মেডিকেল জগতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কিছু অবিশ্বাস্য কীর্তি!!!

গত বিশ-তিরিশ বছরে বিজ্ঞানের কোন শাখায় মানুষ সবচেয়ে সফল হয়েছে? কেউ বলে মেডিকেল, কেউ বলে কম্পিউটার, কেউ বলে ইলেকট্রনিক্স। কিন্তু এক মেডিকেল জগতের অবিশ্বাস্য কিছু কীর্তি মনে হয় সব ছাপিয়ে এ পর্যন্ত মানুষের সেরা কীর্তি হিসেবে স্থান দখল করে নিয়েছে। ‘রাখে খোদা, মারে কে’ প্রবাদের অবদানে হোক, আর মানুষের আপ্রাণ চেষ্টার ফলে হোক, এই ঘটনাগুলো থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়, চিকিৎসাবিজ্ঞান আজকে কতোটা মহীরুহ অবস্থানে পৌঁছেছে।

১. ৩৭ বছর বয়স্ক আলসিডেজ মরেনোর ভাগ্যটা অসম্ভব ভাল বললেও কম বলা হয়। নিউ ইয়র্কের ৪৭ তলা স্কাইস্ক্র্যাপার থেকে মাটিতে পড়েও তিনি বহাল তবিয়তে বেঁচে আছেন! তিনি আর তাঁর ভাই একই সাথে ভবনটির ছাদ থেকে কাজ করার সময় মাটিতে পড়ে যান, তাঁর ভাই সাথে সাথে মারা যায়। কিন্তু টানা তিন সপ্তাহ কোমায় থাকার পর তিনি ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরে পান, এবং তিন বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে হাঁটাচলা শুরু করেন। যে ডাক্তার তাঁর চিকিৎসা করেন, তাঁকে জন হপকিন্স ভার্সিটি থেকে বিশেষ পুরষ্কার দেয়া হয়।

২. ১৭ বছর বয়স্ক টিনেজ মডেল ক্যাটরিনা বার্গেজ তার বিএমডব্লিউ এম৫ গাড়ি নিয়ে প্রায় দেড়শো কিলোমিটার গতিতে একসিডেন্ট করার পরও এখনো মডেলিং করে যাচ্ছে, যদিও একসিডেন্টে তার মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে গিয়েছিল, দুটো ফুসফুসই ফুটো হয়ে গিয়েছিল, পাঁজরের বেশ কয়েকটি হাড় সম্পূর্ণ্ ভেঙে গিয়েছিল, পেলভিস এবং বাঁ পায়ের হাড়ও ভেঙে গিয়েছিল।সার্জনরা তার কোমর থেকে বাঁ পা পর্যন্ত একটা লম্বা রড চারটি টাইটানিয়াম পিন দিয়ে জুড়ে দেন, মেরুদণ্ডকে সাপোর্ট দেয়ার জন্যে ছয়টা রড পিঠে অপারেশন করে বসানো হয়, ঘাড়ে অপারেশন করে টাইটানিয়ামের স্ক্রু দিয়ে তার ভাঙা ঘাড় জুড়ে দেয়া হয়। এবং অতি আশ্চর্যজনকভাবে, মাত্র পাঁচ মাসের মাথায়ই সে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে আবার তার এজেন্সীতে মডেলিং শুরু করে!

৩. ১৪ বছর বয়স্ক ডি’জানা সিমন্স কোন হৃৎপিন্ড ছাড়াই প্রায় চার মাস বেঁচে ছিল! তার অতিরিক্ত বড় হৃৎপিণ্ড ট্রান্সপ্লান্ট করে নতুন একটা হৃৎপিণ্ড বসানো হয়, কিন্তু সেটা ঠিকমতো কাজ না করায় তার শরীরের রক্ত চলাচল প্রায় থেমে যায়। তখন ডাক্তাররা তড়িঘড়ি করে দুটি আর্টিফিসিয়াল পাম্পার বসান, যেটা প্রায় চারমাস তার শরীরে রক্ত সরবরাহ করে, এবং এ সময়ের মধ্যে সিমন্সের শরীরে কোন হৃৎপিণ্ড ছিল না! পরে ডাক্তাররা তার শরীরের উপযোগী করে হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেন।

৪. মার্টিন জোন্স নামক ৪৭ বছর বয়স্ক এক শ্রমিকের মুখের ওপর অ্যালুমিনিয়াম বিস্ফোরণে তিনি তাঁর দুটো চোখই হারান, বাম চোখ সম্পূর্ণ, এবং ডান চোখের লেন্স ঝলসে যায়। তার মুখের ৩৭ ভাগ অংশ পুড়ে যায়। নটিংহাম মেডিকেলের ডাক্তাররা ডোনারের চোখের সাহায্যেও তাঁর ডান চোখের দৃষ্টি ফেরাতে ব্যর্থ হন। এরপর ব্রাইটনের সাসেক্স আই হসপিটালের ডাক্তাররা তাঁর একটা দাঁত খুলে সেটাকে রিশেপ করে কেমিক্যাল মিশিয়ে একধরনের ছাঁচ তৈরি করেন, যেটা বিশেষ ধরনের লেন্স হিসেবে কাজ করে। এর সাহায্যে তিনি আবার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান।

৫. পেং শাওলিনকে একটি লরি চাপা দিয়ে রীতিমতো অর্ধেক করে ফেলে প্রায় দশ বছর আগে। তার শরীরের কোমরের নিচ থেকে বাকি অংশ সম্পূর্ণ থেঁতলে যায়। কিন্তু ২০ জন বিশ্বসেরা সার্জনের আপ্রাণ চেষ্টায় পেং এখনো বেঁচে আছে, এবং সে হাঁটাচলাও করতে পারে! চায়না রিহ্যাবিলিশেন সেন্টারের ডাক্তাররা তার জন্যে একটা ডিমের মতো পাত্র তৈরী করেন, যেখানে তার শরীর বসানো হয় এবং আর্টিফিসিয়াল পা যোগ করা হয়।

৬. ২২ বছর বয়স্ক সুপ্রতীম দত্তের রোড একসিডেন্টে তার বুকের ভেতর প্রায় ৫ ফুট লম্বা লোহার রড ঢুকে যায়। সিঙ্গাপুরের সার্জনদের চেষ্টায় সেই রড সফলভাবে তার বুক থেকে বের করে নেয়া হয়, এবং মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায়ই সে আবার হাঁটাচলার উপযোগী হয়ে ওঠে।

৭. মাত্র ১৭ মাস বয়সেই নিকোলাস হোল্ডম্যান চিরজীবনের মতো তার দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসেছিল।তার দুই ভাইয়ের সাথে খেলার সময় নিকোলাস খাট থেকে উপুড় হয়ে পড়ে যায়, এবং মেঝেতে থাকা চাবির গোছা তার চোখ দিয়ে ঢুকে যায়। সাথে সাথে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়, এবং ডাক্তাররা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করেন চাবিটি নিকোলাসের আইবলের উপর দিয়ে গিয়ে মস্তিষ্কে গেঁথে গেছে! এরপর সফল অপারশনের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে তার চোখ থেকে চাবিটি বের করে নেয়া হয়, এবং মাত্র ছয়দিনের মাথায়ই নিকোলাস সুস্থ হয়ে ওঠে।

৮. পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বয়সে মা হবার অভিজ্ঞতা রজদেবীর। স্বামী বলরামের শুক্রাণুজনিত সমস্যার কারণে ৫০ বছরের সংসারে তাদের কোন সংসার হয়নি। অবশেষে ৭০ বছর বয়সে virtro fertilization এবং intra cycloplasmic sperm নামক দুটো প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি মা হতে সক্ষম হন, এবং বলরামের বয়স তখন প্রায় ৮২! বিভিন্ন রোগাক্রান্ত বৃদ্ধ বলরাম মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছা হিসেবেই সন্তান চেয়েছিলেন, এবং ডাক্তার ও বিজ্ঞানীদের সফল প্রচেষ্টায় তাঁর ইচ্ছা পূরণ হয়েছে!

৯. ৪১ বছর বয়স্ক মিশেল হিল আততায়ীর হাতে ছুরিবিদ্ধ হন ১৯৯৮ সালে। ৮ ইঞ্চি লম্বা ছুরি তাঁর খুলি ভেদ করে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে। সেই অবস্থাতেই তিনি হাসপাতালে যান, এবং আশ্চর্যজনকভাবে, সফল অস্ত্রপচারের মাধ্যমে ডাক্তাররা সেই ছুরি বের করে নিতে সক্ষম হন। তবে তিনি অনেকটাই স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে পড়েন, এবং কখনোই আর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেননি।

১০. ৪৭ বছর বয়স্ক কনি কাল্পকে তাঁর স্বামী পিস্তলে বাঁট দিয়ে আঘাত করায় তাঁর নাক এবং মুখ সম্পূর্ণ থেঁতলে যায়। তাঁর স্বামীর সাত বছরের জেল হয়। নাক, মুখ ও চোয়ালের সব হাড় ভাঙার পাশাপাশি মিসেস কাল্পের ঘ্রাণশক্তি ও মুখ নাড়ানোর ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। ৩০ বার সফল অপারেশনের মাধ্যমে ডাক্তাররা তাঁর পাজরের হাড় থেকে নিয়ে গালের হাড়, এবং পায়ের হাড় থেকে কিছু অংশ নিয়ে চোয়ালের হাড় প্রতিস্থাপন করেন। তারপরও তাঁর পক্ষে নিজে থেকে শ্বাসগ্রহণ কিংবা খাদ্যগ্রহণ সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে ডক্টর মারিয়া সিমানাও এর নেতৃত্বে ওই হাসপাতালে সদ্য মৃত একজন মহিলার মাংসপেশী, নার্ভ, রক্তনালী ও কিছু হাড় নিয়ে ২২ ঘন্টার অস্ত্রপচারের পর মিসেস কাল্পের মুখের সব অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়।

১১. কার একসিডেন্টে জর্ডান টেলরের মাথা ধড় থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন হয়ে যায়, কোন হাড় ছাড়া শুধু মাংপেশী ও চামড়ার সাহায্যে মাথা শরীরের সাথে লেগে থাকে। জর্ডানের বাঁচার সম্ভাবনা ১% ঘোষণা দিয়েই ডাক্তাররা অপারেশন শুরু করেছিলেন, এবং ১৮ ঘণ্টার টানা সফল অপারেশনের পর জর্ডান আবারও সুস্থ হয়ে ওঠে। তার মায়ের অনুরোধে সেই শহরের ২০টিরও বেশি চার্চে তার জন্যে প্রার্থনা করা হয় অপারেশনের সময়।

১২.যদিও আধুনিক মেডিকেলের শ্রেণীতে ১৮৪৮ সালে ঘটে যাওয়া ফিনেস গেগ-এর ঘটনা পড়েনা, তবুও নিঃসন্দেহে একে মিরাকলের জায়গায় স্থান দেয়া যায়, বিশেষ করে তখনকার প্রেক্ষাপটে। নিউমারোলজির ছাত্র-ছাত্রীদের আজও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার উদাহরণ দেয়া হয়। রেলওয়েতে কাজ করার সময় ৩ ফুট ৮ ইঞ্চি লম্বা একটা লোহার শাবল গেগের চোয়াল দিয়ে ঢুকে যায়, এবং মাথার উপর দিয়ে বের হয়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ডাক্তাররা সেই শাবলটি বের করতে সক্ষম হন, এবং গেগ আরো ১১ বছর বেঁচে থাকে, যদিও সে কখনোই সম্পূর্ণ স্বাভাবিক মানুষ হতে পারেনি।

১৩. আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের অন্যতম সেরা কীর্তি ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মগ্রহণ করা লক্ষীর সফল অস্ত্রপচার। চার হাত এবং চার পা নিয়ে জন্মগ্রহণ করা লক্ষীকে নামকরণ করা হয় চার হাত বিশিষ্ট দেবী লক্ষীর নামেই, এবং সব মানুষজন তাকে দেবী লক্ষীরই রূপ ভেবে পূজা করতে থাকে। কিন্তু ডাক্তাররা আবিষ্কার করেন, লক্ষী মূলত একটি জমজ শিশু, যাদের একজনের সম্পূর্ণ রূপান্তর হলেও অন্যজনের হয়নি, এবং সেই অপরজন লক্ষীর শরীরের সাথে fused অবস্থায় রয়েছে। ২৭ ঘন্টার একটানা অপারেশনের পর ডাক্তাররা লক্ষীর শরীর থেকে অতিরিক্ত কিডনি, লিভার, স্পাইনাল কর্ড এবং জননাঙ্গ আলাদা করতে সক্ষম হন। তার অবশিষ্ট নিজস্ব পাকস্থলী, কিডনী, জননাঙ্গ ডাক্তারদের আপ্রাণ চেষ্টায় নার্ভাস সিস্টেম এবং রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ার সাথে কৃত্রিমভাবে যুক্ত করা সম্ভব হয়। এবং আশ্চর্যজনকভাবে, অপারেশনের মাত্র তিনমাস পরই লক্ষী সুস্থ হয়ে ওঠে, এমনকি ওয়াকারের সাহায্যে হাঁটাচলাও করতে পারে।



মন্তব্য চালু নেই