লাল কাপড়ে মোড়ানো রায়ের কপি কেন্দ্রীয় কারাগারে
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মীর কাসেমের রিভিউ আবেদন খারিজের রায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গবেষণা কর্মকর্তা ফাহিম ফয়সাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে লাল কাপড়ে মোড়ানো রায়ের কপি নিয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশে রওনা হন। তিনি রাত ৯টার দিকে কেরাণীগঞ্জের নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছান।
রায়ের কপি গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবীর। তবে মীর কাসেম আলী কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এ আছেন। কারা কর্তৃপক্ষ রায় ও আদেশ পাঠিয়েছে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে।
এর আগে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. মেহেদী হাসান রায়ের কপি ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসেন। এরআগে বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে রিভিউ আবেদন খারিজের ২৯ পৃষ্ঠার রায় প্রকাশ করা হয়।
নিয়মানুযায়ী, এরপর রায়ের কপি বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। রায়ের কপিতে ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর তা কারাগার, ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
কারাগারে রিভিউ আবেদন খারিজের রায়ের কপি মীর কাসেমকে পড়ে শোনানো হবে। এরপর শুধু প্রাণভিক্ষার সুযোগ পাবেন এই মানবতাবিরোধী অপরাধী। প্রাণভিক্ষার বিষয়টি ফয়সালা হয়ে গেলে নির্বাহী আদেশে যেকোনো সময় মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকর করতে পারবে সরকার।
সকালে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) আবেদন খারিজ করে দিয়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
এর ফলে মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকর করতে আইনগত বাধা থাকল না। এখন শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ পাবেন জামায়াতের অর্থ যোগানদাতা হিসেবে পরিচিত প্রভাবশালী এই নেতা।
সকাল ৯টা ৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি বজলুর রহমান।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে মীর কাসেমের পক্ষে অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন- অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা। এ ছাড়া আদালতে বিপুলসংখ্যক আইনজীবী ও দেশি-বিদেশি মিডিয়ার প্রতিনিধি ছিলেন।
এর আগে ২৮ আগস্ট মীর কাসেমের রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। মীর কাসেমের পক্ষে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করেন।
গত ১৯ জুন ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন মীর কাসেম আলী। মোট ৮৬ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১৪টি যুক্তি দেখিয়ে ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চাওয়া হয়। গত ৬ জুন মীর কাসেমের ২৪৪ পৃষ্ঠার ফাঁসির পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
গত ৮ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ ছয়জনকে নির্যাতন করে হত্যার দায়ে মীর কাসেমের ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আপিল বিভাগের সপ্তম রায় এটি।
মন্তব্য চালু নেই