মান্না-খোকার কথোপকথন ফাঁস : আন্দোলন বানচাল করার ষড়যন্ত্র নয়তো?

ঢাকার সাবেক মেয়র এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ।২৯ ডিসেম্বর ২০১৩ এর মার্চ ফর ডেমোক্রেসী ভেস্তে যাওয়ার জন্য জনাব খোকা অনেকাংশ দায়ী বলে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব সহ সকলে মনে করেন।

কে না জানে প্রবল প্রস্তুতি থাকা সত্বেও শুধু মাত্র খোকার সন্দেহজনক নিস্পৃহতার কারনেই বিএনপির এ কর্মসূচী সফলতার মুখ দেখেনি।তার পর থেকেই নিস্ক্রিয় খোকা ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র গমন করেন এবং এখনও সেখানেই অবস্থান করছেন।

তার ভাষ্যমতে তিনি গুরতর ক্যান্সারাক্রান্ত এবং যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি সহ ক্যান্সারের চিকিৎসা করাচ্ছেন,যদিও তার বর্তমান শারিরিক অবস্থা এবং ব্যস্ততা দেখলে তার দাবী বিশ্বাস করা কঠিন বৈকি।কারন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসে এমন কিছু কার্যকলাপ করেছেন যা কিনা প্রাকান্তরে বিএনপির বিরুদ্ধেই গিয়েছে এবং আওয়ামী লীগ সরকারকে সহায়তা করেছে বলে আমরা মনে করি।

প্রথমতঃ ৬ জন কংগ্রেসম্যানের বিতর্কিত বিবৃতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপির দুজন উপদেষ্টা ড.মুজিবুর রহমান মজুমদার এবং জনাব জাহিদ এফ সরদার সাদীকে তৎক্ষনাৎ পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ানোয় তার দৌড়ঝাপ অত্যন্ত দৃষ্টিকটু লেগেছে।আত্মপক্ষ সমর্র্থনের কোন সুযোগ না দিয়ে এই করিৎকর্মা দুজন উপদেষ্টাকে দল থেকে বাদ দিয়ে কার স্বার্থ রক্ষা করেছেন খোকা তা বুঝতে আজ আর বাকি নেই।

এর পর তিনি একটি সম্পূর্ন বানোয়াট খবর ছড়ান যে তাকে আন্দোলন সংগঠিত করার বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন দেশনায়ক তারেক রহমান,যেখানে আসল খবর হলো বার দুয়েক লন্ডনে গিয়েও জনাব তারেক রহমানের সাক্ষাতই পাননি তিনি ,কোন দ্বায়িত্ব প্রাপ্তির তো প্রশ্নই উঠেনা।বিএনপির চলমান আন্দোলন বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীর আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের বিভ্রা্ন্ত করার জন্যই এই অসত্য সংবাদ প্রচার করিয়েছেন জনাব খোকা।

তৃতীয়ত সম্পতি নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির এক সংবাদ সম্বেলনে তার কিছু বক্তব্যে সমালোচনার ঝড় ওঠে এবং কিছুটা বেকায়দায় পড়ে যায় বিএনপি।তিনি বলেন সংলাপ শুরু হওয়ার সাথে সাথে সব নাশকতা বন্ধ হয়ে যাবে এবং চাইলে মাত্র ১ ঘন্টার মধ্যে ঢাকা শহর অচল করে দিতে পারেন তিনি।যেখানে অব্যাহত সরকারী প্রচার প্রচারনার মুখে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বার বার বলে আসছেন বিএনপির আন্দোলন সংগ্রাম সম্পূ্ন শান্তিপূর্ন এবং কোন নাশকতামূলক কর্মকান্ড বিএনপি করছে না এবং করবেও না।এমতাবস্থায় দলের একজন সিনিয়ার নেতা হিসাবে বিদেশে বসে আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমে এহেন বক্তব্য আওয়ামী সরকারের কাছে মেঘ না চাইতেই জলের মতো নয় কি?

সবশেষে আজকের আলোচ্য বিষয় জনাব মান্নার সঙ্গে তার ভাইবার সংলাপ।বিষয়বস্তু যাই হোক আমরা সকলই জানি জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম ভাইবার ট্রাকিং করে রেকর্ড করা অসম্ভব না হলেও অত্যন্ত কঠিন একটা ব্যাপার ।এধরনের সংলাপে অংশগ্রহনকারী দুজন বা একজন ছাড়া এই কথোপকথন রেকর্ড করা প্রায় অসম্ভব।সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও হালের নাগরিক ঐক্য আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না দেশে থাকায় এই ফোনালাপ ফাঁস হওয়ায় তার বিপদের সম্ভাবনাই বেশী এবং ইতিমধ্যে তাকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।বাকি থাকলেন জনাব খোকা।আমাদের ধারনা বিএনপির আন্দোলন এবং সমদাবীতে যুগপথ আন্দোলনরত দল সমূহের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্থ করতেই এই ফোনালাপ রেকর্ড করে প্রচার করা হয়েছে।একই সাথে অধিক নিরাপদ মাধ্যম ভাইবারের নিরাপত্তা দূর্বলতা প্রমান করে বিরোধী নেতাকর্মীদের ভাইবার ব্যবহারে ভীত সন্ত্রস্থ করে তোলা এর একটি লক্ষ্য বলে আমরা মনে করি।

এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক বৈদেশিক উপদেষ্টা এবং বিশেষ দূত জনাব জাহিদ এফ সরদার সাদী বলেন,’বিএনপি আন্দোলনে নাশকতা এবং সহিংসতার কোনো স্হান নেই।তাই এধরনের ফোনালাপ ফাঁস অথবা বিতর্কিত বক্তব্য প্রদান দলের আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তিকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে,এহেন কার্যকলাপে সরকারে হাত থাকতে পারে;আমাদের উচিৎ হবে না এভাবে বিদেশ থেকে বিভিন্ন মন্তব্য করে আলোচনা সমালোচলার সৃষ্টি করা’।

আমাদের অনুরোধ বিদেশে অবস্থান রত বিএনপির প্রথম সারীর নেতাদের প্রতি তারা যেনো তেনো ভাবে মন্ত্যব্য বক্তব্য দিয়ে বিভিন্ন বিতর্কের সৃষ্টি না করেন এবং দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অটল থাকেন,।ভাইবার ফোনালাপে অংশগ্রহনকারী জনাব খোকার বক্তব্য একান্তই তার নিজস্ব এবং এর দায়-দায়িত্ব বিএনপি নিতে যাবে কেনো?

খোকা-মান্না ফোনালাপের বিবরনীঃ

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকাকে রাজনৈতিক পরামর্শ দিচ্ছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। সাবেক ছাত্রলীগ ও ডাকসু নেতা মান্না বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ‘এলার্জেটিক’ অবস্থানে আছেন জানিয়ে খোকাকে টেলিসংলাপে বলেন, আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যান। আমি টক শোতে নানা কথা বলছি, আর মাঝে সমাবেশও করেছি। মিছিল-সমাবেশের মাধ্যমে আমরা যদি ব্রেক থ্রু দিতে পারি, আপনারা পেছন পেছন নামতে পারবেন। সরকার এখন সুতার ওপর চলছে। যেকোনো মূল্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারলে সরকার সংকুচিত হয়ে পড়বে বলেও মান্না মন্তব্য করেন। পুলিশি অভিযান নিয়ে খোকা কিছুটা শঙ্কার কথা বললে মান্না বলেন, ‘…..গেল ২/৩টা, কী করা যাবে?’

আলোচিত এ টেলিফোন কথোপকথনের রেকর্ড কপি এখন ছড়িয়ে গেছে রাজনৈতিক মহলসহ অনেকের নাগালে। নানা সূত্রে এ কথোপকথনের সত্যতাও নিশ্চিত হওয়া গেছে।

কথোপকথনের বেশির ভাগজুড়েই রয়েছে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি ও ছাত্রদলের করণীয় বিষয়ে মান্নার দিকনির্দেশনা। একপর্যায়ে মান্না নাগরিক ঐক্যের আগের সমাবেশে লোক পাঠানোর জন্য সাদেক হোসেন খোকাকে ধন্যবাদ জানান। এ পর্যায়ে মান্না নাগরিক ঐক্য একটি গণমিছিলের আয়োজন করতে যাচ্ছে জানিয়ে এতে খোকাকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান। আজ (সোমবার) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মতিঝিলমুখী এ গণমিছিলে কত মানুষ থাকবে তা নিয়েও কথা বলেন তিনি।

রবিবারের এ টেলিসংলাপ সূত্রে জানা যায়, আমেরিকায় তখন রাত সাড়ে ১০টা। ফোনটি করেন মান্না নিজেই। সাদেক হোসেন খোকার আছে জানতে চান, শরীর ভালো আছে কি না। … রাত সাড়ে ১০টার সময় ফোন করায় বিরক্ত হচ্ছেন কি না জানতে চান মান্না। জবাবে খোকা বলেন, আমি তো রাত ২টার আগে ঘুমাতে যাই না।’

কুশল বিনিময়ের পরপরই মান্না রাজনৈতিক আলাপ শুরু করেন। সাদেক হোসেন খোকাকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে মান্না বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা তো এখন বলা যায় না। তবে কূটনীতিকরা যেভাবে বলছেন, কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। প্রতিবেশীদের দৃষ্টিভঙ্গিও বেশ পরিবর্তন হচ্ছে। আমি খবর পাচ্ছি। এই মুহূর্তে দরকার মাঠে যাওয়া। আপনাদের অসুবিধা বুঝতে পারছি। তবু চেষ্টা করছেন আপনারা।’

টেলিসংলাপে কয়েক দফা খোকার কথা শুনতে পাচ্ছিলেন না মান্না। তা জানালে খোকা আবার বলা শুরু করেন। বিএনপির চলমান আন্দোলন জেলা পর্যায়ের নেতাদের মাধ্যমে কতটা ধরে রাখা যাবে, তা নিয়ে কিছু সংশয় প্রকাশ করে খোকা বলেন, দেড় মাস হয়ে গেল, ওরা নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। মান্না বলেন, না খোকা ভাই এটা ‘কনটিনিউ’ করতেই হবে। কনটিনিউ করলে কী হবে? জানতে চান খোকা। তখন মান্না বলেন, “মাঝে যে ‘গ্রে এরিয়া’ আছে সেখানে আমাদের নামতে হবে। আমাদের বলতে সিপিবির অবস্থা অনেকটা এদিকে, অনেকটা ওদিকে। আমরা যারা আছি কজন, তাদের মধ্যেও দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। যারা নেই তাদের টানতে হবে। মাঝে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে প্রোগ্রাম আমি করেছি, তাতে অন্যরা চাঙ্গা হয়েছে। পাবলিক রেসপন্স ভালো হয়েছে। আমাদের তুলনায় এ প্রোগ্রামের রেসপন্স খুবই ভালো ছিল। আপনি যাদের যাদের বলেছিলেন, তারা আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। আমি ২৩ তারিখে গণমিছিল করতে চাইছি। এটি ঘোষণা করার আগে ভাবলাম আলাপ করি। মানুষের রাস্তার ভয়টা ভাঙানো দরকার। তাদের নামাতে হবে। মনে করছি মিছিলটা করতে পারব, পুলিশ বাধা দেবে না। দিলেও আমরা থাকব। আমি আপনার সাপোর্ট চাইছি, কমিটেড লোক আনতে হবে, আর পাবলিসিটি করতে হবে। মানুষ জানবে লোক আছে। আপনার লোকজনকে বলেন, এ প্রোগ্রামে তোমরা অংশ নেবে। মিছিলে ১০ হাজার লোক হলে সাড়া পড়ে যাবে, কিন্তু আমি তো পারব না। মিছিলের ব্যানার যেটাই হোক, সেখানে তো বিরোধীদের সমালোচনা করা হবে না। স্লোগান দেব- শান্তি ও সংলাপের দাবিতে।’

টেলিভিশনের টক শোতে নিজের অবস্থান জানান দিয়ে মান্না বলেন, ‘টক শো এখন আমরা ডমিনেট করি…ওরা রাফলি চেষ্টা করেছে। টক শো খুব ম্যাটার করে।’ দুজনের নাম উল্লেখ করে মান্না খোকাকে বলেন, ‘এ রকম চার-পাঁচজন লোক আপনি তৈরি করেন…। গতকাল আরটিভির টক শোতে ছিলাম, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনেও বলেছি। গোড়াটা তো ৫ জানুয়ারি।’

সরাকারের অবস্থান জানাতে গিয়ে মান্না বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমার ওপর ‘এলার্জিক’ হয়ে আছেন। ভাবছেন, ড. কামাল এসব করতে পারবে না, যা করার আমিই করছি। ভাইবার বলে এত কথা বলছি, না হলে ওরা তো নজরদারি করছে। অনেকেই আমাকে সতর্ক করছে।”

কূটনৈতিক চাপ আরো বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে মান্না বলেন, ‘জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকান অ্যাম্বাসাডরের কথা সূক্ষ্মভাবে দেখলে বুঝবেন তারা সংলাপের কথা বলছেন। সাথে যদি ইন্ডিয়াকে যুক্ত করতে পারেন ভালো হয়। বন্ধুদের পরিবর্তন হচ্ছে।’

সহিংসতা সত্ত্বেও আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে মান্না বলেন, ‘আপনাদের প্রত্যাহার করার সুযোগ নেই। এতগুলো মানুষ পেট্রলবোমায় মরেছে, তাতে মানুষ বিরক্ত হলেও ভাবছে না, বিএনপি খারাপ করছে, ওদের দমন করে ফেলো।’

সার্বিক পরিস্থিতিতে বিএনপি ডাকলে গুলশানে গিয়ে কথা বলবেন কি না জানতে চান খোকা মান্নাকে বলেন, ‘ম্যাডাম ফোন করলে, অফিস থেকে বললে আপনারা যাবেন?’ জবাবে মান্না বলেন, ‘কামাল সাহেব রাজি হবেন বলে মনে হয় না।’

আন্দোলনকে নতুন মাত্রা দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখলসহ কর্মকাণ্ড বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে মান্না বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চাঙ্গা করতে হবে। যদি পারা যায়, মিছিল করতে হবে। আগেও বলেছি, দু-তিনটি হল দখল করেন। কিন্তু তারা বলেছে ছাত্রদলের ও-রকম শক্তি নেই। এ পর্যায়ে খোকা বলেন, ছাত্ররা ছাত্রদের সঙ্গে লড়াইতে হয়তো কুলাতে পারবে। কিন্তু পুলিশ ঢুকে অনেক কিছু করতে পারে। বড় ধরনের ঘটনা ঘটবে জানাতেই মান্না বলেন, গেল দুই-তিনটা, কী করা যাবে…। ‘বড় কিছু’ ঘটলেই সরকারকে সংকুচিত করে ফেলবে। সরকার এখন সুতার ওপর চলছে। মাহমুদুর রহমান মান্না এ ছাড়া রাাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আরো অনেক পরামর্শ দেন সাদেক হোসেন খোকাকে। আগেও যোগাযোগ ছিল জানিয়ে মান্না আশ্বস্ত করেন, আগামী দিনেও যোগাযোগ রাখবেন।

প্রতিবেদকঃ  সম্পাদক,  দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ



মন্তব্য চালু নেই