শিল্পমন্ত্রীকে দায়ী করছেন মেয়র
ঝালকাঠি পৌর মেয়র ও ১০ কাউন্সিলর গ্রুপে কয়েক দফা সংর্ঘষে আহত ২০
ঝালকাঠি পৌর মেয়র আফজাল হোসেন গ্রুপ সহ তার সমর্থকদের সাথে ১০ কাউন্সিলরের মুখপাত্র প্যানেল মেয়র রেজাউল করিম জাকির গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংর্ঘষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় গ্রুপের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে যারমধ্যে ৫ জন গুরুতর। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ঝালকাঠি পৌর সভার সামনে দফায় দফায় এ সংর্ঘষ হয়। এ ব্যাপাওে উভয় পক্ষই পৃথক মামলা দায়েরের প্রস্তুতী নিচ্ছে বলে জানিয়েছে। শহর জুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই মেয়র ও ১০ কাউন্সিলরের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বিরোধ ও আইনী লড়াই চলে আসছিল। তাদের বিরোধের ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলা ঝালকাঠি ষ্পেশাল ট্রাইব্যুনাল ও হাইকোর্টে বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে পৌর ভবনে স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি সভায় পৌর মেয়র বিরোধী ১০ কাউন্সিলর উপস্থিতি হলে কাউন্সিলরদের সমর্থকরা সহ কয়েক শত উৎসুক পৌরবাসী পৌর কার্যালয়ের সামনে ভীড় করেন। অন্যদিকে পৌর মেয়র আফজালের ভাই, ভাতিজা, শ্যালক সহ কতিপয় সমর্থকদের নিয়ে পৌর এলাকায় পৌছলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এসময় কাউন্সিলর গ্রুপের সমর্থকরা মেয়রকে গালাগাল করতে থাকলে কাউন্সিলর হুমায়ূন কবিরের ভাই সবুজকে মেয়রের শ্যালক সেলিম খান (৪০) ও ভাইপো সাজ্জাদুল হোসেন মুন্না (৩২) হামলা করলে রক্তাক্ত জখম হলে সংর্ঘষের সূত্রপাত ঘটে।
এতে মহিলা কাউন্সিলর রিজিয়া বেগস (৪৮) ও মেয়র গ্রুপে মেয়রের ভাই আউয়াল হোসেন (৫০), ফরিদ হাওলাদার (৪০), রবিন সিকদার, সোহেল খান, সেলিম খান, নাসির হোসেন ,হারুন অর রশিদ আহত হয় । অপর দিকে কাউন্সিলর গ্রুপের আহত ১০ জন হলেন সবুজ হাওলাদার (৪৪), মো. হারুন, নাছির আহম্মেদ, মো. হাফিজুল , কবির হোসেন, সোনা মিঞা, মো. কালাম, সবুজ খান, ফারসু মিরাজ হোসেন ও বাবু আহত হয়। পরে কাউন্সিলর সমর্থকরা পৌর মেয়র আফজাল হোসেন এর বিরুদ্ধে শহরে ঝাড়– মিছিল করে এবং অবিলম্বে তাকে পৌরসভা থেকে অপসারন সহ তার দূর্নীতি-লুটপাটের বিচার দাবী করেন।
১০ কাউন্সিলরের মুখপাত্র প্যানেল মেয়র-২ রেজাউল করিম জাকির অভিযোগ করেন, মেয়র আফজালের বিরুদ্ধে আমরা আইন গত লড়াই চালিয়ে আসলেও কোন সংহিংসতায় বিশ্বাসী নই। কিন্তু তিনি পৌর পরিষদের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে পৌরবাসীর ট্যাক্স, পানির বিল সহ বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করায় পৌর ভবনে স্বাস্থ্য বিষয়ক সভার পূর্বে এ বিষয়ে মেয়রের সাথে প্রতিবাদ জানাই। এ সময় পৌর কার্যালয়ের বাহিরে অধিকার বঞ্চিত ও শোষীত পৌরবাসী ট্যাক্স, পানির বিল সহ বিভিন্ন বিষয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের প্রতিবাদ জানাতে আসলেও এটা বাহিরের ব্যাপার।
অন্যদিকে ঝালকাঠি পৌর সভার মেয়র আফজাল হোসেন জানায়, স্থানীয় সংসদ সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর নির্দেশে ১০ কাউন্সিলর দীর্ঘদিন ধরে তার বিরুদ্ধে নানা চক্রান্ত চালিয়ে আসছে। মঙ্গলবার তারই মদদপুষ্ট কাউন্সিলর জাকিরের নেতৃত্বে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা পৌরকার্যালয়ে ঢুকে বিভিন্ন কর্মকর্তাকে হুমকি দেয় এবং আমার ভাই সহ বেশ কয়েক জনকে নির্মম ভাবে মারধর করে। নরসিংন্ধির লোকমানের ন্যায় এরা যেকোন সময় আমাকে হত্যা করতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন। সে দাবী করেন, ওয়ান ইলেভেনের সংস্কারবাদী নেতা আমুর নির্দেশ অমান্য করে তিনি মূল¯্রােতের পক্ষে থাকায় এখোন সে ক্ষমতার অব্যবহার করে তার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে। যে কারনে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রসাশণ তাকে আইনগত সহযোগীতা করছেনা।
তবে এব্যাপারে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনিরের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ঝালকাঠি পৌরসভায় মেয়র ও ১০ কাউন্সিলের মধ্যে যে বিরোধ সেটা তাদের অধিকার আদায় সংক্রান্ত বিরোধ। এরসাথে রাজনীতির বা জেলা আওয়ামীলীগের কোন সম্পর্ক নেই।
ঝালকাঠির সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার আফম আনোয়ার হোসেন খান জানান, পূর্ব থেকেই বিরোধ চলে আসা মেয়র-কাউন্সিল গ্রুপের সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে ও মেয়র তার কার্যালয়ে নিরাপদে তার দায়িত্ব পালন করছে। পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
মন্তব্য চালু নেই