যুৎসই ইস্যু পাচ্ছে না বিএনপি

সাংগঠনিক শক্তি ও প্রস্তুতি যাই থাক, সরকার পতনের ‘ডু অর ডাই’ আন্দোলনে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। কিন্তু দীর্ঘ বিরতীর পর রাজপথে সরকার পতন আন্দোলনের শুরুটা কীভাবে করা যায় তা নিয়েই চিন্তিত বিএনপি। চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আন্দোলনে ধারবাহিকতার সূচি নির্ধারণ করতে পারছেন না নেতারা।

আর এ কারণেই কর্মসূচি ঘোষণায় সময় নেয়া হচ্ছে বলে জানান বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন, চেয়ারপারসন ও দলের সিনিয়র নেতারা খুব শিগগিরই আন্দোলন শুরুর কথা বলে আসছেন। বিশেষ করে ডিসেম্বরের শুরুতে আন্দোলনের ঘোষণা আসবে এমন আশায় ছিলেন তারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত আন্দোলনের প্রস্তুতির কোনো দিকনির্দেশনা পাননি তারা। এতে তৃণমূলে হতাশা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।

নেতাকর্মীরা আরো বলেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। সরকারকে অনেক সময় দেয়া হয়েছে আর নয়। আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীরা পুরোপুরি প্রস্তুত। এখন দরকার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া। নেতাকর্মীরা বলছেন, আগামী ৫ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনের এক বছর শেষ হবে। এ দিনটিকে সামনে রেখে ডিসেম্বরের প্রথমেই লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা উচিৎ ছিল।

‘৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আন্দোলনের কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়া ভুল ছিল’ এখন হাইকমান্ড ও নেতারা তা স্বীকার করছেন। আন্দোলন শুরু নিয়ে এখন যে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন তাও সময় হলে বুঝবেন। তাই দেরি হওয়ার আগেই দলের পক্ষ থেকে আন্দোলনের লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা দরকার।

এদিকে জোটের প্রধান শরিক জামায়াতের পক্ষ থেকেও লাগাতার কর্মসূচি দেয়ার চাপ রয়েছে।

সম্প্রতি ২০ দলের মহাসচিবদের বৈঠকে জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ড. রেদোয়ান উল্লাহ শাহিদী কঠোর কর্মসূচি দেয়ার প্রস্তাব রেখে বলেন, ‘সভা সমিতি মানবন্ধন বা দু’একটা হরতাল দিয়ে এ সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব নয়। এজন্য খুব শিগগিরই আমাদেরকে চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে হবে। আন্দোলনের জন্য জামায়তের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত।’

সূত্র জানায়, তৃণমূলের চাপ এবং ডিসেম্বর মাস চলে আসায় টনক নড়েছে নেতাদের। এখন আন্দোলনের নানামুখি পরিকল্পনা করছেন তারা। কিন্তু যুৎসই ইস্যু না থাকায়, কীভাবে আন্দোলন শুরু করবেন তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারিকে টার্গেট করে বড় কিছু করতে চায় বিএনপি। কিন্তু ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিজয় দিবসের কর্মসূচি রয়েছে। সেজন্য ২১ ডিসেম্বরের পর গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিদবাদে ধারাবাহিক কর্মসূচি হাতে নিলে, সরকারের বাধার মুখে তা কন্টিনিউ করতে পারলে ৫ জানুয়ারি থেকে লাগাতার হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি দেয়া সম্ভব।

অপরদিকে দলের সিনিয়র নেতারা বলছেন, আমরা আন্দোলনে আছি, তবে রাজপথের কঠোর আন্দোলনে নেই। খুব শিগগিরই রাজপথের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এবং তা সফল করেই আমরা ঘরে ফিরবো।

এ বিষয়ে বিএনপির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম বলেন, ‘তেল গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ইস্যুতে লাগাতার কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ কর্মসূচিই পরবর্তীতে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেবে।’

এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আন্দোলনের শুরু নিয়ে বিএনপি চিন্তিত নয়। জনগণ আন্দোলনের জন্য মুখিয়ে আছে। আমরা উপযুক্ত সময়ে একটি কার্যকর আন্দোলনে যাব, যে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন হবে।’

আন্দোলন শুরুর বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘টাইম ফ্রেম দিয়ে কখনো আন্দোলন হয় না। আমরা আন্দোলনে আছি। তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’



মন্তব্য চালু নেই