যেভাবে মানুষ তার লেজ হারিয়েছে দুইবার
মানুষের লেজ থাকে না বলেই আমরা জানি। কিন্তু নতুন গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, আমাদের পূর্বপুরুষেরা দুই দুইবার লেজ হারিয়েছিলো।
কারেন্ট বায়োলজি নামক সাময়িকীতে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয় যে, আমাদের প্রত্যেকেরই একটি টেইলবোন আছে এবং জীবনের শুরুতে অর্থাৎ ভ্রূণ অবস্থায় সবারই এমন লেজ থাকে এবং তা আস্তে আস্তে অদৃশ্য হয়ে যায়।
লেখক লরেন সালান বলেন, “মেরুদণ্ডীদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে মাংসল লেজ ছিল। খুবই তরুণ ভ্রুণের মধ্যে এদের পাওয়া যায়। তাই অন্যান্য সমস্যা হওয়া ছাড়া এর থেকে মুক্ত হওয়া বেশ কঠিন”। তিনি বলেন, “মানুষ এবং মাছ উভয়ের মধ্যেই এ ধরণের বৃদ্ধি প্রোথিত থাকে তিমির পায়ের মতোই বিলুপ্তপ্রায় অঙ্গ হিসেবে”।
এই রহস্যময় বিলুপ্তপ্রায় লেজের উৎপত্তি হয় মাছের মধ্যে। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সালান ৩৫০ মিলিয়ন বছর বয়সী অ্যাথেরেটমন নামক জীবাশ্ম মাছ নিয়ে গবেষণা করেন। এটি স্থলজ ও চোয়ালযুক্ত প্রাণীর পূর্বপুরুষ, যাদের বর্তমানে আঁশযুক্ত মাংশল লেজ আছে এবং নমনীয় পুচ্ছ পাখনাও থাকে।
সালান জীবন্ত মাছ এবং অ্যাথেরেটমন এর তুলনা করতে গিয়ে দেখেন যে, এই গঠনটি সম্পূর্ণই ভিন্ন ছিলো। সালান দেখেন যে, দুটি লেজই একটির উপর আরেকটি জন্মাতে শুরু করে এবং তারপর নিজেদের মত বৃদ্ধি পায়। দুই শতাব্দীর এই বৈজ্ঞানিক বিশ্বাসটি উল্টে যায় এই উদ্ভাবনের জন্য যে, আধুনিক পূর্ণবয়স্ক মাছের পুচ্ছ পাখনা ছিলো পুরুষানুক্রমিক লেজের সহজ সংযুক্তি যা স্থলজ প্রাণীদের মধ্যেও ছিলো।
বিযুক্ত দুইটি লেজই বিবর্তনের ধারায় পাল্টে গেছে। মাছ তাদের মাংসল লেজটি হারিয়েছে এবং নমনীয় লেজটিকে ধরে রেখেছে তাদের সাঁতারের উন্নতির জন্য। তিনি ব্যাখ্যা করেন, “পৃষ্ঠ পাখনাটি রয়েছে তাদের অধিক পরিমার্জিত নড়াচড়ার জন্য, এটি একটি পেশীবহুল লেজ যা হ্রাস পেতে পারে(মূলত শক্তিশালী সাঁতারের জন্য উপস্থিত থাকে)”।
মাছ আধা জলজ প্রাণীতে পরিণত হয় এবং তারপর ভূমিতে বাস করা প্রাণীরা তাদের নমনীয় পৃষ্ঠ পাখনা হারায়। কিন্তু মাংসল অংশটি থেকে যায় যা সময়ের সাথে সাথে পরিচিত উপাঙ্গে পরিণত হয়, যেটি আমরা এখন দেখতে পাই কুকুর, বিড়াল, গরু এবং অন্যান্য প্রাণীতে। কুকুরের লেজ চাক্ষুষ যোগাযোগের জন্য, পিঠ থেকে উড়ন্ত পোকামাকড় তাড়ানোর জন্য এবং অন্যান্য আরও অনেক কাজের জন্য উপকারী।
মানুষের পূর্বপুরুষ সহ পূর্ণবয়স্ক বানরে লেজ কমার প্রক্রিয়াটি একধাপ এগিয়ে যায়। সালান বলেন, “অস্থিময় লেজটি হারায় খাড়া হয়ে চলাচলের জন্য। মাছের মত ভ্রূণীয় অস্থিময় লেজটি আমাদের দেহের পিঠের নিম্নাংশে থেকে যায় যা পুচ্ছাস্থি বা টেইলবোন নামে পরিচিত। বিকাশ ব্যাহত হওয়ার আণবিক সংকেত এটি যা হাত অথবা পায়ের মতোই বৃদ্ধি পেতে পারতো। এভাবেই মানুষ ও মাছের ভ্রূণ লেজের গঠন নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল শেয়ার করে”।
প্রথম বনমানুষের জীবাশ্মের রেকর্ড তত বিশাল নয়, যেহেতু বনমানুষে লেজ নেই। তিনি মনে করেন, আমাদের প্রাইমেট (স্তন্যপায়ী) পূর্বপুরুষেরা লেজ হারায় প্রথম দুই পায়ে হাঁটার সাথে সাথেই।
মন্তব্য চালু নেই