মৃত্যুর হাতছানিও উপেক্ষা! ছাইয়ের মধ্যে কোন অমূল্য রতন খোঁজেন এই বাসিন্দারা?

হাওড়ার টিকিয়াপাড়া স্টেশনের কাছেই গত চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রায় ২০০০ মানুষ ছাইয়ের মধ্যে অমূল্য রতন খুঁজে চলেছেন।

কিন্তু ছাইয়ের মধ্যে কোন অমূল্য রতনের খোঁজ করেন এই মানুষগুলো? আসলে ধাতব বস্তু উৎপাদনকারী পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন ঢালাই ঘর থেকে এই অব্যবহৃত ছাই ব্যবসায়ীরা নিয়ে আসেন। এই ছাইয়ের মধ্যেই মিশে থাকে পিতল, কাঁসা, তামা, দস্তার মতো ধাতু। ম্যানহোলের কভার, পেতলের কল-সহ বাথরুমে ব্যবহৃত জিনিস, তামার বাসন বা কলকারখানার সরঞ্জাম তৈরির সময়ে যে ছাইয়ের গুঁড়ো পড়ে থাকে, তাই বস্তাবন্দি হয়ে টিকিয়াপাড়ায় চলে আসে। এই ছাইয়ের দাম বস্তাপ্রতি পাঁচশো থেকে দু’হাজার টাকা পর্যন্ত। ছাইয়ের মধ্যে কী ধরনের ধাতু মিশে থাকে, তার উপরে বস্তা প্রতি দাম নির্ভর করে।

টিকিয়াপাড়ায় এসে পৌঁছানোর পরে ‘গোলাই’, ‘ধোলাই’-এর মতো বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ছাই থেকে ধাতু খোঁজার কাজ শুরু করেন শ্রমিকরা। সবশেষে যতটা সম্ভব ধাতব পদার্থ উদ্ধার করে তা তুলে দেন ব্যবসায়ীদের হাতে। যদিও এই কাজ স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। নাক, মুখ না ঢেকে কাজ করায় অবিরত শরীরের ভিতরে ছাই ঢোকে। ফলে এই শ্রমিকদের অধিকাংশই শ্বাসকষ্টের শিকার। কারো চোখ, কারো চর্মরোগের সমস্যা।

শরীরের ক্ষতি জেনেও এই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন প্রায় দু’হাজার মানুষ। কারণ এছাড়া বিকল্প কোনও পেশা তাঁদের হাতে নেই। দৈনিক রোজগার ২৩০ টাকা। যা আয় হয়, তাতে নিজেদের চিকিৎসা করাও সম্ভব নয়।

নির্বাচন আসে, নির্বাচন যায়। নেতারাও প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেন। কিন্তু বছরের পর বছর অমূল্য রতনের খোঁজ করতে করতে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া এই মানুষগুলিকে নিয়ে হেলদোল নেই কারো।

চিকিৎসকরা বলছেন, এভাবে দীর্ঘদিন কাজ করলে এক সময়ে চলাফেরার ক্ষমতা হারাবেন এই শ্রমিকরা। প্রশ্ন উঠছে, এঁদের জন্য কি সামান্য গ্লাভস, মুখের মাস্কেরও ব্যবস্থা করতে পারে না প্রশাসন?



মন্তব্য চালু নেই