যেভাবে দেহের ওজনে প্রভাব ফেলে ঘুম

একরাতের ঘুমের গুণগত মান ও দৈর্ঘ্যের ওপর পরদিনের স্বাস্থ্যের অবস্থা নির্ভর করে। একটা স্বাস্থ্যকর ঘুমের পর আমাদের মন ও দেহ প্রশান্তি পায়।

ঘুমের অভাবে ক্লান্তি ভর করে দেহে। আর ক্লান্ত দেহ নিয়ে কাজ করা খুব কঠিন বিষয়। এ অবস্থা কাজে মন বসানো যায় না। এ অবস্থা চলতে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়ে মানুষ। ঘুমের অভাব ত্বকের অবস্থা থেকে শুর করে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এ ছাড়া ওজন বৃদ্ধি পায়। আধুনিক প্রজন্মের মধ্য স্থূলতা এক বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়ে দেখা দিয়েছে। ঘুমের সঙ্গে ওজনের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। এ সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিন।

১. ক্লান্ত থাকলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে এমন হরমোনের অভাব ঘটে। ফলে সব সময় ক্ষুধার্ত থাকবেন আপনি। ঘুম না হলে মস্তিষ্ক ঘুমকাতুরে সময় কাটায়। আর এমন মস্তিষ্ক ক্ষুধা বৃদ্ধি করে বলে জানান আমেরিকার ক্যানিয়ন রেঞ্চের স্লিপ মেডিসিন অ্যান্ড ফিজিশিয়ানের পরিচালক পরম দেধিয়া। দেহের ক্ষুধা বিষয়ক কাজ করতে বেশ কয়েকটি হরমোন ও রাসায়নিক পদার্থ কাজ করতে থাকে। লেপ্টিন ক্ষুধা কমিয়ে আনে। আর গ্রেহলিন তা বাড়ায়। পর্যাপ্ত না ঘুম হলে লেপ্টিনের মাত্রা কমে আসে এবং ক্ষুধা বাড়ে। আর বেশি খেলে যে ওজন বাড়ে তা নতুন করে বলার কিছু নেই।

২. ঘুমহীন মস্তিষ্ক যে কেবল ক্ষুধা বাড়ায় তাই নয়, এতে চিনি, লবণ এবং চর্বিপূর্ণ খাবার খাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি করে। এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এগুলো ওজন বৃদ্ধির জন্যও দায়ী থাকে। খুব দ্রুত শক্তি আসে এমন খাবার আসলে খোঁজে মন। চিনি এবং কার্বোহাইড্রেট সেই কাজটিই করে। ক্লেটন স্লিপ ইনস্টিটিউটের পরিচালক জোসেপ ওজিল জানান, ঘুমের অভাবে কেন মানুষ চিনি, লবণ বা চর্বি খাবার খোঁজে তা পরিষ্কার নয়। এসব খাবারে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি। এক কামড়ে বেশ কিছু ক্যালোরি যায় দেহে। আর এ ঘটনায় ওজন যে হু হু করে বাড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

৩. ঘুমের অভাবে স্তিমিত হয়ে আসে বিপাকক্রিয়া। একই কারণে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতাও বাড়ে। গবেষণায় দেখা যায়, ঘুমের অভাব দেহের গ্লুকোজ উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। এতে ইনসুলিন উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে দেহে অনেক বেশি গ্লুকোজ জমা হতে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে এমনটা হলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ে।

৪. ঘুমের অভাব থাকলে পরিশ্রমের কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই যারা নিয়মিত ব্যায়ামে আগ্রহী, ঘুমের অভাবে তারা ব্যায়াম করতে পারেন না। এ কারণে অনেক অ্যাথলেটের পারফরমেন্সের ওপর ঘুমের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হয়। তাদের ফিটনেসের অনেকটাই নির্ভর করে স্বাস্থ্যকর ঘুমের ওপর। পর্যাপ্ত ঘুমে দেহে প্রতিটি প্রত্যঙ্গ ও পেশি সঠিকভাবে কাজ করে। প্রতিদিনের শ্রমের কারণে পেশিতে যে পেরেশানি পড়ে, তা মেরামত করে ঘুম। যথেষ্ট ঘুম না দিলে আমাদের দেহ স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করতে পারে না। রাতে ঠিকমতো ঘুম না হলে পরদিন ব্যায়াম করা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আর ওজন তো বৃদ্ধি পাবেই।

৫. তাই বেশি বেশি ঘুমের মাধ্যমে অনেক সমস্যাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কিন্তু এর জন্য যথেষ্ট ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। ওজন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে ঘুমের কারণে। অধিকাংশের জন্যই রাতে একটা গভীর ঘুম অনেক কঠিন বিষয় হতে পারে। কিন্তু অনেক উপায়েই ঘুমের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা যায়। ইয়োগা, মেডিটেশনের মাধ্যমে ঘুমের সমস্যা দূর করা যায়। প্রতিরাতে ঘুমের আগে বেশ কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজও সেরে নিতে পারেন। আরামদায়ক গোসল, আলো নিভিয়ে কিছুক্ষণ থাকা বা কিছু সময় ধরে বই পড়া ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে ঘুম আনা যায়। এ ছাড়া ঘুমের সময়ের ঘণ্টা দুয়েক আগে থেকে কফি খাবেন না। সূত্র: হাফিংটন পোস্ট



মন্তব্য চালু নেই