মুখে নারীর ক্ষমতায়ন, কাজের সঙ্গী সৌদি আরব!
নোবেলজয়ী ড. ইউনুসের ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে অনুদান দেওয়া নিয়ে বাংলাদেশিদের কাছে আবারও আলোচনায় এসেছে ড. ইউনুস ও ক্লিনটন ফাউন্ডেশন। অনেকে এই বিষয়টি স্বাভাবিক অনুদান হিসেবে দেখছেন আবার অনেকে এটিকে দেখছেন ভিন্ন চোখে। তাপস সরকার নামে একজন তার ফেসবুকে লিখেছেন, “ড. ইউনুস, আমেরিকায় ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে তার হিলারি ক্লিনটনকে খুশি করতে ২০ কোটি অনুদান দিয়েছেন। অথচ বাংলাদেশে এতো এতো মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলো তাদের জন্য তার পকেট থেকে ২০ টাকাও বের হয় নাই।”
বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি ফলাও করে প্রচার হওয়ার পর ক্লিনটন ফাউন্ডেশন নিয়ে মানুষের কৌতুহল জেগেছে। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ফাউন্ডেশনটি পৃথিবীব্যাপী মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। ফাউন্ডেশনটি প্রতিষ্ঠা করেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। ক্লিনটন পরিবারের পরিচালিত এই ফাউন্ডেশনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অনুদান আসে। ফলে এর তহবিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুইশ কোটি ডলারে।
ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের স্ব-বিরোধিতা
ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ হচ্ছে এটি একটি স্ব-বিরোধী সংগঠন। ডেইলি ওয়্যারের এক প্রতিবেদনে বলা হয় হিলারি তার ক্যাম্পেইনে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বললেও এমন দেশ থেকে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের অনুদান আসে যাদের যেখানে নারীর ক্ষমতায়নের কোনও বালাই নেই। প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে সবচেয়ে বড় অনুদান আসে সৌদি আরব থেকে এক কোটি থেকে আড়াই কোটি টাকা অনুদান দেয়। প্রায় এক কোটি ডলার আসে কুয়েত থেকে আর ৫০ লাখ ডলার দেয় কাতার।
বিশেষ করে সৌদি আরব যেখানে নারীদের সাঁতার, ড্রাইভিং ও খেলারও অনুমতি নেই!
এই বিষয়ে ডেমোক্রেটিক দলের অপর প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন প্রত্যাশী বার্নি স্যান্ডার্স সাংবাদিক জ্যাক ট্যাপারকে বলেন, যদি তুমি আমাকে ক্লিনটন ফাউন্ডেশন নিয়ে জিজ্ঞেস করো, যখন বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার স্বামীর পরিচালিত ফাউন্ডেশন সৈরশাসকদের কাছ থেকে কোটি কোটি ডলার গ্রহণ করে, তখন অবশ্যই আমার সমস্যা আছে।
চলতি বিতর্ক
ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন এফবি আই সম্প্রতি প্রায় ১৫ হাজার ইমেইল প্রকাশ করে। যাতে প্রকাশ করা হয় বিদেশী দাতাদের মধ্যে অন্তত অর্ধেকের সঙ্গে হিলারি ক্লিনটন দেখা করেছেন যা মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে তার করা উচিত হয়নি। এছাড়াও তিনি তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ই-মেইল ব্যবহার করেছেন ফাউন্ডেশনের কাজে যা একেবারেই নীতিবিরুদ্ধ।
এদিকে হিলারি ক্লিনটন ২০০৯ সালে যখন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তখন তিনি হোয়াইট হাউসের এথিকস অফিসিয়ালের কাছে দেওয়ার এক পত্রে শপথ করেন যে, “আমি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্লিনটন ফাউন্ডেশন বা ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটভস সরাসরি পরোক্ষভাবে যুক্ত আছে এমন কোনও কর্মে যুক্ত থাকবো না।”
এফবি আইয়ের মেইলে প্রমাণ হয় যে হিলারি এই নীতি সম্পূর্ণ ভঙ্গ করেছেন। এসব বিতর্ক যখন চলছে তখন হিলারির স্বামী বিল ক্লিনটন ঘোষণা দিয়েছেন যে হিলারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলে ফাউন্ডেশন কোনও বৈদেশিক অনুদান গ্রহণ করবে না। তার এই কথার পর উঠেছে নতুন বিতর্ক। সিএনএনের এক সাংবাদিক প্রশ্ন তোলেন যে তিনি যদি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর কোনোও বৈদেশিক অনুদান গ্রহণ না করেন তাহলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে কীভাবে তিনি গ্রহণ করতে পারেন?
এ বিষয়ে সিএনএন হিলারির একজন প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্পেইন ম্যানেজার রবি মুক কোনও সদুত্তর না দিয়ে ট্রাম্পের বিষদগার করতে শুরু করেন।
ট্রাম্প এই বিষয়টিকে ‘পে-টু-প্লে’ আখ্যা দিয়ে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।
ফাউন্ডেশনটি আসলে কী করে
ফাউন্ডেশনটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে ধন্যবাদসূচক বক্তব্যে বিল ক্লিনটন বলেন, বিশ্বের ৭০টি দেশের এক কোটি ১৫ লাখ মানুষের কাছে আমরা সেবা নিয়ে পৌঁছাতে পেরেছি। এর মধ্যে এইচআইভি/এইডসের ঔষধের দাম ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে আমরা সরবরাহ করেছি।
ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে যত দুর্নীতির অভিযোগ
- হাইতিতে ভূমিকম্প সহায়তার জন্য ক্লিনটন ফাউন্ডেশন যা অনুদান দেয় তার তেমন কোনও কাজেই আসেনি।
- ২০০৯ সালে পিবডি এনার্জির জয়েস আবোসি যিনি ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের ডোনার তিনি হিলারির সঙ্গে দেখা করতে হিলারির সহযোগী হুমা আবেদীনকে অনুরোধ করলে তিনি দেখা করানোর আশ্বাস দেন।
- ২০০৯ সালে গায়ক বনো যিনিও ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের একজন দাতা তিনি ওই বছরের সব শো এর ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের সঙ্গে সংযোগ করানোর আবেদন করেন। সম্প্রতি বনোর এক ভিডিওতে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের এক জ্যোতির্বিধকে দেখা যায়।
- ফাউন্ডেশনের ২০ লাখ ডলার বিল ক্লিনটনের এক বিশেষ বন্ধুকে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
- হিলারির পররাষ্ট্র দফতর যুক্তরাষ্ট্রের ২০ শতাংশ ইউরেনিয়াম রিজার্ব রাশিয়াকে দিতে একটি চুক্তি অনুমোদন করে, কারণ এতে ফাউন্ডেশনের দাতারা লাভবান হবে।
- ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয় হিলারি ১৬৫ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্রচুক্তি করে তার ফাউন্ডেশনের ডোনার দেশগুলোর সঙ্গে।
মন্তব্য চালু নেই