মিতু হত্যার তদন্ত ছাপিয়ে আলোচনায় পারিবারিক দ্বন্দ্ব!
আলোচিত সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ছাপিয়ে এখন আলোচনা শুরু হয়েছে পারিবারিক দ্বন্দ্ব নিয়ে। বাবুল আক্তারের সঙ্গে তার শ্বশুর-শাশুড়ির দ্বন্দ্ব দিন দিন আরও প্রকট হয়ে উঠছে। একসময় মিতুর বাবা-মা বাবুল আক্তারের পক্ষে অবস্থান নিলেও হঠাৎ করেই তারা বাবুল আক্তারকে খুনের দায়ে অভিযুক্ত করছেন। অপরদিকে বাবুল আক্তার অভিযোগ করেছেন, মিতুর খালাতো বোনের সঙ্গে বিয়েতে রাজি না হওয়া এবং বাসা ছেড়ে আসার কারণেই শ্বশুর-শাশুড়ি এমন করছেন। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পারিবারিক দ্বন্দ্বের বিষয়ে তাদের কোনও ভাষ্য নেই। তারা তদন্ত করছেন। তদন্তে যার যার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে অভিযোগপত্রে তাদের নাম উল্লেখ করা হবে। কারও ভাষ্যে তদন্ত প্রভাবিত হবে না।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা আমাদের মতো করে তদন্ত করছি। তদন্তে অগ্রগতি হচ্ছে। কারও কথায় তদন্ত প্রভাবিত হবে না। আমরা সব বিষয় খতিয়ে দেখছি। কোনও কিছুই আমরা বাদ দেবো না। আমরা চেষ্টা করছি নির্ভুলভাবে তদন্তকাজ সম্পন্ন করতে।’
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মিতু হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তার জড়িত কি না তা তদন্ত শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত বলা যাবে না। এই হত্যাকাণ্ডের মামলায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া পুলিশের সোর্স পলাতক মুছাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মুছাকে গ্রেফতার করা গেলেই তাকে কে এবং কেন মিতুকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।
এদিকে বাবুল আক্তারের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলছেন, প্রথম দিকে তারা বাবুলকে সন্দেহ না করলেও এখন তার আচরণে সন্দেহ করতে শুরু করেছেন। কারণ বাবুল যখন বুঝতে পেরেছে তাকে আর এই মামলায় জড়িত বলে কোনও প্রমাণ পাওয়া যাবে না, সেই সময় তার আসল রূপ বেরিয়ে এসেছে। তারা প্রথমদিকে বাবুলকে কিছুটা সন্দেহ করলেও তা মিতুর দুই সন্তানের জীবনের কথা ভেবে বলেননি। এখন আর তারা মুখ বন্ধ করে রাখতে পারছেন না।
একই কথা বলছেন বাবুল আক্তারের শাশুড়ি সাহিদা মোশারফও। তার অভিযোগ, ‘পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার কারণে মিতুকে বাবুল আক্তার মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। পথের কাঁটা দূর করতেই মিতুকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই।’
এক স্বজনের সঙ্গে বাবুল আক্তারের বিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ জানতে চাইলে মোশারফ হোসেন ও সাহিদা মোশারফ বলেন, তাদের ঘরে কোনও অবিবাহিত তরুণী নেই। বাবুল আক্তারের এই অভিযোগ মিথ্যা। সে নিজে বাঁচতে এসব গল্প ফেঁদেছে।
এদিকে গত সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বাবুল আক্তার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে অভিযোগ করেছেন, শ্বশুরের বাসা থেকে চলে আসা ও খালাতো শ্যালিকাকে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় তার শ্বশুর-শাশুড়ি তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। মিতু হত্যাকাণ্ডের ৯ মাস পার হওয়ার পর যে অভিযোগ তুলেছেন তার কোনও ভিত্তি নেই। এসব অভিযোগের সত্যতা থাকলে আগেই তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে পারতেন।
বাবুলকে ফের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে
মিতু হত্যা মামলার বাদী সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। বুধবার (১ মার্চ) সন্ধ্যায় তিনি বলেন, মামলার বাদী হিসেবে বাবুল আক্তারের সঙ্গে তার ফোনে প্রায়ই কথা হয়। তবে শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রামের গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত কর্মকর্তা। এসময় তাকে মিত্যু হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
উল্লেখ্য, গত বছর ৫ জুন চট্টগ্রাম মহানগরীর জিইসি মোড় এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে নিহত হয় এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাত তিন জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। প্রথমদিকে জঙ্গি হামলা বা বাবুল আক্তারের সঙ্গে শত্রুতার কারণে কেউ মিতুকে হত্যা করে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। তবে ২৪ জুন বাবুল আক্তারকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে প্রায় ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর থেকেই গণমাধ্যমে মিতু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ হতে থাকে। এমনকি বাবুল আক্তার পুলিশ সুপার পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর এই অভিযোগ আরও জোরালো হতে থাকে।-বাংলা ট্রিবিউন
মন্তব্য চালু নেই