চসিক নির্বাচন ২০১৫

মেয়র পদে শিল্পপতি থেকে খাবার দোকানি

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার মেয়র পদে লড়তে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন আগ্রহী ১৩ প্রার্থী। এদের মধ্যে সদ্য বিদায়ী মেয়র এম মনজুর আলম যেমন রয়েছেন তেমনি প্রথম বারের মত মেয়র পদে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামা প্রার্থী ফোরকান চৌধুরীও রয়েছেন। কারো শিক্ষাগত যোগ্যতা সর্বোচ্চ এম এ পাস হলেও আবার কারো শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা উল্লেখও নেই। এমনকি স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন প্রার্থীও এবার নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন।

কোন কোন প্রার্থীর কোটি কোটি টাকা থাকলেও আবার কোন প্রার্থীর নগদ টাকার পরিমাণ অর্ধ লাখের ঘরে সীমাবদ্ধ। কেউ কেউ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক হলেও কেউ কেউ আবার শুধু খাবারের দোকানি। নির্বাচনী দৌড়ে সর্বোচ্চ ৬৯ বছরের বিএনএফ’র আরিফ মইনুদ্দীন যেমন লড়ছেন তেমনি সর্ব কনিষ্ট প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ৩৩ বছরের মো. ফোরকান চৌধুরীও।

প্রধান দুই প্রার্থী মনজুর আলমের বয়স ৫৮ বছর হলেও তার প্রধানতম প্রতিদ্বন্দ্বি আ জ ম নাছিরের বয়সও কম হয়নি। তাকে আওয়ামী লীগের তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি দাবি করা হলেও নাছিরের বয়সের ঘর অতিক্রম করেছে ৫৮ বছর। মাত্র চার বছরের বড় সদ্য বিদায়ী মেয়র মনজুর আলমের সথেই তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়ন পত্রের সাথে জমাকৃত হলফনামায় এসব তথ্য দিয়েছেন চট্টগ্রামের ১৩ মেয়র পদপ্রার্থী।

হলফনামা বিশ্নেষণে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিনের শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখানো হয়েছে বিএ পাস। চট্টগ্রাম বন্দরের বার্থ অপারেটিং ব্যবসা, মৎসসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে তার জমানো টাকার পরিমাণ ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯০ টাকা। তার বিরুদ্ধে আদালতে একটি ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ১৯৫৭ সালে জন্ম নেওয়া নাছিরের বর্তমান বয়স ৫৮ বছর।

বিএনপি সমর্থিত সদ্য বিদায়ী মেয়র এম মনজুর আলমের শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখানো হয়েছে এসএসসি পাস। রিয়েল এস্টেট, সিমেন্ট, জুট, ব্যাংকসহ মোট ১৩টি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে আসীন শিল্পপতি মনজুর আলমের জমানো নগদ টাকার পরিমাণ ১ কোটি ৬৯ লাখ ৩ হাজার ৬৪৫ টাকা। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। ১৯৫৩ সালে জন্ম নেওয়া মনজুরের বর্তমান বয়স ৬২ বছর।

জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ হলফনামায় নিজের কোন শিক্ষাগত যোগ্যতাই উল্লেখ করেননি। নিজেকে আইডিয়াল প্রিন্টিং প্রেসের মালিক উল্লেখ করে জমানো নগদ টাকার পরিমাণ দেখিয়েছেন ১০ লাখ টাকা। এমনকি নিজের বয়সও উল্লেখ করেননি পোস্টার সোলায়মান শেঠ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া জাতীয় পার্টির এ নেতা। যার কারণে রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক ইতোমধ্যে শোকজ করা হয়েছে তাকে। তবে তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসলামী ফ্রন্ট সমর্থিত এম এ মতিনের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ অনার্স। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। নিজেকে বাগদাদ রিয়েল এস্টেট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক উল্লেখ করে তার জমানো নগদ টাকার পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ ১৯ হাজার ৮৭২ টাকা। ১৯৫৩ সালে জন্ম নেওয়া মতিনের বর্তমান বয়স ৬২ বছর।

বিএনএফ সমর্থিত আরিফ মইনুদ্দীনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এম এ অনার্স। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। নেই কোন নগদ টাকাও। ১৯৪৬ সালে জন্ম নেওয়া আরিফের বর্তমান বয়স ৬৯ বছর। যিনি মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ বয়সের অধিকারী। এরআগে তিনি জিয়াউর রহমান সরকারের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

ইসলামী আন্দোলন সমর্থিত মো. ওয়ারেজ হোসেন ভূইয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা আলীম পাস। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। নিজের পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন কাফকো’র ফিল্ড মেইন্টেনেন্স কট্রোলার। নিজের জমানো নগদ টাকার পরিমাণ দেখিয়েছেন ৩৬ লাখ ৩৯ হাজার ১৩৭ টাকা। ১৯৭০ সালে জন্ম নেওয়া ওয়ারেজের বর্তমান বয়স ৪৫ বছর।

আবুল কালাম আজাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস। মামলা নেই। নিজেকে ব্যবসায়ী বললেও সুনির্দিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করেননি। নিজের জমানো নগদ টাকার পরিমাণ দেখিয়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার ৩৫০ টাকা। ১৯৬৯ সালে জন্ম নেওয়া এ প্রার্থীর বর্তমান বয়স ৪৬ বছর।

আলাউদ্দিন চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। নিজেকে একজন ঠিকাদার হিসেবে উল্লেখ করে জমানো নগদ টাকার পরিমাণ উল্লেখ করেছেন ১ লাখ টাকা। ১৯৬৯ সালে জন্ম নেওয়া আলাউদ্দিনের বর্তমান বয়স ৪৬ বছর।

সৈয়দ সাজ্জাদ জোহার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস। তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী সংক্রান্ত একটি মামলা সিএমএম আদালতে চলমান রয়েছে। নিজের পেশার স্থানে তিনি উল্লেখ করেছেন, ব্যবসায়ী, লেখক ও রাজনীতিবিদ। ব্যবসার বিবরণে লিখেছেন তিনটি বুটিক, খাবার ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক। নিজের জমানো নগদ টাকার পরিমাণ দেখিয়েছেন ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ১৯৬৭ সালে জন্ম নেওয়া জোহার বর্তমান বয়স ৪৮ বছর।

শফিউল আলমের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। নিজেকে সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করে জমানো নগদ টাকার পরিমাণ দেখিয়েছেন ১৫ লাখ টাকা। ১৯৫৩ সালে জন্ম নেওয়া শফিউল আলমের বর্তমান বয়স ৬২ বছর।

হোসাইন মুহাম্মদ মুজিবুল হকের শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করা হয়েছে ‘স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন’। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। হজ কাফেলা, ট্রাভেল এজেন্সির মালিক এ প্রার্থীর নগদ টাকার পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ১৯৭০ সালে জন্ম নেওয়া মুজিবুল হকের বর্তমান বয়স ৪৫ বছর।

মো. ফোরকান চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস। তার বিরুদ্ধেও কোন মামলা নেই। নিজের পেশার স্থানে পোল্টি ফার্ম ও মৎস্য ব্যবসায়ী উল্লেখ করেছেন। নগদ টাকার পরিমাণ মাত্র ১ লাখ টাকা। ১৯৮২ সালে জন্ম নেওয়া ফোরকানের বর্তমান বয়স মাত্র ৩৩ বছর। যিনি মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে সর্ব কনিষ্ট প্রার্থী।

সাইফুদ্দীন ববির শিক্ষাগত যোগ্যতা আইএ পাস। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। নিজেকে খাবারের দোকানের মালিক উল্লেখ করে নগদ টাকার পরিমাণ দেখিয়েছেন মাত্র ৫০ হাজার টাকা। ১৯৬৪ সালে জন্ম নেওয়া এ প্রার্থীর বর্তমান বয়স ৫১ বছর।



মন্তব্য চালু নেই