মেহেরপুরে আ.লীগ নেতা জখম, বিএনপির মাইক ভাঙচুর

মেহেরপুর গাংনী উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নের নির্বাচনী মাঠে এখন উত্তপ্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রচার মাইক ভাঙচুর ও মোটরসাইকেল বহরে হামলা এবং পাল্টা প্রতিবাদের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বামন্দীবাসী।

এ হামলার ঘটনায় আহত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা বজলুল রশিদসহ কয়েকজন বিএনপি কর্মী। ভাঙচুর করা হয়েছে প্রচার মাইক।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে কয়েক যুবক মোটরসাইকেলে বামন্দী বাজারে টহল দিয়ে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করে। বামন্দী বাসস্ট্যান্ডের অদূরে বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিরুল ইসলামের মোটরসাইকেল বহরে হামলা চালায়। বহরের পেছন দিকে মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীদের লাঠিপেটা করে পালিয়ে যায় ওই যুবকরা। এ সময় গাংনী থেকে মোটরসাইকেলে বামন্দী বাজারে যাওয়ার সময় হামলার শিকার হন বামন্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বাদিয়াপাড়া গ্রামের বজলুল বশিদ (৪২)। দুর্বৃত্তদের লাঠির এলোপাতাড়ি আঘাতে বজলুল রশিদের মুখ ও মাথা জখম হয়। আহত হন তার সঙ্গীয় তেরাইল গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী আশরাফ। আশরাফকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হলেও বজলুল রশিদকে রাতেই গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

বজলুল বশিদ জানান, তিনি গাংনী থেকে মোটরসাইকেলে বামন্দী বাসস্ট্যান্ডের আগে পৌঁছালে বিএনপি প্রার্থীর মোটরসাইকেল বহরের দেখা পান। বহরটি বেরিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় তিনি তার মোটরসাইকেলের গতি কমিয়ে দেন। এ সময় পেছন থেকে কয়েক যুবক তার উপর লাঠি দিয়ে আঘাত করে।

এদিকে, ওই যুবকরা মোটরসাইকেল বহরে হামলার পর বামন্দী বাজারের ভেতরে বিএনপি প্রার্থী আমিরুল ইসলামের প্রচার মাইক ভাঙচুর করে। মাইক বহন করা ভ্যান উল্টে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বামন্দী বাজারের ব্যবাসায়ীরা। দোকান বন্ধ করে দ্রুত যার যার মতো সটকে পড়েন।

মাইক ভাঙচুর ও হামলার সময় বামন্দী ক্যাম্প পুলিশের একটি দল বামন্দী বাজারে থাকলেও তারা কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

এদিকে বজলুল রশিদের ওপর হামলার খবর পেয়ে বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন তেরাইল বাজারে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের কর্মী-সমর্থকরা। তারা লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল নিয়ে বামন্দীর উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন। কয়েকশ নেতাকর্মী তেরাইল থেকে পায়ে হেঁটে বামন্দী বাজারে পৌঁছে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বিক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তারা। পরে অবশ্য পুলিশের আশ্বাসে তারা বাড়ি ফিরে যায়।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের অভিযোগ, স্বতন্ত্র প্রার্থী হবিবুর রহমান হবির লোকজন হামলার সঙ্গে জড়িত। তারা বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগ কর্মীদের হুমকি-ধামকি ও মারধর করছে। তাদের গ্রেপ্তার দাবি জানিয়ে গতরাতেই তিনি পুলিশ সুপার ও ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে জানান তিনি।

বিএনপি প্রার্থী আমিরুল ইসলাম জানান, মোটরসাইকেল বহরে হামলার ঘটনায় তার কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন। তাদের প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী) হবিবুর রহমান হবি। তিনি জানান, ‘হামলার সঙ্গে তার কোনো কর্মী-সমর্থক জড়িত নয়। বরং তার কর্মীরাই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হুমকিতে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছেন না। তিনিও প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।

তবে ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয় উল্লেখ করে গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন জানান, উভয় পক্ষকে শান্ত করা হয়েছে। নির্বাচনী মাঠে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না। হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে রাতেই অভিযান চালানো হয়েছে। এ বিষয়ে কাউকে কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবে না বলেও হুশিয়ারি করেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই