞাত ৮/১০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন মাহী বি চৌধুরী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাহীর ঘনিষ্ঠজনরা দাবি করেন, ‘তার (মাহী) জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে নির্বাচনের মাঠে থাকা প্রভাবশালী মহল এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তার অপরাধ, অল্প কয়েক দিনেই তিনি (মাহী) গণসংযোগ চালিয়ে উত্তর নগরবাসীর মনে স্থান করে নিয়েছেন এবং ভোটারদের মাঝে প্রভাব তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যেভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও টিভি টকশোতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন, তাতে সেই প্রভাবশালী মহল ভীত হয়ে পড়েছে। তাই মাহীকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিতে তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।’

হামলায় আহত মেয়র প্রার্থী মাহী নিজেই অভিযোগ করেন, শনিবার সারা দিন তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য নানাভাবে চাপ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচন করি তা প্রভাবশালী একটি মহল চায় না।’

কারো নাম উল্লেখ না করে মাহী বলেন, ‘আমি মনে করি, যারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়, তারাই ব্যক্তিগত আক্রোশে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ওপর হামলা করেছে।’

মাহী বলেন, ‘ঘটনা কারা ঘটিয়েছে, সে ব্যাপারে আমি মন্তব্য করব না। তবে ষড়যন্ত্র চলছে। ঘটনার সঙ্গে আনিসুল হক, না তাবিথ আউয়াল জড়িত তা সময়ই বলে দেবে। এ বিষয়ে আমি এখনই কিছু বলতে চাই না। যে কারণে আমার ওপর হামলার হয়েছে সেই ঢাকা সিটি নির্বাচন থেকে আমি সরে দাঁড়াব না। শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনে আছি, নির্বাচনে থাকব ইনশাআল্লাহ।’ ২৮ এপ্রিল নগরবাসীকে নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান মাহী।

এদিকে হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন আহত মাহী বি চৌধুরী। রোববার বিকেলে ইউনাইটেড হাসপাতালে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ দাবি করেন। মাহী বলেন, ‘ব্যক্তিগত আক্রোশে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই আক্রমণ চালানো হয়েছে। যারা নির্বাচন বানচাল করতে চায় তারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি নির্বাচন করছি, এটা তাদের পছন্দ না।’

রোববারের হামলার ঘটনা বর্ণনা করে মাহী বলেন, ‘রাত ২টায় এটিএন নিউজের ইয়াং নাইট প্রোগ্রাম শেষ করে বারিধারার বাসায় ফিরছিলাম। সাতরাস্তার মোড়ে বিজি প্রেসের সামনে সিটি ফিলিং স্টেশন থেকে তেল নিয়ে গাড়িটি কিছু দূর এগিয়ে গেলে ৮-১০ জন দুর্বৃত্ত লাঠিসোঁটা নিয়ে আমার গাড়ির ওপর হামলা চালায়। তারা গাড়ির সামনের গ্লাস ভেঙে ফেলে। এ সময় এক দুর্বৃত্ত আমাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে এবং চুল ধরে টেনে-হিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামানোর চেষ্টা করে। দুর্বৃত্তরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আমাকে বলতে থাকে, তোর নির্বাচন করার এত শখ? এক পর্যায়ে দুর্বৃত্তরা গাড়ির পেছনের গ্লাস ভেঙে ফেলে এবং আমার স্ত্রী আশফাহ্ হক লোপাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। দুর্বৃত্তরা আমাকে বাঁ হাত ও চোখে এবং চালক শহীদ মণ্ডলকে ডান কাঁধে আঘাত করে পালিয়ে যায়।’

মাহী বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। আমি নিরাপত্তা চাই নাই, কারণ সব প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির বাসায় সরকার পুলিশি নিরাপত্তা দিলেও বি চৌধুরীর বাড়িতে কোনো পুলিশ দেওয়া হয় নাই।’

এত কিছুর পরও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন না বলে জানান মাহী বি চৌধুরী। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না। নির্বাচনে আছি, থাকব, প্রজন্মের বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ।’



মন্তব্য চালু নেই