মেঘনা ছাড়িয়ে ইলিশ এখন পদ্মাতেও

চলছে ইলিশের প্রজনন মৌসুম। প্রধানত আগস্ট থেকে অক্টোবর এই তিন মাস মা ইলিশের প্রজননকাল। তাই দেশের ইলিশ রক্ষায় প্রশাসনের তৎপরতায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে চলছে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান, যা শেষ হবে ৯ অক্টোবর। অভিযানের সময়সীমা ১১ দিন থেকে বাড়িয়ে ১৫ দিন করায় সফলতা স্বরুপ মা ইলিশ এখন পদ্মার রাজশাহী পর্যন্ত বিচরণ করছে বলে বাংলামেইলকে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক জাহিদ হাবিব।

স্থানীয় প্রশাসন বিশেষ করে জেলা প্রশাসক, পুলশি সুপার, ম্যাজিস্ট্রেট, র‌্যাব, কোস্ট গার্ড, নৌ পুলশি ও জেলা-উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স নদীতে এবং উপকূলে কঠোর টহল জোরদার রেখে প্রতিদিন অভিযান চালাচ্ছে।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ১১৩টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৫ হাজার ৩০৪টি অভিযান চালিয়ে ৩৩ দশমিক ৬০৭৮ মেট্রিকটন ইলিশ জব্দ করা হয়েছে। এবং ১৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা মূল্যের ৯০ লাখ ১৭ হাজার ২১০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাল আটক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মামলা হয়েছে ১১২৭টি, জরিমানা করা হয়েছে ২৬ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা এবং জেল দেয়া হয়েছে ১১২৩ জন জেলেকে।

অভিযানের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের জাটকা সংরক্ষণ, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং গবেষণা প্রকল্প পরিচালক এবিএম জাহিদ হাবিব এ প্রতিবেদককে বলেন, মূলত তিনটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে আমাদের এ অভিযান পরিচালিত হয় ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে। এর আগে ১১ দিন এ অভিযান পরিচালিত হত ১১ দিন। কিন্তু এবার থেকে সময় বাড়িয়ে ১৫ দিনের অভিযান আমরা পরিচালনা করছি।

সময় বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের কার্যবিবরণী থেকে দেখা গেছে ১১ দিনের অভিযানের পরও মা ইলিশের প্রজনন চলতে থাকে। তাই এবার থেকে আমরা ১৫ দিনের অভিযান চালাচ্ছি। এ নিয়মে তিন থেকে চার বছর দেখবো এবং পরবর্তীতে প্রয়োজনে সময় আরো বাড়ানো হবে।’

আর অভিযানের লক্ষ্য সম্পর্কে জাহিদ হাবিব বলেন, ‘প্রথমত জেলেসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে ইলিশের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার, সংশ্লিষ্ট আইন বাস্তবায়ন এবং জেলেদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যেই আমাদের এই নিয়মিত অভিযান।
তাহলে অভিযানের ১৫ দিন যেসব জেলে ইলিশ ধরা থেকে বিরত আছে।

তাদের জীবিকা কী হবে জানতে চাইলে তিনি জানান, ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া আমাদের এ প্রকল্পের অধীনে আমরা স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ জেলেদের চিহ্নিত করেছি। এবং এবছরের জুন পর্যন্ত ৩২ হাজার জেলেকে তাদের পছন্দমত ১০ হাজার টাকার উপকরণ বরাদ্দ দিয়েছি পূনর্বাসনের লক্ষ্যে। এছাড়াও এ কার্যাবলীর আওতায় ২ লাখ ২৬ হাজার জেলেকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে মাসিক ৪০ কেজি হারে ১৬০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। তবে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় চলমান অভিযানকালীন ক্ষতিগ্রস্থ জেলেদের পূনর্বাসনে কোন উদ্যেগ না নেয়া হয়নি। তবে জানুয়ারির দিকে প্রকল্পটি আবারো চালু হবে। তখন পূর্বের বরাদ্দ বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকার উপকরণ তাদের পূনর্বাসনের জন্য দেয়া হবে।

অভিযানের সফলতার দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই দেশের সব অঞ্চলের মানুষ স্থানীয় নদী থেকেই তাদের ইলিশের চাহিদা পূরণ করতে পারে। আমাদের এই ইলিশ রক্ষা কার্যাবলী শুধু দেশে নয় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। আমাদের অভিযান সফল হতে চলেছে কারণ রাজশাহীর পদ্মাতেও এখন ইলিশের বিচরণ আমরা টের পাচ্ছি। শুধু পদ্মা নয়, মেঘনা, যমুনা, আঁড়িয়াল খা সব নদীতেই আমরা ইলিশের অবাধ বিচরণ দেখতে চাই।’

জেলেরা আমাদের নিয়ন্ত্রণে তবে দেশের ভোক্তাসমাজকে সচেতন হতে হবে যেন জাটকা কেউ না কিনে। তবেই ইলিশে ও পুষ্টিতে সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশ বলে আশা প্রকাশ করেন এই প্রকল্প পরিচালক।



মন্তব্য চালু নেই