যেখানে নিয়ম মেনে রোজা রাখেন হিন্দুরাও

বিভেদের কাঁটাতারহীন সেই ভূমির খোঁজ শেষ পর্যন্ত আর দেখা হয়নি৷ দেখা পাওয়া সম্ভবও ছিল না৷ তবু মানুষই চাইলে পারে সব বিভেদ মুছে সম্প্রীতির ছবি আঁকতে৷ ধর্মের বিভেদহীনতার সেই ভূমির ছবিই যেন তুলে ধরছে ভারতের রাজস্থানের বারমের ও জয়সলমেরের একাধিক গ্রাম৷

কীভাবে বিভেদ মুছে গিয়েছে এই গ্রামগুলিতে?

সেখানে চলছে রমজান মাস৷ নিয়ম মেনে রোজা করছেন ওরাও৷ ওরা কেউই কিন্তু নন ইসলাম ধর্মালম্বী৷ সকলেই হিন্দু৷ তাতে কী! ভোরের আজান আর শাঁখের শব্দের মধ্যে কোনও ফারাক বোঝেন না এখানকার বাসিন্দারা৷

এ দেশে যেমন দীর্ঘদিন শান্তিতে পাশপাশি বাস করেছে হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের মানুষ, তেমনই তুচ্ছ কারণে এক অন্যের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার ইতিহাসও কম নেই৷ ধর্মভিত্তিক দেশভাগের রাজনীতি যেন দুই ধর্মের মানুষের বিভাজনকেই আরও জোরদার করে দিয়ে গিয়েছে৷ ধর্মের নামেই যে ভাগাভাগির কাঁটাতার চেপে বসেছিল, সেই বিভেদই স্থায়ী হয়ে বসেছে দুই দেশের বুকে৷ তবু কখনও কখনও এ কাঁটাতার ব্যর্থও হয়৷ কেননা বিভেদের রাজনীতি ভূখণ্ডকে ভাগ করতে পারে, কিন্তু দেশের আত্মায় ভাগ বসাতে পারে না৷

বাহ্যিক নানা বিভেদের ছবিতে এ কথা যেন প্রায় বিশ্বাস করাই দায়৷ কিছু ব্যতিক্রমী ছবি তবু আজও প্রমাণ করে, মানুষ চাইলেই পারে ধর্মের ভেদাভেদকে হারিয়ে দিতে৷ যেমন এই বারমের ও জয়সলমের জেলার গ্রামগুলি৷ এখানে মুসলিমরাও সাগ্রহে অংশ নেন দীপাবলী অনুষ্ঠানে৷ অংশ নেন হিন্দুদের বিয়ের অনুষ্ঠানেও৷ আলাদা ধর্মের অনুষ্ঠান বলে বিন্দুমাত্র সংকোচ রাখেন না তাঁরা৷ প্রত্যুত্তরে হিন্দুরাও রোজা রাখেন৷ একেবারে নিজস্ব বিশ্বাস থেকেই রমজান মাসের এ রীতি পালন করেন তারা৷ এমনকী কেউ কেউ নামাজও পড়েন৷

কোনও মানুষ দেখানো মনোভাব থেকে কিন্তু কেউ এ কাজ করেন না৷ এই গ্রামের সরল হিন্দু ও মুসলিম গ্রামবাসীরা জানান, দীপাবলী হোক বা রমজান, কোনওটা যে অন্য ধর্মের উৎসব এভাবে দেখতে অভ্যস্তই নন তারা৷ দেশভাগের পর অধুনা পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশ থেকে বহু হিন্দু পরিবার এখানে এসেছেন৷ তাই সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের ছবিটিও এখানে জোরদার৷ এ দেশে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য যে স্রেফ কথার কথা নয় এই গ্রামগুলিই তা আজও প্রমাণ করে৷ কে জানে, আজ হয়ত এরকম গ্রামেই ‘পাগল’ লালন শাহ থেকে যেতে চাইত কি না!



মন্তব্য চালু নেই