যেসব কারণে নির্বাচনে যেতে চায় বিএনপি

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেতে চায় বিএনপি। ইসি, মাঠ প্রশাসন এবং দলীয় সরকার নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে দলে। প্রকাশ্যে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার কথা বললেও ভেতরে-ভেতরে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি, সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই চলছে। দল গোছানো, আন্দোলন কৌশল নির্ধারণ ও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে এখন দলটি ব্যস্ত। পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সরকারের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে ক্ষমতাবলয়ের বাইরের রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবীদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা শুরু করেছে। সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত দলের বাইরে থাকা নেতাদের আবার দলে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

নেতাদের সাথে কথা বলে জানাগেছে,বিএনপি নির্বাচন বর্জনের কথা ভাবছে না। অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য দর-কষাকষিতে সব রকমের চেষ্টা চালাবে দলটি । সরকারকে চাপে রাখবে। যদি এই কৌশল সফল না হয় তবে দাবি আদায়ে শেষ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে রাজপথের আন্দোলনে যাওয়ার চিন্তাও করছেন নীতিনির্ধারকেরা। গত মাসে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বেগম খালেদা জিয়া নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় সম্পৃক্ততা বাড়ানো এবং দ্রুত দল গোছানোর কাজ সম্পন্ন করার তাগিদ দেন। আন্দোলনের প্রস্তুতি রাখতেও বলেন। ইতিমধ্যে ৭৫ টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অর্ধেকের বেশি জেলার কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। বাকিগুলো আগামী দেড়-দুই মাসের মধ্যে ঘোষণার টার্গেট নেওয়া হয়েছে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পরবর্তী ‘রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন’-এ অংশ নেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা হয়। বৈঠক সূত্রে জানা যায়,বিএনপির বৃহত্তর স্বার্থে সব রকম প্রতিকূল পরিস্থিতি মেনে নিয়েই আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে মত দিয়েছেন সিনিয়র নেতারা। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশ নিতে এখন থেকেই সব রকম প্রস্তুতি নিতে তারা বিএনপি চেয়ারপারসনকে পরামর্শ দিয়েছেন। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের এই বৈঠকে নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকার’ব্যবস্থা প্রসঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।

দলের উপদেষ্টা-পরামর্শকরা বলছেন, নির্বাচনে যাওয়া হবে মন্দের ভালো। নির্বাচনে না গেলে নিবন্ধন টেকানোর শংকা, মামলা হুলিয়ার শিকার মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সামলানোর ঝুঁকিতে পড়তে হবে বিএনপিকে। দশ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি আবার সংসদের বাইরে থাকলে বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ে নির্যাতিত নেতারা আরো হতাশ হয়ে যাবেন।

দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন,দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও আগামী নির্বাচনে আমরা অংশ নিতে চাই। গত নির্বাচনে না যাওয়ায় দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নির্বাচনে যাওয়ার জন্য দলের ভেতর এবং বাইরে থেকে নানামুখী চাপ আছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নিবন্ধনের বিষয়টি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আইনের (আরপিও)৯০ (এইচ) (১) অনুসারে পরপর দুইবার নির্বাচনে অংশ না নিলে দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে বিএনপির। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনকে ঘিরে অনেক আইন সংশোধন হলেও সরকার বিএনপিকে চাপে রাখতে গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের নিবন্ধন বাতিলের ধারাটি রেখে দিয়েছে। তিনি বলেন,আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে আমরা প্রস্তুত। তবে এ জন্য উপযুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ দরকার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি মার্কা নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। নির্বাচনে না যাওয়ায় আমরা সংসদে বিরোধী দলে নেই, আমাদের কোনো এমপি নেই। চেয়ারপারসনের কোনো সরকারি প্রটোকল নেই। বেগম খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে চিন্তিত আমরা। বিএনপি চেয়ারপারসনের দু’টি মামলার বিচার কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ দুটি মামলার রায়ের ওপর বহুলাংশে নির্ভর করছে বিএনপির রাজনীতির ভবিষ্যৎ। খালেদা জিয়াকে যদি কারাগারে যেতে হয় সেক্ষেত্রে বিএনপির রাজনীতির প্রেক্ষাপট হবে একরকম। আর তিনি যদি মুক্ত অবস্থায় থাকেন সেক্ষেত্রে বিএনপির অন্যরকম। বেগম জিয়া নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ না পেলে নির্বাচনে যাওয়াটা অনিশ্চয়তার আবর্তে পড়বে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল, গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাসী। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বিএনপি । তবে অবশ্যই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এতদিন ধরে বার বার প্রমানিত হয়েছে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠ হবে না। তিনি দাবি করেন, নতুন আওয়ামী দলীয় লোক নুরুল হুদাকে সিইসি করার পর নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা যৌক্তিকতা ও আরও দৃঢ় হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অবশ্যই যাবে। আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনে হবে না। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে শিগগিরই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘নির্বাচনী রূপরেখা’ তুলে ধরবেন।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টর মওদুদ আহমদ বলেন, একদলীয় কোনো নির্বাচন বাংলাদেশের মাটিতে আর হবে না। গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য বিএনপির আন্দোলনও চলবে, নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা মনে করি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন ছিলো যুক্তিসঙ্গত। আগামী নির্বাচনে অবশ্যই আমরা অংশ নিবো। তবে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে সে নির্বাচন।-ইত্তেফাক



মন্তব্য চালু নেই