যুদ্ধাপরাধীর রায় বদলাতে আর্থিক লেনদেন!
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর আপিলের রায় বদলাতে আর্থিক লেনদেন হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ওপর এক সেমিনারে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এসকে সিনহার) বিভিন্ন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত ৮ মার্চ জামায়াত নেতা মীর কাসেমের যুদ্ধাপরাধ মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণার আগেই নানামুখি আলোচনা শুরু হয়। এক আলোচনায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক রায় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে নতুন বেঞ্চে পুনঃশুনানির দাবি তোলেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানে সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী সেই ঘটনা পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ‘ওই ঘটনার জন্যই মীর কাসেমের এই রায় এসেছে। না হলে রায় অন্যদিকে চলে যেতো। কত টাকার যে লেনদেন হয়েছে!’
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র বিদ্যমান বলেও মন্তব্য করেন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি না দেয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সাহসী কন্যা শেখ হাসিনা কোনো শক্তির কাছে মাথা নত করেননি।’
মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল উল্লেখ করে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘জিয়া বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি মুছে দিতে উম্মাদ হয়ে উঠেছিলেন। এ কারণেই অনেকে মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধে জিয়া পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার চর হিসেবে কাজ করেছেন।’
মুক্তিযুদ্ধে জিয়া তার পিস্তল থেকে একটি গুলিও খরচ করেননি উল্লেখ করে এ বিচারপতি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার ভূমিকা নিয়ে আমি তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী তার বক্তব্যে কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রধান বিচারপতির সাম্প্রতিক মন্তব্যেরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘তনু হত্যা সম্পর্কে চিফ জাস্টিস (প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) যা বলেছেন, তা যদি রাস্তার কোনো লোক বলতো- মানা যেত। প্রধান বিচারপতি বলেছেন- বর্তমান আইনে তনু হত্যার বিচার করা সম্ভব নয়। এটা কেমন কথা হতে পারে?’
তিনি আরো বলেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ বিচারকের কাছ থেকে এই ধরনের কথা আসায় তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য কোনো বিচারকের কাছ থেকে আশা করা যায় না।’
শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আইনপ্রণেতারা অজ্ঞ- প্রধান বিচারপতির এই কথাটা সঠিক নয়। আমাদের সংসদে অনেকেই আছেন যারা বিশ্বমানের। সে কারণেই সিপিএ এবং আইপিইউতে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিচ্ছে। সংসদে কোনো আইন তৈরি হয় না। সংসদে আইন আসে খসড়া হিসেবে। এটা তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয়ের ড্রাফটিং ইউনিটের বিশেষজ্ঞরা। তাই সংসদ সদস্যদের বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নাই। উনি (প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কামার সিনহা) কীভাবে এটা বললেন? এটা বোঝার জন্য সংবিধানের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নাই।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক মেজর জেনারেল শিকদার আহমেদ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম প্রমুখ।
মন্তব্য চালু নেই