মা-বাবার পাশে সমাহিত হলেন দিতি

জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পারভিন সুলতানা দিতির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। পৈতৃক বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের দত্তপাড়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা ও মায়ের পাশেই সমাহিত হলেন নব্বই দশকের জনপ্রিয় এই নায়িকা।

এর আগে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা থেকে সোনারগাঁও উপজেলার দত্তপাড়ার বাড়িতে আনা হয় দিতির মরদেহ। সেখানে বাদ জোহর স্থানীয় মসজিদ মাঠে দিতির নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।

দিতির জানাজায় তার আত্মীয় স্বজনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেন। শামিল হন এলাকার সবর্বস্তরের জনগণ।

এদিকে দিতিকে শেষবারের মতো দেখার জন্য শত শত মানুষ আজ সকাল থেকেই দিতিদের বাড়িতে হাজির হতে থাকেন। এলাকাটি রীতিমত জনসমুদ্রে পরিণত হয়। অবশেষে দুপুর সাড়ে ১২টায় দিতির লাশ এসে পৌঁছায়। এসময় দিতির আত্মীয় স্বজনসহ এলাকার সর্বস্তরের মানুষের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে দত্তপাড়ার বাতাস।

দিতির মৃত্যুতে স্থানীয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও সমবেদনা জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আশির দশকে বাংলা চলচ্চিত্রে পা রাখেন দিতি। নারায়ণগঞ্জের ঐতিহাসিক সোনারগাঁওয়ের পৌর এলাকার দত্তপাড়া গ্রামের মেয়ে দিতি ছোট বেলা থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। দিতি ছাড়াও তার বড় ভাই মনির হোসেন ও পারভেজ দুজনেই গান গাইতেন। ছোট বোন নাসরিন এক সময় মডেলিং করতেন। আরেক ভাই আনোয়ার ছবি আঁকার সাথে জড়িত।

সোনারগাঁওয়ের দিতির পরিবার সাংস্কৃতিক পরিবার হিসেবে পরিচিত। সাংস্কৃতিক বলয়ে বেড়ে ওঠা দিতি ছিলেন সোনারগাঁওয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক প্রিয় মুখ।

১৯৭৪ সালে দিতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেড়িয়ে ভর্তি হন সোনারগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ সোনারগাঁও জি আর ইনস্টিটিউশনে। এখানে পড়াশুনার পাশাপাশি দিতি নিয়মিত গান গাইতেন। ১৯৭৯ সালে সোনারগাঁও জি আর ইনস্টিটিউশন থেকে এস এস সি পাশের পর দিতি পড়াশুনার সুবাদে চলে যান ঢাকায়। সেখানে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে গান গাওয়ার পাশাপাশি অভিনয়ে জড়িয়ে পড়েন।

এক সময় নায়িকা হিসেবে শক্ত অবস্থান দখল করেন বাংলা চলচ্চিত্রে। একের পর এক ব্যবসা সফল ছবির মাধ্যমে দিতি জয় করে নেন দশর্কের হৃদয়। বাংলা চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়লে তিনি স্বেচ্ছায় বাংলা চলচ্চিত্র থেকে দূরে সওে আসেন। সর্বশেষ তিনি টিভি নাটকের সাথে জড়িত ছিলেন।

২০১৫ সালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার মস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়ে। এরপর ২৫ জুলাই তাকে ভারতের চেন্নাই নিয়ে যাওয়া হয়। ২৯ জুলাই ভারতের চেন্নাইয়ে মাদ্রজা ইন্সটিটিউট অব অর্থোপেডিকস অ্যান্ড ট্রমাটোলজিতে (এমআইওটি) দিতির মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়।

গেল ২০ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে আসেন দিতি। চেন্নাই থেকে ফিরে আসার পর বাসায় ছিলেন তিনি। অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় ৩০ অক্টোবর তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঢাকায় ফিরে বেশ কিছুদিন সুস্থ ছিলেন। এরপর মস্তিষ্কে পানি জমায় আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। দ্রুত দিতিকে দ্বিতীয়বারের মতো চেন্নাইয়ে নেয়া হয়। ৩ নভেম্বর আবারো তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হয়। এরপর ক্রমেই তার অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।

দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পারভিন সুলতানা দিতি ২০ মার্চ রোববার বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।



মন্তব্য চালু নেই