ম্যানহাটনের রহস্যময় পরিবার
বাংলা চলচ্চিত্রের কল্যাণে সাত ভাই চম্পার কথা মোটামুটি সবার জানা। কিন্তু আজ আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ছয় ভাই বিষ্ণুর কথা জানবো। যারা গত ১৪ বছর ধরে তাদের ঘরের বাইরে বের হননি এবং বিশ্ব সম্পর্কে তারা জানে স্রেফ পাঁচ হাজার চলচ্চিত্র দেখে। অবশ্য এই সাত ভাই-বোন যে নিজেদের ইচ্ছেতেই ঘরের ভেতর স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন বিষয়টি মোটেও তা নয়। উল্টো, তাদের বাবা এবং মা দুজনে মিলেই তাদের জন্ম থেকে ঘরের মধ্যে রাখার পরিকল্পনা করেন। বাবা বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সদর দরজায় ভারি তালা লাগিয়ে যেতেন এবং তাদের পড়ালেখা করানোর দায়িত্ব ছিল মায়ের উপর।
ঘরে থাকাকালীন সময়ে তাদের একমাত্র বিনোদন ছিল বিভিন্ন দেশের পাঁচ হাজার চলচ্চিত্র। আর তাদের বাড়িটি ম্যানহাটনের পূর্ব দিকের এমন একটি স্থানে অবস্থিত যেখানে সচরাচর মানুষের আনাগোনা হয় না বললেই চলে। এরকমই একটি নির্জন পরিবেশে বছরের পর বছর বন্দী ছিলেন এই সাত ভাই-বোন। সম্প্রতি মার্কিন চলচ্চিত্রকার ক্রিস্টাল মোসলে এই পরিবারের উপর ‘দ্য উলফপ্যাক’ নামের একটি ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন। গত মাসের উতাহ সুদানিজ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এই ডকুমেন্টারিটি গ্র্যান্ড জুরি পুরস্কার পায়।
ক্রিস্টাল মোসলে সেই ফেস্টিভ্যালে বলেন, ‘এটা আমার কাছে অনেক গবেষণার পরে একটি অনাবিষ্কৃত আদিবাসী গোষ্ঠি আবিষ্কারের মতো। শুধু পার্থক্য একটাই, তাদেরকে কোনো গহীন জঙ্গলে আবিষ্কার করা হয়নি, হয়েছে একেবারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাণকেন্দ্র ম্যানহাটনে। পৃথিবীর মানুষকে একটা সত্য জানানো ছাড়া আর কিছুই করিনি আমি।’
বন্দী দশায় থাকা সাতজন সন্তানের মধ্যে স্বাভাবিক মানুষের অনেক আচরণই অনুপস্থিত। এদের মধ্যে বোন বিষ্ণুর অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। বর্হিজগতের কোনো মানুষের সঙ্গে স্বাভাবিক কথাবার্তা বলতে অনভ্যস্ত বিষ্ণুর বিভিন্ন মানসিক সমস্যার মধ্যে অন্যতম হলো, বর্হিজগত তার কাছে সবসময়ই স্বপ্নময় অবিশ্বাস্য মনে হয়।
বন্দীদশা থেকে প্রথম পালাতে সক্ষম হয় এক ভাই, যার নাম গোবিন্দ। এই ভাই পালানোর পরই মূলত বিষয়টি অনেকের নজরে আসে। স্থানীয় প্রশাসন পরবর্তীতে বিষয়টি আমলে এনে তদন্ত শুরু করে। তদন্তের এক পর্যায়ে দেখা যায়, ওই সন্তানদের বাবা অস্কার নিজে প্রচণ্ড মদ্যপ এবং নিজেকে তিনি হরে কৃষ্ণের অনুসারী বলে দাবি করেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, নিউইয়র্ক তার সন্তানদের নষ্ট করে দেবে এই ভয় থেকে তিনি সন্তানদের কখনও ঘরের বাইরে বের হতে দেননি। এমনকি তিনি তার সন্তানদের নামও রেখেছেন বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবির নামে।
আলোচনার সেই ভাই-বোনেরা এখনও ম্যানহাটনের সেই ফ্ল্যাটেই থাকেন। একমাত্র ভাই গোবিন্দ বাদে। গোবিন্দ বাসা থেকে পালিয়ে নিজের মতো বসবাস করতে শুরু করেছে। তাকে ফেরানোর জন্য বাবা অস্কার চেষ্টা করলেও কোনো লাভ হয়নি।
মন্তব্য চালু নেই