মালয়েশিয়ায় পেশাদার ভিসায় কর্মহীন বাংলাদেশিরা
গত এপ্রিলে জোহান এসডিএন বিএইচডি কনস্ট্রাকশন কোম্পানির অধীনে মালয়েশিয়ায় যান জামালপুরের রুহুল আলম। স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে দেশে একটি ওষুধ কোম্পানির মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করতেন তিনি। বেতন ও কমিশনসহ আয় ছিল মাসে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। বড় ভাইয়ের বন্ধু জুবায়েরের প্ররোচনায় মালয়েশিয়ায় আসেন তিনি। ক্যাটাগরি-১ এ প্রফেশনাল ভিসায় ওই কোম্পানিতে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগের কথা ছিল তার। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশি টাকায় বেতন হবে এক লাখ।
তবে মালয়েশিয়ায় পৌঁছেই সর্বনাশটা বুঝতে পারেন রুহুল। পুরো ৪৮ ঘণ্টা এয়ারপোর্টে কাটানোর পর হামিদ নামে এক বাংলাদেশি তাকে আমপাংয়ে নিয়ে যান। বাংলাদেশ থেকে জুবায়ের ফোনে জানান, অাপাতত ওই কোম্পানিতে ম্যানেজারের পদ শূন্য নেই, আপাতত আরেকটি কোম্পানিতে কাজ করার জন্য।
জোহরবারুতে নিয়ে গিয়ে একটি কাঁচ তৈরির কারখানায় শ্রমিকের কাজ দেওয়া হয় রুহুলকে। যেখানে ভারি মেশিনপত্র চালাতে হতো এবং বেতন ছিল বাংলাদেশি টাকায় ২০ হাজার টাকা। আর থাকতে হতো একই রুমে ১২ থেকে ১৫ জন। এরপর গত জুনে দেশে ফিরে আসেন তিনি।
মালয়েশিয়ায় এভাবেই রুহুলের মতোই আরো অনেক বাংলাদেশি পেশাদার ভিসায় গিয়ে হচ্ছেন প্রতারণার শিকার। আবার অনেকেই কর্মহীন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ কমিউনিটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত ২০১২ সালে বেসরকারি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানি বন্ধ হলে এক শ্রেণির অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সি এ পেশাদার ভিসা ও ডিপি-১০ ভিসায় মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো শুরু করে। এজন্যে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ করতে হয় (এক বছরের ভিসার জন্য)।
এ প্রক্রিয়ায় প্রথমে ট্যুরিস্ট ভিসায় মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর মালয়েশিয়ান কোম্পানির অধীনে পুত্রজায়া থেকেই ভিসা নেওয়া হয়। এছাড়াও বাংলাদেশ থেকেও কোম্পানির নিয়োগপত্র এনে এ ভিসা নেওয়া যায়। কেননা পেশাদার এ ভিসার মাধ্যমে চিকিৎসক, প্রকৌশলী বা অন্য পেশার দক্ষ মানুষেরা যেতে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র প্রয়োজন হয় না। আর বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে চুক্তি করে অর্থের বিনিময়ে এদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
মালয়েশিয়ায় অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ক্যারাম এশিয়ার আঞ্চলিক সমন্বয়ক হারুণ-অর-রশিদ বলেন, রুহুলের মতো ছেলেরা প্রতারিত হয়ে এখানে এসে ক্লিনার, পেট্রোল পাম্প বা নির্মাণ সাইটে কাজ করতে হচ্ছে। এক শ্রেণির দালালরা যোগ্যতা সম্পন্ন ছেলেদের মালয়েশিয়ায় এনে ফাঁদে ফেলছেন। বাংলাদেশিদের বিদেশমুখী দুর্বলতাও এজন্য দায়ী, বলেন তিনি।
ডিপি-১০ ও পেশাদার ভিসায় কতো বাংলাদেশি রয়েছে তার কোনো হিসেব কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে পাওয়া যায়নি।
শুধু প্রতারণা ছাড়াও অনেক বাংলাদেশি জেনে বুঝে এ ভিসায় মালয়েশিয়া গিয়ে এখন আর কাজ পাচ্ছেন না। কেননা নামকাওয়াস্তে কোম্পানিটির কোনো কাজ আসলে নেই। শুধুমাত্র অফিস দিয়ে ভিসা ব্যবসা করা হয়।
এভাবে বেকার থাকা শ্রমিকের কর্মক্ষেত্রের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে গত রোববার জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর বহির্গমন শাখা থেকে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনে ই-মেইল বার্তা পাঠানো হয়েছে।খবর বাংলানিউজের।
মন্তব্য চালু নেই