মারুতি গাড়িতে করে ফেলে যাওয়া হয় সালাহ উদ্দিনকে

ভারতের মিডিয়ায় বিশেষ করে মেঘালয়ের কয়েকটি পত্রিকায় বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে পাওয়া যাওয়ার খবরটি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে। বুধবার দ্য শিলং টাইমস ছাপা সংস্করণের প্রথম পৃষ্ঠায় ছয় কলামজুড়ে বক্স করে প্রধান শিরোনাম হিসেবে প্রকাশ করা হয় সালাহ উদ্দিন আহমেদের খবর। দ্য মেঘালয় গার্ডিয়ান ও মেঘালয় টাইমস জানায়, অজ্ঞাতপরিচয় লোকজন শিলংয়ের গলফ লিংক এলাকায় একটি মারুতি জিপসি গাড়ি থেকে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যায়। প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে ভারতের মেঘালয়ের পত্রিকাগুলো এ কথা জানিয়েছে।

আটক করার পর সালাহ উদ্দিন শিলংয়ের পুলিশকে বলেন, ‘আমাকে ঢাকার উত্তরার বাসা থেকে অপহরণ করে বন্দী রেখেছিল। আমাকে সব সময় চোখ বেঁধে রেখেছিল। একটি গাড়িতে করে তারা আমাকে নিয়ে এসে ফেলে যায়। আমি তাদের কিছুই দেখতে পাইনি।’

দীর্ঘ দুই মাস পর গত সোমবার সকালে শিলংয়ে বিএনপির এই নেতার দেখা পাওয়া যায়। এখন তিনি পুলিশের হেফাজতে শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ভারতে অনুপ্রবেশের কারণে ফরেনার্স অ্যাক্টে তাঁর বিরুদ্ধ মামলা হয়েছে।

দ্য শিলং টাইমস জানিয়েছে, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবকে মিমহানস নামের মানসিক হাসপাতাল থেকে আবার শিলং সিভিল হাসপাতালে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কারণ চিকিৎসকরা বলেন, তাঁর মানসিক কোনো সমস্যা নেই। ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা হলেও হাসপাতালে থাকায় তাঁকে এখনই আদালতে ওঠানো যাচ্ছে না।

চিকিৎসকরা বলেছেন, সালাহ উদ্দিনের হৃদরোগ ও কিডনি-সংক্রান্ত জটিলতা ছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই। তিনি মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ আছেন। দ্য শিলং টাইমস আরো উল্লেখ করে, সালাহ উদ্দিনকে পাওয়া গেছে, মঙ্গলবার এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর হাসপাতালে সংবাদকর্মীদের ভিড় জমে। পত্রিকা অফিসের বাংলাদেশ থেকে প্রচুর ফোন যায়।

আটকের পর মেঘালয়ের পুলিশপ্রধান জানান, ‘সাতসকালে ভদ্রলোক উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন শিলং গলফ ক্লাবের সামনে রাস্তায়। চোখের চাহনিও একটু অদ্ভুত। যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছেন। পাজামা-পাঞ্জাবি পরা, এলাকায় অপরিচিত ওই ভদ্রলোকের সন্দেহজনক গতিবিধি দেখে স্থানীয়রাই পুলিশে খবর দেন।’
সোমবার ভোরে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে কীভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিক সালাহ উদ্দিন আহমেদকে পাওয়া গেল, এ ব্যাপারে ইস্ট খাসি হিলসের পুলিশ সুপার এম খারক্রাং বলেন, ‘মেঘালয় পুলিশ সার্ভিসে দীর্ঘ কর্মজীবনেও এমন ‘কেস’ খুব কমই পেয়েছি’, হাসতে হাসতে বলছিলেন এই অভিজ্ঞ পুলিশকর্তা।

আসলে সোমবার ভোর থেকেই এই এক ‘অচেনা ব্যক্তি’ শিলংয়ের পুলিশকে যেভাবে নাজেহাল করে রেখেছেন, তেমন অভিজ্ঞতা তাদের আগে হয়নি বললেই চলে। যখন গলফ ক্লাবের সামনে অচেনা লোককে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন, তখন সেখান দিয়েই যাচ্ছিল পুলিশ পেট্রলের একটি জিপ। টহলদার বাহিনী লোকটিকে ধরে নিয়ে কাছেই শিলংয়েন প্যাসটিওর বিটহাউস থানাতে নিয়ে যাওয়ার পরেই নাটকের শুরু!

নাটক, কারণ ওই ভদ্রলোক থানায় গিয়েই বলতে শুরু করেন, ‘দেখুন আমি কিন্তু বাংলাদেশের একজন ভিআইপি। আমি সে দেশে ক্যাবিনেট মিনিস্টারও ছিলাম!’ এদিকে ভদ্রলোকের পকেটে একটা কাগজ পর্যন্ত নেই। কোনও টাকাপয়সা দূরে থাক, পকেটে একটা মানিব্যাগও নেই, ফলে যথারীতি শিলংয়ের পুলিশ প্রথমে তার কথা একেবারেই বিশ্বাস করেনি, পাগলের প্রলাপ বলেই উড়িয়ে দিয়েছিল।

‘আচ্ছা বুঝলাম আপনি বাংলাদেশে মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু বর্ডার পেরিয়ে আপনি শিলং অবধি এলেন কী করে?’

পুলিশের এই প্রশ্নের জবাবে ভদ্রলোক আবার ফ্যালফ্যাল করে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন, মুখে কোনও কথা জোগায় না। ওনার অবস্থা দেখে থানাতেই সিদ্ধান্ত হয় ইনি নিশ্চয় মানসিক ভারসাম্যহীন, আর তারপরই পুলিশ তাকে শিলংয়ের মিমহ্যানসে (মেঘালয় ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল অ্যান্ড নিউরোলজিক্যাল সায়েন্স) ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করে। মিমহ্যানস শিলংয়ে মানসিক প্রতিবন্ধীর হাসপাতাল বলেই পরিচিত। সালাহ উদ্দিন আহমেদের গতি হয় সেখানেই।

‘তবে একটা কথা কী, ভদ্রলোক বাংলাদেশি কি না কিংবা সালাহ উদ্দিন আহমেদ কি না সেটা কিন্তু আমরা এখনও নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। ওনার কাছে কোনও কাগজপত্র নেই। ওর কোনও আত্মীয় পরিজন এসে ওকে এখনও চিহ্নিতও করেননি। ফলে আপাতত ওনাকে একজন বিদেশি নাগরিক বলে চিহ্নিত করে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করার জন্য ফরেনার্স অ্যাক্টে আমরা রীতিমাফিক মামলা রুজু করেছি’, জানাচ্ছিলেন পুলিশ-প্রধান এম খারক্রাং।
তাহলে কীভাবে জানা গেল সালাউদ্দিন আহমেদ শিলংয়ের হাসপাতালে ভর্তি আছেন?

আসলে মিমহ্যানসে ডাক্তারদের চিকিৎসায় গতকাল রাত থেকেই অল্প অল্প করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার লক্ষণ দেখাতে শুরু করেন তিনি। তারপর আজ সকালে তিনি মিমহ্যানসের ডাক্তারদের জানান, ঢাকায় তার স্ত্রীর টেলিফোন নম্বর তার মনে পড়েছে– সেখানে তিনি ফোন করে কথা বলতে চান। এরপরই তিনি ঢাকায় স্ত্রী হাসিনা আহমেদকে ফোন করে জানান, তিনি ভাল আছেন, মেঘালয়ের একটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।



মন্তব্য চালু নেই