মেডিটেশন কী, কেন এবং কীভাবে করবেন?

মেডিটেশন শব্দটা এখন বেশ প্রচলিত। আপনি হঠাৎ হঠাৎ ভীষণ রেগে যান? বন্ধুরা বলবে, ‘মেডিটেশন কর’ ! খুব হতাশায় ভোগেন? আত্মবিশ্বাস নেই একদমই? ঘুম হয় না? একটাই পরামর্শ, মেডিটেশন। কী এই মেডিটেশন? আসুন জেনে নিই মেডিটেশন কী এবং কীভাবে এটি আমাদের জীবনে কাজে লাগতে পারে।

মেডিটেশন কি?
মেডিটেশন এক প্রকার মনের ব্যায়াম। এটি সচেতনভাবে দেহ মন এবং মস্তিষ্ককে শিথিল করার আধুনিক বৈজ্ঞানিক এবং সহজ প্রক্রিয়া। মেডিটেশনের মাধ্যমে আমরা মনকে একাগ্র করি, নির্দিষ্ট কিছুক্ষ্ণের জন্য নিজেকে দূরে সরিয়ে আনি দৈনন্দিন জীবনের শত সমস্যা থেকে। এতে মনে আসে শান্তি, ধীরে ধীরে কাজে মনোযোগ বাড়ে, নিজের প্রতি বিশ্বাস ফিরে আসে।

কেন করবেন মেডিটেশন?

১। টেনশনমুক্তি
মেডিটেশনের প্রথম লাভই হলো টেনশনমুক্তি। বলা হয় টেনশন ও শিথিলায়ন একসাথে থাকতে পারে না। যে শরীরে টেনশন থাকে, সে শরীরে শিথিলায়ন থাকে না। আর শরীর শিথিল হলে টেনশন পালিয়ে যায়। আর আমরা এখন জানি, মনোদৈহিক ৭৫ ভাগ রোগের কারণই টেনশন। তাই মেডিটেশন করলে আপনি অনায়াসেই শতকরা ৭৫ ভাগ মনোদৈহিক রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।

২। রোগমুক্তি
মেডিটেশনের মাধ্যমে আপনি মাইগ্রেন, সাইনোসাইটিস, ঘাড়ে-পিঠে-কোমরে বা শরীরের যেকোনো স্থানে দীর্ঘদিনের ব্যাথা, হজমের সমস্যা, আইবিএস, এসিডিটি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, অনিদ্রা প্রভৃতি রোগগুলো থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। এইধরণের রোগ হলেও সুস্থ হতে পারবেন। আর অন্যান্য রোগ নিরাময়েও ওষুধ ও সার্জারির পাশাপাশি সুস্থ জীবন পেতে মেডিটেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৩। মনোযোগ বৃদ্ধি
একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আপনি মেডিটেশন করার মাধ্যমে শিখবেন অখণ্ড মনোযোগ ও অল্পসময়ে পড়া আয়ত্ত করার টেকনিক।

৪। সুখী দাম্পত্য
পারিবারিক সমস্যা দূর করে সুখী দাম্পত্য জীবনে ফিরে যেতে পারবেন আপনি। আপনার নিজের মধ্যেই তৈরি হবে সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা।

৫। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা
একজন পেশাজীবী হিসেবে সবসময় মাথা ঠান্ডা রেখে আপনি নিতে পারবেন সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত। ব্যাক্তি জীবনেও আপনি হবেন আত্মবিশ্বাসী।

৬। সফল জীবন
একজন সফল মানুষ হওয়ার জন্যে মেডিটেশনে মনছবি চর্চা করে আপনি আপনার জীবনের যেকোনো চাওয়াকে পরিণত করতে পারেন স্বতঃস্ফূর্ত পাওয়ায়।

কীভাবে মেডিটেশন করবেন?

১। মেডিটেশনের জন্য আপনাকে সবার প্রথমে যেটা করতে হবে তা হল একটি নিরিবিলি আর শান্ত জায়গা। যেখানে আপনি নিশ্চিন্তে নিজেকে মেডিটেশনে আত্মনিয়োগ করতে পারেন।

২। এবার নজর দিন মেডিটেশনের সময় আপনার পরিধেয় পোশাকের দিকে। খেয়াল রাখুন মেডিটেশন এর সময় আপনার পরিধেয় কাপড়টি যেন অবশ্যই পরিষ্কার পরিছন্ন হয়। আরও মনে রাখতে হবে মেডিটেশন করার জন্য কাপড়টি যেন সুতি ও পাতলা ধরণের হয়।

৩। মেডিটেশনে বসার আগে ভালোভাবে চোখে মুখে পানি দিয়ে নেবেন। এতে করে মেডিটেশন করতে আপনার সুবিধা হবে। আর আপনি যদি নিয়মিত চশমা ব্যবহার করে থাকেন তাহলে অবশ্যই মেডিটেশন করার আগে চশমা খুলে নেবেন।

৪। মেডিটেশন এর জন্য উপযুক্ত সময় কখন হবে এ নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তিতে থাকেন। মেডিটেশনের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় ধরা হয় ভোরবেলা আর তা না হলে সন্ধ্যা। এই সময়টায় আপনার চারপাশের পরিবেশ এমনিতেই শান্ত থাকে যার ফলে আপনার মেডিটেশনে মনঃসংযোগ করতে কোন সমস্যা হয় না।

৫। মেডিটেশন করার জন্য কোন আসন উপযুক্ত তা আপনার উপর নির্ভর করবে। আপনি নিজে কোন আসনে নিজেকে বেশী সাবলীল আর স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন তা আপনাকেই বেছে নিতে হবে। আপনি যে আসনেই মেডিটেশন শুরু করুন না কেন শুরুটা করুন আপনার কোন সুখকর স্মৃতি বা ঘটনা মনে করে।

৬। যারা যোগ ব্যায়ামের বিভিন্ন আসন জানেন-পদ্মাসন, সুখাসন, গোমুখাসন, সিদ্ধাসন ইত্যাদি যেকোনো আসনে বসে মেডিটেশন করতে পারেন।বজ্রাসনে এতক্ষণ বসে থাকতে যদি অসুবিধা না হয় তাহলে করতে পারেন। যারা নামাজ পড়েন তারা জায়নামাজে যেভাবে বসেন সেভাবেই মেডিটেশন করতে পারেন।

৭। মেডিটেশনের সময় কতক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী এ বিষয়ে যদি আপনি চিন্তিত হয়ে থাকেন তাহলে বলতে হয় এটি সম্পূর্ণভাবে আপনার নিজের উপর নির্ভর করে। হতে পারে সেটা ১০ থেকে ২০ মিনিট অথবা ১ ঘণ্টা। এখানে মূল ব্যাপার হচ্ছে আপনার মানসিক স্থিরতা, এখন এটা আপনি কত সময় ধরে করতে চান সেটা আপনাকেই ঠিক করতে হবে।

মেডিটেশনের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। আপনি যদি নিয়মিত মেডিটেশন করেন তাহলে আপনার জীবন যাপন হবে আরও সহজ ও উপভোগ্য। মেডিটেশন করুন, আনন্দময় সফল জীবন গড়ুন।



মন্তব্য চালু নেই