মোবাইল ফোন হারালে বা চুরি হলে কি করবেন? জেনে নিন এ এস পি মাসরুফ হোসেনের পরামর্শ
সহকারী পুলিশ সুপার মাসরুক হোসেন সম্পর্কে বিস্তারিত বলার দরকার নেই। যারা আমাদের এই সংবাদটি ( ফোনে হুমকি পেলে কি করবেন? শুনুন বাংলাদেশের সাহসী একজন পুলিশ অফিসারের মুখে ) পড়েছেন বা তার ফেসবুক ফ্যান পেজ ( facebook.com/tahsinmashroofhossain ) দেখেছেন তারা তার সম্পর্কে ইতিমধ্যেই জেনেছেন।
বর্তমান সময়ে মোবাইল বা স্মার্টফোন চুরি হয়ে গেলে বা হারিয়ে গেলে বেশি দুশ্চিন্তা থাকে ফোনটির অপব্যবহার নিয়ে। যে কারণেই এ দুশ্চিন্তা। সাধের মোবাইল ফোন হারানোর দুঃখ কী, তা অনেকেই জানে৷ চুরি হলে মনে জাগে আশঙ্কা – চোর বুঝি সব তথ্য পড়ে ফেললো! চোর ভাবে, চোরাই ফোন বিক্রি করে যদি দু-পয়সা কামানো যায়৷ তাহলে উপায়? মোবাইল ফোন চালু রাখা ও বন্ধ রাখার প্রযুক্তি রয়েছে। কিন্তু দূর থেকে মোবাইল ফোন অকেজো করে ফেলার কার্যকর কোনো পদ্ধতি নেই। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন বসে নেই চুরি ঠেকাতে নিত্য নতুন প্রযুক্তি বা সফটওয়্যার তৈরিতে তেমন চোরেরাও বের করছে নানান ফন্দি ফিকির। এই আর্টিকেলটিতে মূলত প্রযুক্তি বিষয়ের চেয়ে আইনগত দিক এবং সচেতনতাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তাহলে জেনে নিন সহকারী পুলিশ সুপার জনাব মাসরুফ হোসেনের পরামর্শ।
প্রিয় সদস্যবৃন্দ,
সুদূর জাপান থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। শুরুতেই বলে নিই, আমার এই পোস্টটি কোন যাদুমন্ত্রমূলক পোস্ট নয়-কাজেই আশাহত হবার আগেই সতর্ক করে দিই।এখানে আমি শুধু পুলিশি পরামর্শ দিচ্ছি,যেটি হয়ত আপনার কাজে লাগতে পারে। হাতে ৫ মিনিট সময় থাকলে পড়ে দেখুন
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় “আইজেক” ক্লাবের উদ্যেগে বাংলালিংক-এর তৎকালীন সিইও আমাদের একটি সেমিনারে এসেছিলেন। সুইজারল্যান্ডে বাড়ী, তুখোড় স্মার্ট ওই ভদ্রলোক অনেক মজার মজার কথা বলেছিলেন, তার মধ্যে যেটি এখনো মনে আছে সেটি হচ্ছেঃ
“The closest thing to your body after your underwear is your mobile phone”
আমাদের শরীরের ( এবং মনের) এত কাছাকাছি থাকা সত্বেও মোবাইল ফোন চুরি যাওয়াটা আমাদের প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। এই চুরি ঠেকাতে আদি এবং অকৃত্রিম একটাই পরামর্শঃ সতর্ক থাকুন।
আমি নিজে খুব “মেসি”(ফুটবলার Leo Messi না, অগোছালো Messy) টাইপের মানুষ, প্রায়ই এটা ওটা হারিয়ে ফেলি। এই সেদিনই মাথা ঢাকার ক্যাপটা সুন্দর করে মেট্রো রেলে ফেলে রেখে চলে এসেছি।খেয়াল করে লাভ হয়নি, আমার চোখের সামনে ট্রেন ছেড়ে দিলো, আমি শুধুই “চেয়ে চেয়ে দেখলাম”।আপনার অবস্থাও এরকম যদি হয়, সবচেয়ে ভালো বেল্ট টাইপ কিছু ব্যবহার করা। বাসে ওঠার সময় পকেটে এক-হাত দিয়ে উঠুন, মোবাইল-মানিব্যাগ যে পকেটে রেখেছেন ওটা ধরে রাখুন।
আজ একটা মেসেজ পেলাম, এক ভদ্রমহিলা লিখেছেন, গত ৫ মাসে উনার ৩ টা মোবাইল হারিয়েছে, সব কটাই আইফোন আর গ্যালাক্সী নোট।
৫ মাসে যদি ৩ টা আইফোন আর গ্যালাক্সী নোট হারানর “সামর্থ্য” আপনার থাকে, সেক্ষেত্রে পুলিশি পরামর্শ খুব একটা খুব একটা প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন সতর্ক হওয়া অথবা অতিরিক্ত টাকা এতিমখানায়(কিংবা দুঃস্থ পুলিশ কল্যান সংস্থায়) দান করে দেয়া।
এবার কাজের কথায় আসি। যদি সতর্ক থাকার পরেও আপনার মোবাইল ফোন চুরি যায়, সেক্ষেত্রে নিম্নোক্ত তিনটি স্টেপ অনুসরণ করুনঃ
১) আইএমইআই নম্বর উল্লেখ পূর্বক থানায় জিডি করুন
২) জিডির এক কপি সহ র্যাবে অভিযোগ করুন। অনেকেই জানেন না, র্যাব পুলিশেরই একটি বিশেষায়িত ইউনিট।
৩) জিডির কপিতে উল্লেখ করা অফিসারের সাথে যোগাযোগ রাখুন এবং তার মাধ্যমে ডিবি এর ট্র্যাকিং টিমের সহায়তা নিন।
অনেক সময় দেখা যায় আইটিতে দক্ষ ইউজার নিজেই ট্র্যাক করে বের করে ফেলেছেন মোবাইলের অবস্থান। এরকম হলে ডিবির জন্যে বসে থেকে লাভ নেই, লোকেশন সহ জিডিতে উল্লেখিত অফিসারের সহায়তা নিয়ে চোর মশাইকে “খপ” করে ধরে ফেলুন।
জিডি করে বেশিরভাগ সময়েই ফোন ফেরত পাওয়া যায়না। এর কারণ হচ্ছে, আমাদের ট্র্যাকিং টিম মূলতঃ প্রায়োরিটি দেয় অতি গুরুত্বপূর্ন কেইসগুলোর মোবাইল ট্র্যাকিং-কে।খুন, সন্ত্রাস-ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট মোবাইল ট্র্যাক করাই এদের মূল কাজ, তাই হারিয়ে যাওয়া মোবাইল উদ্ধারের সিরিয়াল বহু পরে আসে- ততদিনে আপনি নতুন মোবাইল কিনে ফেলেন!
তবুও জিডি করবেন কেনঃ
১) আপনার মোবাইল ব্যবহার করে কেউ অপকর্ম করলে ওটা যাতে আপনার ঘাড়ে না পড়ে সেজন্যে। আপনার হারিয়ে যাওয়া মোবাইলে সংরক্ষিত তথ্য ব্যবহার করে কেউ যদি অপকর্ম করে, জিডির কপি দেখিয়ে সেটার দায় থেকে রক্ষা পেতে পারবেন।
২) হঠাৎ হঠাৎ জিডির দ্বারা ট্র্যাকিং করে মোবাইল পাওয়া গেলেও যেতে পারে।
এবার মেয়েদের জন্যে একটা পরামর্শ, জেন্ডার বায়াসড শোনালেও ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছিঃ
প্লিজ, মোবাইল ফোনে নিজেদের এমন কোন ছবি রাখবেন না যেটা প্রকাশ হওয়াটা আপনার জন্যে সামাজিক এবং অন্যান্য ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।আরো ভালো হয়, যদি এধরণের ছবি না তোলেন। অন্তরংগ মুহূর্তে কেউ ওরকম ছবি তুলতে চাইলে ওই ভদ্রলোকের(ক্ষেত্রবিশেষে ভদ্রমহিলার) উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে উঠুন, একবারের ভালবাসা সারাজীবনের ভালবাসা নয়! এটা পুলিশি অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া Strictly Professional একটা পরামর্শ দিলাম।
আজ আপাততঃ এটুকুই!
মাসরুফ হোসেন
সহকারী পুলিশ সুপার
(প্রেষণে জাপানে অধ্যয়নরত)
তার আলোচ্য পোস্টে মাহবুবুর রহমান চৌধুরী নামক এক পাঠকের মন্তব্যটাও উল্লেখ করা প্রয়োজন সবার সাবধানতার জন্য
এই জানা জিনিসটাও আমরা অনেক সময় করিনা বা করতে চাইনা। আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ন তা হল সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল ফোন ক্রয়ের ক্ষেত্র সতর্কতা। বিক্রেতার পূর্নাঙ্গ ঠিকানা ও ছবি এবং স্বাক্ষর ছাড়া কোন প্রকার মোবাইল বা অন্য কিছু ক্রয় করবেননা। একটি উদাহরন দিলেই বুজতে পারবেন। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার একজন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী অপরিচিত ব্যাক্তির নিকট থেকে একটি মোবাইল ফোন ক্রয় করেন। অসাবধানবশত তিনি বিক্রেতার কোন পরিচিতি সংগ্রহে রাখেননি। কিছুদন সিলেট জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম ব্যববসায়ীকে তার বাড়ী থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে। গোয়েন্দা পুলিশ জনায় সিলেট নগরীর শাহপরান থানা এলাকায় চালককে হত্যা করে মাইক্রোবাস ছিনতাই করে দূর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় শাহপরান থানায় একটি হত্যা মামলা হয়া। তদন্ত করে জানাযায় নিহত চালকের মোবাইলফোন খোয়া গেছে। গোয়ান্দা পুলিশ ট্রাকিং করে জানতে পারে মোবাইলটি ওই ব্যবসায়ী ব্যবহার করছেন। এই ঘটনার কিছুদিন পর ছেলের চিন্তায় ব্যবসায়ীর বাবা হার্ট এ্যাটাকে মারা যান। সামান্য ভুলের কারনে ব্যবসায়ীর জীবনে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন এবং সম্প্রতি এই মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন বলে শুনেছি। সুতরাং সাবধানতা অবলম্বনের বিকল্প নেই। কথায় আছেনা সাবধানের মার নেই?
আরো পড়ুনঃ ফোনে হুমকি পেলে কি করবেন? শুনুন বাংলাদেশের সাহসী একজন পুলিশ অফিসারের মুখে
মন্তব্য চালু নেই