যে কারণে দল গোছাতে পারছে না আ.লীগ

আওয়ামী লীগের জন্য পরিস্থিতি অনুকূল, তবু তারা পারছে না। বিএনপির জন্য পরিস্থিতি প্রতিকূল, তারাও পারছে না। প্রধান দুই দলের নীতি-কর্মসূচি, আন্দোলনের ধরনে, কথায় শত অমিল। তবে দল গোছাতে না পারার বিষয়ে তাদের মধ্যে কোনো অমিল নেই। কোন্দল, রেষারেষি- এসব ব্যাপারে তাদের দারুণ মিল। উভয় পক্ষই সম্মেলন, কমিটি গঠন তথা দল গোছাতে ব্যর্থ। তৃণমূলে দুই দলই ঝিমিয়ে পড়েছে। এর থেকে উত্তরণের চকিত-লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোটামুটি শান্ত। মাঠে বিরোধী দল সামাল দেওয়ার ঝক্কি নেই। দেশজুড়ে নেই তীব্র জন-অসন্তোষ। অর্থনীতিও গতিশীল। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের জন্য এটি বেশ সুসময় বলেই মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। এমন ‘সুসময়ে’ও দল গোছাতে পারছে না আওয়ামী লীগ। উল্টো নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ ও কোন্দলে দুর্বল হয়ে পড়ছে সংগঠন। অনেক জেলায় দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় সংগঠন ঝিমিয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের একাধিকবার তাগাদা সত্ত্বেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হচ্ছে না।

দলীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক কেন্দ্রীয় সম্মেলন। এর আগেই তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন গুছিয়ে নিতে চান দলটির নীতিনির্ধারকরা। গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনাও দিয়েছেন। এরই মধ্যে যেসব জেলায় দলের সম্মেলন হয়েছে এমন জেলাগুলোতে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে প্রচার করারও নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় প্রধান, যাতে সামনে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে দলের সমর্থনপুষ্ট প্রার্থীরা জয়লাভ করতে পারেন। কিন্তু কোন্দলে জর্জরিত জেলা-মহানগর আওয়ামী লীগে এ নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের মধ্যেই।

‘সুসময়ে’ও দল গোছাতে পারছে না আ. লীগ
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের জেলা কমিটির মেয়াদ তিন বছর। কিন্তু দলটির কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতাদের ১১ জেলায়ই এক দশক বা তারও বেশি সময় ধরে সম্মেলন হচ্ছে না। ফলে সেসব জেলায় সাংগঠনিক স্থবিরতা বিরাজ করছে। বর্তমানে আওয়ামী লীগের ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার বেশির ভাগেই দলীয় কোন্দল রয়েছে। এসবের মধ্যে অন্তত দুই ডজন জেলা-মহানগরে দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ চরমে পৌঁছেছে। দ্বন্দ্বের কারণে ওই সব জেলা-মহানগরে সংগঠন বেহাল।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট- এ চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয়ে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা ও কোন্দলের বিষয়টি সামনে আসে। নির্বাচনের পর পরাজয়ের কারণ খুঁজতে তৎপর হয় আওয়ামী লীগ। মাঠপর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ ও জরিপ চালানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধানে বিদেশি নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে পরিচালনা করা হয় গবেষণাও।

এসব তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণায় পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে সাংগঠনিক দুর্বলতা ও নেতাদের মধ্যে কোন্দলের বিষয়টি উঠে আসে। এরপর কোন্দল নিরসন করে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নানা উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে পর্যায়ক্রমে মত বিনিময় করেন বিভিন্ন জেলা ও মহানগর কমিটির নেতাদের সঙ্গে। বিরোধ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগঠন শক্তিশালী করার জন্য কয়েক দফায় তৃণমূলে চিঠি দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। কিন্তু কোনো কিছুতেই স্থানীয় নেতাদের দ্বন্দ্বের অবসান হয়নি।

আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, কোন্দল ভুলে এক হতে না পারলে কয়েক মাস পর পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের সমর্থক প্রার্থীদের নিশ্চিত ভরাডুবি হবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন প্রতিবেদককে বলেন, ‘যেখানেই তিন বা ততোধিক বাঙালি থাকবে সেখানেই কোন্দল থাকার সম্ভাবনা থাকবে। এটি পরিবার, রাষ্ট্র, সমাজ সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সে হিসেবে আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় সংগঠনে কোন্দল থাকবে না এটি আশা করা বাস্তবসম্মত নয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের মৌলিক আদর্শগত কোনো বিরোধ নেই। যে দ্বন্দ্ব আছে তা ব্যক্তিগত ক্ষমতা ও আধিপত্যের দ্বন্দ্ব। আমরা চেষ্টা করি এ কোন্দল যেন সংঘর্ষে রূপ না নেয়। কোন্দল যেন সমাজকে কলুষিত না করে। আমরা আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে থাকি। এটি চলমান প্রক্রিয়া।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মতো এত বড় একটা দলে পদ-পদবি নিয়ে কিছুটা দ্বন্দ্ব থাকবেই। এটা নতুন কিছু নয়। তবে এসব দ্বন্দ্ব দলের মূল কাজকে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত করবে না।’

দলের নেতারা প্রকাশ্যে সব স্বীকার না করলেও নাম প্রকাশ না করে যেসব তথ্য দেন তাতে সংগঠনের বেহাল চিত্রই ফুটে ওঠে। কোনো কোনো জেলায় দলীয় নেতাদের দ্বন্দ্ব সব সময় লুকানোও থাকে না। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিরোধপূর্ণ জেলা-মহানগর কমিটির নেতারা বাধ্য না হলে একে অন্যের ছায়াও মাড়াতে চান না। তাঁদের বেশির ভাগেরই দলীয় কার্যালয়ে যাতায়াত নেই। যে যাঁর মতো নিজস্ব কর্মীবলয় তৈরি করে ব্যক্তিগত ‘চেম্বারে’ বসে রাজনীতি করেন। দায়সারাভাবে বিভিন্ন দিবসকেন্দ্রিক কর্মসূচি পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে তাঁদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়াতে তাঁদের কোনো কর্মকাণ্ড নেই। এমনকি তাঁরা সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচিগুলোও জনগণের কাছে ঠিকমতো পৌঁছাতে পারছেন না।

তৃণমূলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরোধ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সরকারে থাকা দলটির নেতাকর্মীদের বিএনপিতে যোগদানের ঘটনাও ঘটেছে। গত সোমবার রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান তাহমিনা খাতুন এবং নিমপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল কুদ্দুস পলাশ অনুসারীদের নিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন।

বিরোধে বেহাল-স্থবির দুই ডজন জেলা ও মহানগর কমিটি : দলীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অন্তত দুই ডজন জেলা-মহানগর কমিটিতে অভ্যন্তরীণ বিরোধ চরমে পৌঁছেছে। কোন্দলে বিপর্যস্ত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ। নেতাদের দ্বন্দ্বে বিভক্ত হয়ে পড়েছে কর্মীরাও। কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ১০-১২ জন নেতা ‘একলা চলো’ নীতি অনুসরণ করছেন।

জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ছাড়া অন্য নেতারা নগর কমিটির ব্যানারে কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন না। নতুন মহানগর কমিটি গঠন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে মনোনয়ন ও সর্বশেষ চসিক নির্বাচন নিয়ে নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ বাড়ে। আ জ ম নাছির উদ্দিন প্রতিবেদককে বলেন, সহসভাপতি ডা. আফছারুল আমীন ও নুরুল ইসলাম বিএসসি নতুন কমিটি গঠন এবং ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হওয়ার পর দলীয় কোনো কর্মসূচিতে আসছেন না। এম এ লতিফ দু-একটিতে এসেছিলেন।

ডা. আফছারুল আমীন এমপি বলেন, ‘আমাকে বেশির ভাগ সময় দল ও সরকারি কাজে ঢাকায় অবস্থান করতে হয়। অন্য যাঁরা যাচ্ছেন না তাঁদের বিষয়ে আমি বলতে পারব না।’ তিনি আরো বলেন, ‘নতুন কমিটির সভাপতি-সম্পাদক নিয়ে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। তবে অন্য পদগুলো নিয়ে কেউ সন্তুষ্ট হয়েছে, কেউ হয়নি। এ কারণে হয়তো কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।’

কোন্দলের কারণে বরিশাল মহানগরেও দলীয় কর্মকাণ্ড গতি হারিয়েছে। অনেক বছর ধরে বরিশালে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন জেলা কমিটির সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। কিন্তু ২০০৮ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন হিরন। এরপর হিরনের প্রভাব বাড়ে। হাসানাত আব্দুল্লাহর অনুসারী অনেক নেতাকর্মী নগর কমিটি থেকে বাদ পড়ে। ওই সময়ে দ্বন্দ্বের কারণে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হাসানাতপন্থীদের বড় অংশ হিরনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এতে হিরন নির্বাচনে পরাজিত হন। গত বছরের এপ্রিলে হিরন মারা যাওয়ার পর নগরের রাজনীতিতে কোন্দল আরো বাড়ে। নিজেদের অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া হয়ে ওঠে হাসানাতপন্থীরা।

জানা গেছে, হাসনাতপন্থীরা এরই মধ্যে সাদেককে নগর কমিটির নেতৃত্বে আনতে সুপারিশ পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে। হাসানাতপন্থীদের আটকাতে পিছিয়ে নেই শওকত হোসেন হিরনের অনুসারীরাও। হিরনের স্ত্রী জেবুন্নেছা আফরোজকে নগর কমিটির সভাপতি করতে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সাদেক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। রাজনৈতিক পরিবারে বড় হয়েছি। মহানগরের নেতৃত্ব দেওয়া আমার পক্ষেই সম্ভব। নেতাকর্মীরাও চাচ্ছেন, আমি নেতৃত্ব আসি। এমনকি তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যেই কেন্দ্রে আমার পক্ষে সুপারিশ পাঠিয়েছে।’

দলীয় সূত্র মতে, যশোর আওয়ামী লীগে কোন্দল চরমে রয়েছে। জেলার রাজনীতিতে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের শায়েস্তা করতেও কুণ্ঠিত হন না। শাহীন চাকলাদারের আধিপত্যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন সদর আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। তিনি আলাদা বলয় তৈরি করে শাহীন চাকলাদারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিবদমান দুই পক্ষের নাম দিয়েছে ‘এমপি গ্রুপ’ ও ‘চেয়ারম্যান গ্রুপ’। এ দুই পক্ষ আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করে থাকে। বিভিন্ন সময়ে এ দুই পক্ষের নেতৃত্বে থাকা দুই নেতা পৃথক সমাবেশে একে অন্যের তীব্র সমালোচনা করে থাকেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়ায় জেলা কমিটি নিয়ে বিরোধ তুঙ্গে। এ জেলায় পাল্টাপাল্টি কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে। ১০ বছর পর গত বছরের ২৫ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। কিন্তু এ সম্মেলনে কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। সম্মেলনের দিন কেন্দ্রীয় নেতারা সদর উদ্দিন খানকে সভাপতি ও আজগর আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা দেন। কিন্তু একই দিনে শহরের আড়ুয়াপাড়ায় আওয়ামী লীগের পুরনো জেলা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে কুষ্টিয়ার পৌর মেয়র আনোয়ার আলীকে সভাপতি এবং কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রউফকে সাধারণ সম্পাদক করে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে দুই কমিটি আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। দুই পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে সংঘর্ষও হয়েছে।

জয়পুরহাট জেলা কমিটির সভাপতি শামসুল আলম দুদু ও সাধারণ সম্পাদক এস এম সোলায়মান আলীর মধ্যে বিরোধ চরমে। দুদুর অনুসারীদের অভিযোগ, সোলায়মান আলী পুরো জেলার রাজনীতিতে একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করায় বিরোধ বেড়েই চলছে। সোলায়মান জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদেরও দলে ভেড়াচ্ছেন।

বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ক্যশৈ হ্লা মারমার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক কাজী মুজিবর রহমানের বিরোধের জের ধরে গত জুলাইয়ে জেলা কমিটির এক জরুরি সভা ডেকে মুজিবরকে বহিষ্কার করেন ক্যশৈ হ্লা মারমা। তবে এ বহিষ্কার গঠনতান্ত্রিক নয় বলে দাবি করেন মুজিবর।

কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক মেজর জেনারেল (অব.) আ ম সা আ আমিন এবং সাধারণ সম্পাদক জাফর আলীর মধ্যে বিরোধের কারণে আ ম সা আ আমিন রাজনীতিতে অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি।

দিনাজপুর জেলায় সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে প্রায়ই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।

সূত্র মতে, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুন অর রশীদ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার মধ্যে রয়েছে আধিপত্যের দ্বন্দ্ব। এতে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। এ বছরের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি হতে চেয়েছিলেন সুজা। কিন্তু হারুনের বিরোধিতায় তা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে সম্মেলনের দিনও সংঘর্ষ বাধে।

বিরোধ রয়েছে নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যেও। বিভিন্ন সময়ে দলীয় কর্মসূচি পালনের সময় এ বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে।

জানা যায়, নেতাদের কোন্দলের কারণে ১১ জেলায় দলের কাউন্সিল হয় না এক যুগ বা তারও বেশি সময় ধরে। এসব জেলার প্রতিটিতেই বাড়ি দলের প্রভাবশালী এক বা একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার। সেসব জেলায় সাংগঠনিক স্থবিরতা বিরাজ করছে। এসব জেলার মধ্যে সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ১৮ বছর আগে ১৯৯৭ সালে। কিশোরগঞ্জেও দলের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ১৯৯৭ সালে। কুমিল্লা জেলায় ১৯৯৭ সালে শেষ সম্মেলন হয় দলের। ১০ বছর আগে ২০০৫ সালে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল। শরীয়তপুরে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে এক যুগ আগে। গাইবান্ধায়ও এক যুগ আগে শেষ সম্মেলন হয়। সাত বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে আছে চাঁদপুর জেলা কমিটি। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে পরিচিত গোপালগঞ্জে দলের শেষ সম্মেলন হয়েছিল ১১ বছর আগে ২০০৪ সালে। ঝালকাঠিতে সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০৬ সালে। ভোলায় ২০০৫ সালে সর্বশেষ সম্মেলন হয়। নেত্রকোনায় সর্বশেষ সম্মেলন হয় ১০ বছর আগে।-কালের কণ্ঠ



মন্তব্য চালু নেই