যুদ্ধবিদ্ধস্ত যে দেশের বাগানে বোমার খোলে ফোটে তাজা গোলাপ

ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এলাকায় ৪৪০ মাইলস দীর্ঘ যে প্রাচীর তৈরি করা শুরু করেছে ইজরায়েল, তারই কোল ঘেঁষে জায়গা করে নিয়েছে এই বাগান। ইজরায়েল নিজেদের সুরক্ষার অজুহাতে গড়ে তুলছে বহুল বিতর্কিত এই প্রাচীর। তারই বুকে বাগান করেছেন ফিলিস্তিনি এক নারী।

কবীর সুমনের ‘প্রিয়তমা, তোমাকে অভিবাদন’ গানটি মনে আছে? তাতে একটি পংক্তি ছিল ‘…সেনাবাহিনী বন্দুক নয় শুধু গোলাপের তোড়া হাতে কুচকাওয়াজ করবে…’। বাস্তবে সেরকমই এক স্বপ্নসম্ভব ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন ফিলিস্তিনের এ মহিলা। প্যালেস্তাইন বলতেই মনে ভেসে ওঠে যুদ্ধবিদ্ধস্ত একটি দেশের ছবি। সেই ছবিটাই বদলে দিতে চাইছেন এই মহিলা।

বিগত কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনের রাজধানী রামাল্লা ক্ষতবিক্ষত হয়েছে ইজরায়েলি সেনাবাহিনী আর ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের গড়ে তোলা প্রতিরোধ বাহিনীর লড়াইয়ে। সেই ক্ষতের উপরে একটু ফুলেল প্রলেপ দেয়ার প্রচেষ্টাতেই এই মহিলা গড়ে তুলেছেন এক অভিনব বাগান। বাগানে ফুলগাছ তো যথারীতি রয়েছেই। কিন্তু বাগানটির বিশিষ্টতা ফুলে নয়, গাছগুলির টবে। কারণ এই বাগানে টব হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে টিয়ার গ্যাসের খোল।

সংবাদমাধ্যমের কাছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই মহিলা জানিয়েছেন, এই বাগান তৈরি যখন শুরু করেন, যুদ্ধবিদ্ধস্ত রামল্লায় অন্য উপাদান তখন ছিল অলভ্য। সবচেয়ে সুলভ ছিল টিয়ার গ্যাসের খোল। ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের প্রতিরোধ বাহিনীকে ছত্রভঙ্গ করতে যখন-তখন নির্বিচারে ইজরায়েলী সেনা প্রয়োগ করত টিয়ার গ্যাস। ধোঁয়ার জাল সরে যাওয়ার পরে এই ফিলিস্তিনি মালিনী কুড়িয়ে নিতেন টিয়ার গ্যাসের সেই ফাঁকা খোলগুলি। তারপর তাতেই মাটি ভরে পুঁতে দিতেন গাছের বীজ। তারপর এক সময়ে সেই বীজই অঙ্কুরিত হয়ে পরিণত হত গাছে। তখন সারিবদ্ধ ভাবে সাজিয়ে রাখতেন গাছগুলি। আস্তে আস্তে সেই গাছগুলিই একটি সুসজ্জিত বাগানের আকার নেয়।

ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এলাকায় ৪৪০ মাইলস দীর্ঘ যে প্রাচীর তৈরি করা শুরু করেছে ইজরায়েল, তারই কোল ঘেঁষে জায়গা করে নিয়েছে এই বাগান। ইজরায়েল নিজেদের সুরক্ষার অজুহাতে গড়ে তুলছে বহুল বিতর্কিত এই প্রাচীর। তারই বুকে বাগান করেছেন ফিলিস্তিনি এক মহিয়সী নারী। তার এই প্রচেষ্টার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে সারা বিশ্বে। টিয়ার গ্যাসের খোলে গোলাপ ফোটানোর এই পরিকল্পনাকে অনেকেই যুদ্ধের বিরুদ্ধে এক শৈল্পিক প্রতিবাদ হিসেবে দেখছেন। সরলমতি ফিলিস্তিনি অবশ্য অতশত বোঝেন না। তিনি নিজের আশ্চর্য বাগানের পরিচর্যায় মশগুল।-এবেলা



মন্তব্য চালু নেই