যেভাবে বেড়ে ওঠেন ক্রিকেটার তাইজুল
আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে অভিষেক ম্যাচে এমন কীর্তি এখনো কোনো ক্রিকেটার গড়তে পারেননি, যেটা গড়লেন বাংলাদেশের স্পিনার তাইজুল ইসলাম।
সোমবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্যাপ পরেই গড়ে ফেললেন হ্যাটট্রিকের বিশ্ব রেকর্ড। এ ছাড়া জিম্বাবুয়ের পানিয়াঙ্গারা, নিয়াম্বু ও চাতারাকে সাজঘরে ফিরিয়ে ওয়ানডে ইতিহাসের ৩৬তম হ্যাটট্রিকের মালিক হয়ে গেলেন তিনি।
কিন্তু ক্রিকেটার হওয়ার আগে অনেক লড়াই করতে হয়েছে তাইজুলকে। নাটোরের রাজবাড়িসংলগ্ন এলাকার কাঁঠালবাড়িয়ায় বেড়ে ওঠা দরিদ্র পরিবারের এই ছেলে প্রথম পেস বোলার হিসেবে ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেন।
পেস বোলার হিসেবে ক্রিকেট শুরু করলেও প্রয়াত ক্রিকেট গুরু আবদুল্লাহ আল আশরাফি মঞ্জু তাকে স্পিনার হিসেবে গড়ে তোলেন। নিজের বোলিংয়ে উন্নতি করার জন্য নাটোর ছেড়ে রাজশাহীতে চলে আসেন তিনি।
এরপর রাজশাহীর বিভিন্ন ক্রিকেট একাডেমিতে যাতায়াত শুরু করেন তাইজুল। ভালো খেলার জন্য অল্পদিনের মধ্যেই রাজশাহীর ক্রিকেট কোচদের নজরে আসেন তিনি।
মাঠে অনুশীলন ও প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে অংশগ্রহণের মাত্রা বাড়িয়ে দেন তাইজুল। ফলে ২০১১ সালে ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর প্রথম শ্রেণির লিগে অভিষেক হয় তার।
আর রাজশাহী বিভাগীয় দলের হয়ে অভিষেক ম্যাচে বরিশাল বিভাগীয় দলের বিপক্ষে ৬ উইকেট নেন তাইজুল। আর তাতে ম্যাচটিতে রাজশাহী ১১৬ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় পায়।
তাইজুলের অভিষেক ম্যাচগুলো স্মরণীয়। তাই তো আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক করে অভিষেকটা আরো রঙিন করলেন তিনি।
তাইজুলের মা তসলিমা বেগম ক্রিকেট তেমন বোঝেন না। অসুস্থতার কারণে তিনি ছেলের অনন্য কীর্তি না দেখতে পেলেও বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের মধ্যকার শেষ ওয়ানডে ম্যাচটির খবর পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে শুনেছেন। তার ছেলে এই খেলায় ভালো করেছেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ দলও জয় পেয়েছে। ফলে গর্বে মা তসলিমা বেগমের চোখে আনন্দের অশ্রু ঝরেছে।
তাইজুলের মায়ের এ অনুভূতির কথা জানালেন তার চাচাতো ভাই সাব্বির হোসেন। তিনি বলেন, তাইজুল তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। পরিবারের অনেক দুঃখ-কষ্টের মধ্যে বেড়ে ওঠেন নাটোরের রাজবাড়িসংলগ্ন কাঁঠালবাড়িয়ায়। ছেলেকে কখনো ক্রিকেট খেলতে বাধা দেননি মা তসলিমা বেগম ও বাবা ইস্কান্দার শেখ। তাদের উৎসাহ পেয়ে আজকের তাইজুল বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাস গড়েছেন। আর তাইজুল যেন এ সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে পারেন- সেজন্য সবার দোয়া চেয়েছে তার পরিবার। তাইজুলের ক্রিকেট খ্যাতির জন্য এখন অনেকেই তাদের পরিবারকে আলাদা নজরে দেখেন।
মন্তব্য চালু নেই