মোদির বক্তব্যে হাসিনার উদ্বেগ

নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক এক নির্বাচনী বক্তব্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভারতে চলমান জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অন্যতম দল বিজেপির নেতা নরেন্দ্র মোদি এক জনসভায় বলেছেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বাক্স-প্যাটরা গুছিয়ে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

মোদির এই মন্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের সঙ্গে একটি ব্যক্তিগত বৈঠকে মোদির ওই মন্তব্য অপ্রয়োজনীয় এবং অন্যায্য বলে মত প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা ইন্ডিয়ান টাইমস-এর সহযোগী দৈনিক ইকোনমিক টাইমস-এ মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে এই ধরনের মন্তব্য কোনো অবদান তো রাখেই না বরং ভবিষ্যতে ভারত সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের নাগরিকদের সম্পর্ক নষ্ট করে দিতে পারে।

ঢাকায় কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে কট্টর ভারতবিরোধী জনমতকে নরেন্দ্র মোদির এই মন্তব্য আরো উসকে দিতে পারে এবং এর ফল ভোগ করতে হতে পারে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে।

অবশ্য নরেন্দ্র মোদির এই মন্তব্যের পর এখনো পর্যন্ত সরকার ভারতের প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। এমনকি দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতও এই বিষয়ে কোনো কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

ইকোনমিক টাইমস-এর প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে ভারতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয় দফায় এবং ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয়বারের মতো দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন চলতি বছরের শুরুতে। বিতর্কিত নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমে তার এই ক্ষমতা গ্রহণ বিশ্বব্যাপী তুমুল সমালোচনার ঝড় তুললেও ভারত এই নির্বাচনকে সাদরে গ্রহণ করেছে।

গেল রোববার মোদি বলেছেন, ভারতের ভোট-ব্যাংক নীতির কারণে এখানে অবৈধভাবে যে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি জনগণ বসবাস করছে তাদের অবিলম্বে নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে। একই সঙ্গে ধর্মীয় কারণে বাংলাদেশ থেকে যেসব লোককে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে, সেসব শরণার্থী ভারতে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে শুভেচ্ছা জানানো হবে। এর আগে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে প্রচারণা চালানোর সময়েও এই একই বিষয়ে কথা বলেছিলেন মোদি।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মোদির এই অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের সুশীল সমাজের একটি বড় অংশ তো উদ্বিগ্ন বটেই, এমনকি দীর্ঘদিন ধরে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলা দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারাও বেশ উদ্বিগ্ন বলে জানানো হয় প্রতিবেদনটিতে। পর্যটন, চিকিৎসাসেবা ও শিক্ষাগ্রহণের জন্য প্রতিবছর লক্ষাধিক বাংলাদেশি নাগরিক ভারত ভ্রমণ করেন।

প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, এর আগে থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের শাসনকালে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সে সময় ভারতবিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠী বাংলাদেশকে ব্যবহার করে ভারতে একাধিক সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ২০০৯ সালে হাসিনার পুনরায় ক্ষমতায় আসার মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আবারও গতি ফিরে পায় এবং হাসিনা বিদ্রোহী ও সন্ত্রাসীদের ভারতের হাতে তুলে দেন। হাসিনার সরকার দেশটির জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদীদের কাঠামোও পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়।

ইকোনমিক টাইমস জানায়, হাসিনার সরকারের এই ভূমিকার কারণে বর্তমানে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি উন্নয়ন কাঠামো প্রকল্পে পৃষ্ঠপোষকতা করছে ভারত। এমনকি হাসিনার পুনর্র্নিবাচিত নতুন সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থন দেওয়ার জন্যও সক্রিয় ভূমিকা পালন করে ভারত।



মন্তব্য চালু নেই