‘মোদি সরকার বাংলাদেশের জনগণের মনোভাব বুঝবে’

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া নতুন বিজেপি সরকার ক্ষমতাগ্রহণের পর পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের মনোভাব বুঝবে বলে আশা করছে বিএনপি।

দলটির নেতারা বলছেন, সমমর্যাদার ভিত্তিতে দুদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, অমীমাংসিত ইস্যু এবং বাংলাদেশের ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ জনগণের পাশে থাকবে ভারতের নতুন সরকার। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে প্রয়োজনে ভারত সরকার ‘চাপ প্রয়োগ’ করবে- সে আশাও পোষণ করেন তারা।

দলটির নেতারা মনে করেন, বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে সম্পর্ক রয়েছে, সেটি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নয়, আওয়ামী লীগ ও কংগ্রেসের মধ্যে সম্পর্ক। দুদেশের জনগণের মতামতের ভিত্তিতে ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিজেপিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা মনে করি, তাদের এই বিজয় গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। কারণ বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। যেহেতু ভারত একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক দেশ, সে কারণে বিজেপির এই জয়কে আমরা ভারতের জনগণের বিজয় হিসেবেই দেখি।’

ভারতের নতুন সরকারের কাছে বিএনপির প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন মির্জা আলমগীর। তিনি বলেন, ‘ভারতের নতুন সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে যেসব সমস্যা রয়েছে তার আলোকে এই দেশে জনগণের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করবে। তিস্তা চুক্তি ও সীমান্তে মানুষ হত্যাসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করবে।’

মোদির নেতৃত্বে ভারতের নতুন সরকার গঠিত হলে বাংলাদেশের পানি সমস্যাসহ অনেক সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান।

মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ভারত ৫৪টি নদীতে একতরফাভাবে বাঁধ দিয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে নদী লুণ্ঠন করছে। আমাদের অধিকার-স্বাধিকারের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ দাবি আদায় করতে হবে।’ ভারতের নতুন সরকার এ বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক তার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এই যে, এখানে দুই দেশের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় যখনই এই দুই দেশের কোনো দেশে সরকার পরিবর্তন হয়, তখন সেই সম্পর্ক ধসে পড়ে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঠিক তা-ই হয়েছে। অর্থাৎ সম্পর্কটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আওয়ামী লীগ ও কংগ্রেসের মধ্যে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নয়। এ কারণে আজকে নির্বাচনের ফলাফলে ভারতের সরকার পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের সরকার যারপরনাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।’

ড. মইন বলেন, ‘যেটা প্রয়োজন, তা হচ্ছে দুদেশের মানুষের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা। আর একমাত্র এভাবেই দুদেশের মধ্যে একটি স্থায়ী বন্ধুত্বেও সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘বিজেপি সরকার আসার পরে সময়ই বলে দেবে যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেবে।’

ভারতের নতুন সরকার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অমীমাংসিত ইস্যুগুলো সমাধানে এগিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘দুদেশের সম্পর্ক হওয়া উচিৎ সমমর্যাদার। বাংলাদেশের যেসব নায্য অধিকার আছে সে বিষয়ে ভারতেকে এগিয়ে আসতে হবে।’

৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভারতের কংগ্রেস সরকারের হস্তক্ষেপের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘কংগ্রেস সে দেশের মানুষের আস্থা হারিয়েছে। তাদের হেরে যাওয়া বাংলাদেশের ওই নির্বাচনে হস্তক্ষেপের প্রতিক্রিয়াও হতে পারে।’

গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে, কংগ্রেস বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছার বাইরে একটি সরকারকে ক্ষমতায় রাখলেও তারা নিজেরা ক্ষমতায় থাকতে পারেনি।’

ভারত যেমন তার গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখেছে, তেমনি বাংলাদেশের ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ জনগণের পাশে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

একই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমদ আযম খান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ভারতের গণমানুষের মতামতের ভিত্তিতে একটি সরকার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের যে সরকার দেশ পরিচালনা করছে তা জনগণের মতামতের ভিত্তিতে গড়ে ওঠেনি।’

সেজন্য দেশে অতি দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে ভারতের নতুন সরকার চাপ প্রয়োগ করবে আশা করেন আহমদ আযম খান।



মন্তব্য চালু নেই