যা বললেন সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে ভাস্কর্যের নির্মাতা মৃণাল হক
সুুপ্রিম কোর্ট চত্বরে স্থাপিত ভাস্কর্যটি নিয়ে ইসলামী দলগুলোর বিরোধীতা এবং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন ভাস্কর্যটির নির্মাতা মৃণাল হক। তার মতে এই ভাস্কর্য কোনো গ্রিক দেবীর মূর্তি নয়। মানুষের আকৃতিতে তৈরি যেকোনো ভাস্কর্যকে মূর্তি হিসেবে দেখে তা সরানোর দাবি মেনে নিলে সেটা ‘আত্মসমর্পণ’ হবে বলে মন্তব্য করেছেন এই ভাস্কর।
সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্যটি সরাতে ইসলামী দলগুলোর চাপ এবং এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের পর চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে নিজের এই মতামত তুলে ধরেছেন ভাস্কর মৃণাল।
রাজধানীতে আরও কয়েকটি ভাস্কর্যের নির্মাতা তার এই ভাস্কর্যটিতে শাড়ি পরা নারীর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন,‘এটা কোনো গ্রিক দেবীর মূর্তি নয় বরং বাঙালি নারীর ভাস্কর্য। ন্যায় বিচারকের ভূমিকায় বাঙালি নারীর অবয়ব দেখাতে চেয়েছি এই ভাস্কর্যে। বিশ্বজুড়ে বিচারালয়ে ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে একটি ভাস্কর্য প্রচলিত আছে। উচ্চ আদালত কর্তৃপক্ষ সেই ভাস্কর্যটির মতো একটি ভাস্কর্য এখানে বানাতে বলেছিলো। সেটা করলে আরও বেশি বিতর্ক হতো। তখন বলা হতো এই ভাস্কর্য আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায়না। তাই বিতর্ক থেকে মুক্ত থাকতেই বাঙালি নারীর বেশে ভাস্কর্যটি তৈরি করি।’
সব ভাস্কর্যকেই ‘মূর্তি’ হিসেবে দেখার সমালোচনা করেছেন তিনি। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের (শেরাটন ) সামনে স্থাপিত ‘রাজসিক’ ভাস্কর্যের ভাস্কর মৃণাল হক বলেন,‘ ইসলাম ধর্মে মূর্তি পূজা করা পাপ কিন্তু ভাস্কর্য নির্মাণ করা যাবে না এটা কোথাও বলা হয়নি বলেই জানি। অপরাজেয় বাংলা, মতিঝিলের বলাকাতে কেউ তো পূজা করতে যায় না। এগুলো শিল্পকর্ম।’
উচ্চ আদালতের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েই ভাস্কর্যটি তৈরি করা হয়েছিলো বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন,‘ ন্যায় বিচারের প্রতীকী ভাস্কর্য হিসেবে এবং সৌন্দর্যবর্ধনের অংশ হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ আমার ভাস্কর্যটি স্থাপন করেন। আদালতের রেজিস্ট্রার জেনারেল এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার আমার বানানো ১ ফুট দীর্ঘ মডেলটি দেখে অনুমোদন দেন এবং বর্তমান আকৃতির ভাস্কর্যটি তৈরি করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানান।’
সুপ্রিম কোর্টের সামনের ভাস্কর্য সরানোর দাবি ওঠার বেশ কয়েক বছর আগে বিমান বন্দরের সামনের বাউল ভাস্কর্য সরানোর দাবিতেও সরব হয়েছিলো ইসলামী দলগুলো। ওই ভাস্কর্যটিও তৈরি করেছিলেন মৃণাল হক।
ধর্মভিত্তিক এই গোষ্ঠীর চাপে বাউল ভাস্কর্য ভেঙে ফেলায় ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছিলো বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন,‘ ৫০ টিরও বেশি মসজিদের শীর্ষ পর্যায় থেকে বাউল ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধীতা করা হয়েছে। তারা রাস্তায় শুয়ে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিলো। এমনকি সরাসরি আমাকে হুমকি দেয়া হয়েছিলো। বাউল ভাস্কর্যের জায়গায় নতুন করে ভাস্কর্য তৈরি করতে বলা হয়েছিলো আমাকে। শর্ত দেয়া হয়েছিলো সেখানে ‘আল্লাহু’ লেখা থাকতে হবে।’
কোনো ভাস্কর্য যা পুজা করার জন্য তৈরি হয়নি তাকে ‘মূর্তি’ বলে বিরোধীতা করার যৌক্তিকতা নেই বলে মনে করেন তিনি।
মৃণাল হক বলেন,‘সব কিছুকে মূর্তি বলে তা সরানোর দাবি মেনে নেয়াটা হবে আত্মসমর্পণ। এরকম দাবি মেনে নিলে দেশে থাকার মতো পরিবেশ থাকবে না।’
মঙ্গলবার রাতে গণভবনে ভাস্কর্যের বিরোধিতাকারী ওলামাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটি সরাতে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।
ভাস্কর্যটির বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন: আমি নিজেও এটা পছন্দ করিনি। বলা হচ্ছে এটা নাকি গ্রিক মূর্তি। আমাদের এখানে গ্রিক মূর্তি আসবে কেন? আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটা এখানে থাকা উচিৎ না। গ্রিকদের পোশাক ছিল এক রকম। এখানে আবার দেখি শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে। এটাও হাস্যকর হয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই