মেয়র পদে মনজুকে ‘না’
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও বর্তমান মেয়র মনজুর আলমকে ছাড়া অন্য যে কোন নেতাকে মেয়র পদে চান চট্টগ্রামের তৃণমূল বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের একাংশের নেতাকর্মীরা। মনজুরকেই ফের বিএনপি সমর্থন দিচ্ছে এ খবরে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
দলের হাইকমান্ডের কাছে তাদের একটাই দাবি, সরকার বিরোধী আন্দোলনে নেতাকর্মী বিছিন্ন মনজুর আলমকে ছাড়া চট্টগ্রামের অন্য যে কোন ত্যাগী নেতাকে যেন সমর্থন দেওয়া হয়। অন্যথায় তারা মনজুর নির্বাচন বয়কটের পাশাপাশি বৃহৎ কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
বিক্ষুব্ধ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মঙ্গলবার দুপুরে মেয়র মনজুর আলমের কুশপুতুল পুড়িয়েছে। বিকেলে নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাসভবনের সামনে অবস্থান করে মনুজর আলম বাদে ডা. শাহাদাত হোসেনসহ দলের অন্য যে কোন নেতাকে প্রার্থী করতে খসরুর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
এসময় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে ছাত্রদল নেতারা জানিয়েছেন, মনজুর আলম ছাড়া অন্য যে কোন ত্যাগী নেতাকে চট্টগ্রামের তৃণমূল ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মেনে নেবেন। যে কোন মূল্যে মনুজরকে তারা মানবে না। এসময় খসরু বিষয়টি দলের হাইকমান্ডের নজরে আনার আশ্বাস দিলে তারা চলে যান।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহ বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে দলের পদ ব্যবহার করে, বিএনপি নেতাকর্মীদের ত্যাগের বিনিময়ে মেয়র হয়েও দলের পাশে ছিলেন না মনজুর আলম। উল্টে নিরপেক্ষতার নামে সখ্য গড়ে তুলেছেন সরকার দলীয় কতিপয় নেতার সঙ্গে। সরকারের চলমান দমন নিপীড়নে কারাগারে অন্তরীণ চট্টগ্রামে বিএনপির ৮ হাজার নেতাকর্মী। সেখানে মাঠে না থাকায় সরকারের সঙ্গে আতত করে সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন মেয়র মনজুর আলম। তাই সুবিধাবাদি এ নেতাকে যদি মেয়র পদে সমর্থন দেওয়া হয় চট্টগ্রামের তৃণমূল বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা দলের আদেশ না মানতে বাধ্য হবে।’
তিনি বলেন, ‘মাথায় মামলার হুলিয়া নিয়ে সুবিধাবাদী প্রার্থীর পক্ষে কেউ কাজ করতে আগ্রহী নয়। শুধুমাত্র মনজুর আলম ছাড়া অন্য যে কোন ত্যাগী নেতাকে যদি মেয়র পদে সমর্থন দেওয়া হয় তাহলে চট্টগ্রামে আন্দোলনের মাত্রায় গতি বাড়ার পাওয়ার পাশাপাশি দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সকলে একযোগে কাজ করবে।’
নগর ছাত্রদলের আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরাতো নিজের জন্য চুরি করে ডাকাতি করে এসব মামলার আসামী হয়নি। শুধুমাত্র ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) ডাকে সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে মামলার আসামী হয়ে ফেরারি জীবন কাটাতে হচ্ছে। তাই চট্টগ্রামের মেয়র পদে সুবিধাবাদী কাউকে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা কখনো মেনে নেবেনা। দলের হাইকমান্ডকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের অনুভূতি উপলব্ধি করতে হবে। অন্যথায় চট্টগ্রামে বিএনপিকে চরম মাশুল দিতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘দলীয়ভাবে ব্যর্থ মনজুর আলম। চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতাসহ নানা কাজেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন। এখন সরকার বিরোধী সেন্টিমেন্টকে নিজেদের ঘরে তুলতে হলে বর্থ্য মেয়রকে নয়, ত্যাগী ও উদ্যমী কাউকে সামনে নিয়ে আসতে হবে।’
একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন নগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন দ্বীপ্তিসহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের একাধিক নেতা।
দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা যুক্তি দিয়ে বলেন, দলের কারান্তরীণ নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টু যদি মেয়র পদে লড়ার জন্য মনোনয়ন পত্র কিনতে পারেন। তাহলে সরকারের দমন নিপীড়নের শিকার হয়ে মামলার আসামী হওয়া ডা. শাহাদাত হোসেন, আবু সুফিয়ান কেন নির্বাচনের যোগ্য হবেন না। দলের নির্দেশ পালন করতে গিয়েই যদি নির্বাচনে লড়ার সুযোগ বঞ্চিত হয়। তাহলে ভবিষ্যতে কেউ আর সরকার বিরোধী আন্দোলনে নামবে না। সকলেই মেয়র মনজুর আলমের পথ ধরে মামলা থেকে বেঁচে সুবিধাবাদী রাজনীতি করবে
এরআগে দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতারা হাইকমান্ডের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে গত ছয় বছর পুলিশের দমন নীপিড়নের শিকার হওয়ার কারণে ডা. শাহাদাত হোসেনই একমাত্র মেয়র পদে মনোনয়নের দাবিদার। সারা বছর আন্দোলন সংগ্রামে না থেকেও যদি মনজু মনোনয়ন পান তাহলে চলমান আন্দোলন সংগ্রাম করে আর লাভ কি?’ পুলিশের ভয়ে আত্মগোপনে না থেকে, মাঠে সংগ্রাম না করেই দলের পদ-পদবি নিয়ে বসে থাকাই হবে শ্রেয়। মেয়র মনজুকে যদি মনোনয়ন দেওয়া হয় চট্টগ্রামের ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তা কোন ভাবেই মেনে নেবেনা।’
তারা অবিলম্বে বিএনপির হাইকমান্ডের এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানান। অন্যথায় বিএনপি-যুবদল ও ছাত্রদলের পক্ষ থেকে কঠোর কর্মসূচি দেয় হবে বলে হুশিয়ারি দেওয়া হয় সমাবেশ থেকে।
এরপর মেয়র মনজুর আলমের কুশপুতুল পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানান ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে মেয়র পদে নির্বাচন করতে নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার মনোনয়ন পত্র কিনেছেন। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সরকারের শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করতে চাই। তবে দলের দু:সময়ে যারা যারা ছিলনা, দলের দুর্দিনে যারা আন্দোলন-সংগ্রামে নেই, জেলে বন্দি হাজার হাজার নেতাকর্মীর পাশে যারা দাঁড়াতে পারেনা তাদের কাউকে মনোনয়ন দিলে নেতাকর্মীরা মানবেনা।’
দল যদি তাকে সমর্থন না দিয়ে দলের দুর্দিনের ছিলেন এমন কাউকে সমর্থন দেয় তখন নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করবেন বলেও জানান এ নেতা।
প্রসঙ্গত, যদি সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ করে তাহলে চট্টগ্রামে বর্তমান মেয়র মনজুর আলমকেই সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মেয়র পদে সমর্থন দেওয়া হয়েছে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনকে। দলে তার রয়েছে ব্যাপক জন সমর্থন ও বিশাল কর্মী বাহিনী। সেজন্য নাছিরের বিপরীতে লড়তে হলে নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু, দলের সহ সভাপতি আব্দুল্লাহ আল নোমান ও নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন এবং সহ সভাপতি আবু সুফিয়ানের বিকল্প নেই। এদের মধ্যে একাধিকবার মন্ত্রী থাকা নোমান ও খসরু মেয়র পদে নির্বাচন করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
মন্তব্য চালু নেই