মির্জা আব্বাসের সম্পত্তি প্রচুর, দেনাও কম না

আব্বাসের স্ত্রী ১৩ কোটি, খোকনের স্ত্রী ৩ কোটি

সাঈদ খোকনের স্ত্রীর তুলনায় মির্জা আব্বাসের স্ত্রীর সম্পত্তি ১০ কোটি টাকার বেশি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই প্রধান সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী বিএনপি সমর্থিত মির্জা আব্বাস ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাঈদ খোকনের মনোনয়ন পত্রের সাথে জমাকৃত হলফনামায় তাদের স্ত্রীর সম্পত্তির পরিমান দেখে এমন তথ্যই উঠে আসে।

দুই প্রার্থী জমাকৃত হলফনামায় দেখা যায়, মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৩ কোটি ৩৫ লাখ ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাঈদ খোকনের স্ত্রী মোট সম্পত্তির পরিমান ৩ কোটি ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৯৭ টাকা। মির্জা আব্বাসের নগদ টাকার পরিমাণ ৫০ লাখ হলেও তার স্ত্রীর নগদ টাকার পরিমাণ ১ লাখ ৬৮ । মির্জা আব্বাসের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১০০ কোটি ৭০ লাখ ৭১ হাজার ৯৮৫ টাকা।

মির্জা আব্বাস তার হলনামায় উল্লেখ করেছেন, তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ (২০১৪-১৫ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন অনুযায়ী) ৯০ কোটি ৮৭ লাখ ৮৪ হাজার ২১৭ টাকা। অন্যদিকে স্ত্রী আফরোজা আব্বাসের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১৩ কোটি ৩৫ লাক ৩৬ হাজার ৭৪ টাকা। স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৩২ লাখ ৯৪ হাজার ৯৫ টাকা বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্চ তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার ঢাকা ব্যাংক রয়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৬০ টাকা, ঢাকা ফোনের ১০ কোটি ৬৮ টাকা, অন্যান্য শেয়ার বাদে ৯৫ লাখ ৭৯ হাজার ৯১৭ টাকা। পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে স্ত্রীর বিনিয়োগ রয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৪ টাকা। স্ত্রীর স্বর্ণ অলঙ্কার (১৭০ তোলা) রয়েছে বর্তমান মূল্য ২২ লাখ টাকা। ৫ লাখ টাকা মূল্যের স্ত্রী নামে আসবাবপত্র রয়েছে। ঢাকা ফোনে স্ত্রীর নামে বিনিয়োগে রয়েছে ১৫ লাখ ।

মির্জা আব্বাসের স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৯ কোটি ৮২ লাখ ৮৭ হাজার ৭৬৮ টাকা অন্যদিকে তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তি নেই বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।

অন্যদিকে সাঈদ খোকনের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪৭ কোটি ৯৩ লাখ ৬৪ হাজার ২১৬ টাকা। আর তার স্ত্রী ৩ কোটি ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৯৭ টাকা।

মোহাম্মদ সাইদ খোকনের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২১ কোটি ১ লাখ ৮৫ হাজার ২১৬ টাকা। আর তার স্ত্রীর নামে অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ হচ্ছে ২ কোটি ৮০ লাখ ৮৫ হাজার ৭৯৭ টাকা। নিজ নামে নগদ অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৭৮ টাকা থাকলেও তার স্ত্রীর নামে নগদ অর্থের পরিমাণ ৩০ লাখ। স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ রয়েছে ২৭ লাখ ২২ হাজার ৩০৬ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, এক্সচেঞ্চ তালিকাভুক্ত নয় ও তালিকাভুক্ত এমন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ১ কোটি টাকার। বন্ড, ঋণপত্র, এক্সচেঞ্চ তালিকাভূক্ত নয় ও তালিকাভূক্ত এমন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ১৩ লাখ টাকার। বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি ইত্যাদি রয়েছে ৩২ লাখ টাকার। স্বর্ণালঙ্কারের পরিমাণ ২ লাখ ৫ হাজার টাকা। আসবাবপত্র বাবদ রয়েছে ৩০ হাজার টাকা এবং অন্যান্য সম্পত্তি রয়েছে ৭৬ লাখ ২৮ হাজার ৪৯২ টাকার।

অন্যদিকে মির্জা আব্বাসের স্ত্রীর নামে স্থাবর সম্পত্তি না থাকলেও সাঈদ খোকনের স্ত্রী নামে স্থাবর সম্পত্তি পরিমাণ ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে তার অকৃষি জমি ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকার। দালান (আবাসিক/বাণিজ্যিক) ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকার।

মির্জা আব্বাসের সম্পত্তি প্রচুর, দেনাও কম না
পেশায় ‘ব্যবসায়ী’ মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী। তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পরিমান ১০০ কোটি ৭০ লাখ ৭১ হাজার ৯৮৫ টাকা। তবে দেনাও রয়েছে প্রচুর পরিমানে। তার মোট দেনার পরিমান ৭৫ কোটি ৬৫ লাখ ২৫ হাজার ৯০৩ টাকা। দেনা বাদ দিলে তিনি এখন ২৫ কোটি ৫ লাখ টাকার মালিক।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমাকৃত হলফনামা থেকে এ তথ্য জানা যায়।
মির্জা আব্বাস তার হলফনামায় বাৎসরিক আয় উল্লেখ করেছেন ৭ কোটি ৬৪ লাখ ৭১ হাজার ৮৩ টাকা। যেখানে প্রতিমাসে তার গড় আয় দাঁড়ায় ৬৩ লাখ ৭২ হাজার ৫৯০ টাকা। এর মধ্যে প্রতিবছর বাড়ি/দোকান/এপার্টমেন্ট ভাড়া থেকে তার আয় হয় ১ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৫৪৩ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র এবং ব্যাংক আমানতের মাধ্যমে তার আয় ৬ কোটি ২৭ লাখ ১৫ হাজার ২৯০ টাকা। অন্যান্য ব্যবসা থেকে ১ লাখ ৭৪ হাজার ২৫০ টাকা বছরে আয় করেন তিনি।
সম্ভাব্য এ প্রার্থীর পরিবারে তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের মোট বাৎসরিক আয় ৪৯ লাখ ৬৭ হাজার ৮৯৭ টাকা।
মির্জা আব্বাসের অস্থাবর সম্পদের মূল্য (২০১৪-১৫ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন অনুযায়ী) ৯০ কোটি ৮৭ লাখ ৮৪ হাজার ২১৭ টাকা। যেখানে নগদ টাকা রয়েছে ৫০ লাখ, ব্যাংকে জমানো টাকা ১০ লাখ ৬২ হাজার ১২৩ টাকা, বন্ড মার্কেট-শেয়ারবাজারে এবং শেয়ারবাজারের বাইরেও বিভিন্ন কোম্পানিতে শেয়ার রয়েছে ৭৭ কোটি ৫৫ লাখ ১৪ হাজার ৯৪৫ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু রয়েছে ২ লাখ টাকা। এছাড়া মি বেগ ও মি এম এ জামান নামের দু’টি কোম্পানি রয়েছে মির্জা আব্বাসের। যার মূল্য ধরা হয়েছে ৯০ লাখ টাকা। এছাড়া তার নিজের ইলেকট্রনিক সামগ্রী রয়েছে ১০ লাখ টাকার এবং আসবাবপত্র রয়েছে ৭ লাখ টাকার। আর তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের পরিমান ১৩ কোটি ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৭৪ টাকা।
স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে কোনো প্রকার কৃষি জমি না থাকলেও ১ কোটি ৮৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমি রয়েছে এ সম্ভাব্য প্রার্থীর। এছাড়া আবাসিক/বাণিজ্যিক ১ কোটি ৩৫ লাখ ও ২ কোটি ৬২ লাখ টাকা মূল্যের দু’টি ভবন রয়েছে তার। এছাড়াও কিছু জমি বায়না বাবদ অগ্রিম টাকা নিয়েছেন ৪ কোটি। এতে করে তার মোট স্থাবর সম্পত্তির পরিমান রয়েছে ৯ কোটি ৮২ লাখ ৮৭ হাজার ৭৬৮ টাকা মূল্যের।
তবে অনেক টাকা দেনা থাকলেও তিনি কোনো প্রকার ঋণ-খেলাপি নন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।
মির্জা আব্বাস ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মহাবিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় বিভাগে স্নাতক পাস করেছেন। জাতীয়তাবাদী মনা এ প্রার্থী ব্যবসায়ী হলেও রাজনীতির সঙ্গে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য এবং ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক। তার ওপর বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতি, রাজনৈতিক এবং কর বিষয়ক অনেকগুলো মামলা ঝক্কিও রয়েছে। অনেকগুলোতে খালাসও পেয়েছেন। আবার কয়েকটি মামলা চলমান। তিনি তার হলফনামায় উল্লেখ করেছেন ৬১টি মামলার কথা। যার মধ্যে ৪১টি মামলা বিচারাধীন।
আর ১৮টি মামলায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে হলফনামায়। এছাড়া দু’টি মামলায় আদালতে দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশ তার নাম বাদ দেয়ার সুপারিশ জানিয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই