যেভাবে নেদারল্যান্ডস রাষ্ট্রদূতের ব্যাগ চুরি করলো রুবেল

নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত লিওনি কুলেনারার চুরি হওয়া ব্যাগসহ রুবেল (১৯) ও সোলাইমান নামে দুজনকে বুধবার গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সংঘবদ্ধ চোর দলের সক্রিয় সদস্য রুবেল ব্যাগ চুরির পুরো প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। বুধবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন।

তিনি বলেন,‘গত সোমবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠান উদ্বোধন করতে যান নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত লিওনি কুলেনারা। সেখানে রাষ্ট্রদূতের বসার আসনের ঠিক পেছনে দাঁড়িয়েছিল রুবেল। রাষ্ট্রদূত অনুষ্ঠান উদ্বোধনের জন্য চেয়ার থেকে ওঠার সময় ব্যাগটি সেখানে রেখে যান। রুবেল তখন রাষ্ট্রদূতের ব্যাগটি নিয়ে তার পেছনে পেছনে যায়। তার কৌশল ছিল যে, রাষ্ট্রদূত যদি তাকে জিজ্ঞাসা করেন, এ ব্যাগ সে কেন নিয়েছে, অথবা কেউ যদি বিষয়টি ধরে ফেলে, তাহলে সে বলবে রাষ্ট্রদূত ভুলে ব্যাগ রেখে গিয়েছিলেন, তাই সে তা দিতে তার পেছনে পেছনে এসেছে।

রাষ্ট্রদূত যখন উদ্বোধন অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত তখন রুবেল কৌশলে ব্যাগটি নিয়ে বেরিয়ে আসে। পরে সে সোজা চলে যায় বসুন্ধরা সিটিতে। সেখানে পঞ্চম তলায় ‘বি’ ব্লকের ৪৫ নম্বর দোকান ‘আই টাচ’-এর সোলাইমান ওরফে শাওনের কাছে সে ব্যাগটি দেয়। শাওনের সঙ্গে রুবেলের আগে থেকেই লেনদেন ছিল। এর আগে রুবেল চুরি করা চারটি মোবাইল ফোন শাওনের কাছে বিক্রি করে।

এরপর রুবেল রাষ্ট্রদূতের ব্যাগে থাকা দুটি মোবাইল ফোন, একটি আই প্যাড, তিনটি পাসপোর্ট, কিছু বিদেশি মুদ্রা শাওনের কাছে দেয়। এগুলো দেখে শাওন তাকে প্রথমে ১০ হাজার টাকা দেয়। বাকি টাকা বিক্রির পর দেবে বলে আশ্বাস দেয়। এরপর রুবেল খালি ব্যাগটি ওপর থেকে নিচে ফেলে দেয়।

ব্যাগটি নিচে পড়ে থাকতে দেখে বসুন্ধরা সিটির নিরাপত্তাকর্মীরা প্রথমে মাইকিং করে ব্যাগ পাওয়ার কথা জানান। পরে কেউ এতে সাড়া না দিলে তাদের হেফাজতে রেখে দেওয়া হয়।

রুবেল বসুন্ধরা থেকে সরাসরি বাসায় যায়। ঘটনার পরের দিন গণমাধ্যমে তার ছবিসহ সংবাদ দেখতে পেয়ে ভীত হয়ে পড়ে রুবেল।সে তখন ক্লিন সেভ করে বাসায় আত্মগোপন করে থাকে।

এদিকে ছবিটি বহুল প্রচারিত হওয়ার পর শাহবাগ থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) একাধিক টিমসহ পুলিশ হেডকোয়ার্টার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থা রুবেলকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে। এরমধ্যে ডিবি দক্ষিণের টিম তার চেহারার মতো অনেককে শনাক্ত করে জিজ্ঞাসাও করে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ‘শনির আখড়া শেখদী এলাকায় রুবেলের বাসার পাশে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে কর্মরত এএসআই সাইফুলের বাসা। তিনি ছবি দেখে রুবেলকে শনাক্ত করেন। তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। পরে পুলিশ হেডকোয়ার্টার ও ডিবি দক্ষিণের একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর সে সবকিছু স্বীকার করেছে। এরপর তাকে নিয়ে বসুন্ধরা সিটির পাঁচ তলায় অভিযান চালানো হয় এবং আই টাচ নামের ওই দোকান থেকে চুরি হওয়া জিনিসগুলো উদ্ধার করা হয়। এসময় শাওনকেও গ্রেফতার করা হয়।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ‘রুবেলের গ্রামের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে। সে ঢাকায় রেন্ট-এ কার চালাতো। পাশাপাশি সে একটি সংঘবদ্ধ চোর বা টানাপার্টি চক্রের সদস্য। তার আরও সহযোগী রয়েছে। তাদেরকেও ধরার অভিযান চলছে।’

তিনি আরও বলেন, জেনে-শুনে চোরাই মাল কেনার অপরাধে শাওনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। শাওন ছাড়াও এসব চোরাই মাল যারা কিনে থাকেন, তাদেরকেও শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে ‘



মন্তব্য চালু নেই