যেকোন বাহিনী মোতায়েনের পক্ষে আইভী

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য নির্বাচনের মাঠে যেকোন বাহিনী মোতায়েনের পক্ষে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। বৃহস্পতিবার নগরীর ‘নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে’ নির্বাচন কমিশন আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এই দাবি করেন।

উপস্থিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদকে উদ্দেশ্য করে আইভী বলেন, “নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যে কোনো বাহিনীর যদি আপনাদের প্রয়োজন হয়, আপনারা মোতায়েন করবেন, আপনাদের কাছে আমি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি করছি।”

এর আগে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান নির্বাচনে পোলিং এজেন্টদের উপর ভয়ভীতি, মামলা ও হয়রানির অভিযোগ আনেন। এ প্রসঙ্গে আইভী বলেন, ”পোলিং এজেন্ট নিয়ে যে শঙ্কা উনি (বিএনপি প্রার্থী) প্রকাশ করলেন সেটা যেন মিথ্যা প্রমাণিত হয়। আমি কারও কোনো ফেভার নিয়ে নির্বাচন করতে চাই না।”

বক্তব্যে ২০১১ সালের সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীর বিরেুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নানা রকম বিরোধিতা পাওয়ার কথাও উল্লেখ করেন সদ্য বিদায়ী মেয়র আইভী।

তিনি বলেন, “গত নির্বাচনে আমিও আপনার মতো শঙ্কায় ছিলাম। সরকারদলীয় হয়েও আমি নাগরিক কমিটির প্রার্থী ছিলাম, সে সময় সরকার একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়েছিল। নির্বাচনের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারে পাল্টে গিয়েছিল। সরকার যাকে সমর্থন দিচ্ছিল, সেখানেও কোনো কমপ্রোমাইজ করা হয়নি।”

২০১১ সালের ৩০ অক্টোবরের মতো এবারের নির্বাচনকেও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সারা বাংলাদেশে সেটা আলোচতি হয়েছিল, প্রশংসিত হয়েছিল, আমি জিতেছিলাম বলে তাই নয়, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছিল, নারায়ণগঞ্জের মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিয়েছিল।

”আমি তদ্রুপভাবে বলতে চাই, আমি যদিও সরকারী দলের প্রার্থী, আমার প্রতীক নৌকা, বিগত ৫ বছর আমি কাজ করেছি প্রতিকূল পরিবেশে। এখানে যারা উপস্থিত আছেন সবাই জানেন, কী ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যে আমাকে কাজ করতে হয়েছে। এখনও প্রতিকূলতা পার হতে হচ্ছে।”

তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, “আপনাদের বলবো, আপনারা এমন একটা নির্বাচন উপহার দেন, যাতে সরকার কোনো বিতর্কিত না হয়। কারণ এই নির্বাচন সরকার পরিবর্তনের কোনো নির্বাচন নয়। এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন।”

নৌকার প্রার্থী আইভী বলেন, “নারায়ণগঞ্জের মানুষ অলরেডি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে কাকে ভোট দেবে। এখানে কোনো ভয় শঙ্কা কাজ করবে না। আমি সরকারী দলের প্রার্থী হিসাবে বলতে চাই, যে শঙ্কার কথা সাখাওয়াত ভাই বলেছেন, আমি কি এমন মানুষ? আমার কি কোনো বাহিনী আছে? আমি কি কোনো সন্ত্রাসী লালন করি? আমি কি আপনাদের কারও গায়ে হাত দিতে পারি?”

মতবিনিময় সভায় আসার সময় বিএনপি নেতা আমিনুল এবং গণসংযোগকালে আফরোজা আব্বাসের সঙ্গে সৌহার্দ্য বিনিময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ খুব সৌহার্দ্যপূর্ণ। আমি আহ্বান জানাবো সাখাওয়াত ভাইকে, আসুন আমরা এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভোট চাই। জনগণ যাকে ভোট দিবে সেটাই হবে সঠিক সিদ্ধান্ত।

”গতবারের নির্বাচনে অনেক কেন্দ্রে আমার পোলিং এজেন্ট ছিল না। কিন্তু পাবলিক যে ভোটটা দিয়েছিল প্রিজাইডিং অফিসার গণনা করে সেটার আমার ভোট হিসাবে যোগ করেছিলেন। অনেক কেন্দ্রে আমার পোলিং এজেন্ট থাকলেও বলতে পারে নাই পোলিং এজেন্ট।“

মতবিনিময় সভায় সাখাওয়াতকে উদ্দেশ করে আইভী বলেন, “এখানে নির্বাচন হচ্ছে মূলত আমি এবং আপনার মধ্যে। আপনিও সহিংসতার আশ্রয় নেন না, আমিও কোনো সহিংসতার আশ্রয় নেয় না, আমার কোনো বাহিনীও নাই। কিন্তু তৃতীয় পক্ষ এখানে কোনো ধরনের কারসাজি করতে না পারে সেজন্য আপনাদের কাছে অনুরোধ আমি করছি, সেটা যেন ভালো করে দেখা হয়।”

কালোটাকার প্রভাব ঠেকাতে ২৭টি ওয়ার্ডের ২৭টি মোবাইল কোর্ট টিমকে রাতের বেলায়ও সক্রিয় রাখার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “রাত্রে কালোটাকার ছড়াছড়ি কাউন্সিলের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। ১৯, ২০, ২১ তারিখ রাতেও যেন মোবাইল কোর্ট টিম সক্রিয় থাকে।”

”আমার কোনো টাকা পয়সা চাই নাই, আমি দলের কাছে এবং নারায়ণগঞ্জের কারও কাছে এখন পর্যন্ত টাকা চাই নাই। কালো টাকার ছড়াছড়ি হোক সেটা আমি চাই না।”

জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়ার সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।

এ সময় অন্যদের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার হেলাল উদ্দিন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার, পুলিশ সুপার মইনুল হক, বিজিবির ৩৯ ব্যাটালিয়নের প্রধান শামীম ইফতেখার, র‌্যাব-১১’র অধিনায়ক কামরুল আহসান, বিএনপির সাখাওয়াত হোসেন খানসহ প্রতিদ্বন্দ্বী ৭ মেয়র প্রার্থী বক্তব্য দেন।



মন্তব্য চালু নেই