মান্নাকে জুতাপেটা করবে নারায়ণগঞ্জ ছাত্রলীগ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিলে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নারায়ণগঞ্জে ছাত্রলীগকর্মীরা জুতাপেটা করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা।

রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসেনর সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও নারায়ণগঞ্জে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে উদ্দেশ করে খোকন সাহা বলেন, ‘মান্না যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে টেলিভিশনের কোনো টকশোতে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রাখেন এবং এরপর যদি তিনি নারায়ণগঞ্জে আসনে তাহলে নারায়ণগঞ্জের ছাত্রলীগকর্মীরা তাকে জুতাপেটা করবে।’

ক্ষমতাসীন দলের সাবেক নেতা মান্নার তীব্র সমালোচনা করে খোকন সাহা প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে দলের সভাপতির স্ত্রীকে জড়িয়ে বির্তক সৃষ্টি হয়, যিনি ১৯৮১ সালের এই শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে জাসদ ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে আ স ম আবদুর রবের নির্দেশে ব্যাংক ডাকাতি করেছিলেন বলে স্বীকার করে বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি আজ সুশীল হন কীভাবে।’

জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মান্নার সমালোচনা করে বলেন, ‘বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোতে মাহমুদুর রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কুরুচীপূর্ণ বক্তব্য দেন। সেই মান্নাকে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে এসেছে এস এম আকরাম। আমরা বলতে চাই ভুল করলে গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। কিন্তু আমাদের মহান নেত্রীকে নিয়ে টেলিভিশনের কোনো কুরুচীপূর্ণ বক্তব্য দেয়ার পর যদি আপনি নারায়ণগঞ্জে আসেন তাহলে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগ যুবলীগ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আপনাকে প্রতিহত করবে।’

এদিকে, ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বির সমালোচনা করে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে চিহ্নিত নেতা খোকন সাহা বলেন, ‘রাব্বি সোনালী ব্যাংকের ১৯ কোটি ৪০ লাখ ৩২ হাজার ১০৪ টাকা লোন নিয়েছেন গার্মেন্টস করার জন্য। কিন্তু পরে ব্যাংক খোঁজ নিয়ে জানতে পারে তার কোনো গার্মেন্টস নেই। তার বিরুদ্ধে বাটপারি মামলা হয়েছে। নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। স্বতন্ত্রপ্রার্থী হয়েছেন। যেখানে ১ ভাগ ভোটারের সমর্থন প্রয়োজন হয় সেই ১ ভাগ ভোটারের স্বাক্ষর জাল করেছেন রফিউর রাব্বি। তার মনোনয়পত্র বাতিল করা হয়েছে।’

শামীম ওসমানের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন সম্পর্কে খোকন সাহা বলেন, ‘আনোয়ার হোসেন নৌকার লোক। নৌকার লোক যখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয় তখন আর তিনি নৌকার লোক থাকেন না, আওয়ামীলীগের লোকও থাকেন না। আনোয়ার আর আওয়ামী লীগে নাই। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা বলেছিলেন যেখানে নৌকা প্রতীক নাই সেখানে লাঙল। অর্থ্যাৎ লাঙল নৌকারই একটা অংশ। আনোয়ার হোসেন নৌকাকে ডুবিয়ে দিয়েছেন। উনি নাকি ডুবন্ত নৌকার ডুবুড়ি। উনার কথায় মনে হয় নৌকার শেখ হাসিনা কেউ না উনিই সব।’

জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদল বলেছেন, ‘যে নাকি ছেলের লাশ নিয়ে রাজনীতি করেন, সোনালী ব্যাংকের টাকা লুটপাট করেন, গার্মেন্টসের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারীর দায়ে যাকে জুতা পেটা করা হয় সেই রফিউর রাব্বি প্রার্থী হয়েছেন। তার মনোনয়নপত্র আবার বাতিলও হয়েছে। আর আনোয়ার হোসেন প্রার্থী হয়েছেন। উনি নাকি নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য দলীয় পদ ছেড়ে দেবেন। উনি দাঁড়িয়েই থাকতে পারবেন, সংসদে যেতে পারবেন না। আর এস এম আকরাম যিনি ভাই বোনের সম্পদের হেফাজত করতে পারেন না, তিনি কীভাবে নারায়ণগঞ্জের মানুষের জানমালের হেফাজত করবেন। এ সব বাটপার, লুচ্চা ও মদমাইশরা ভোট চাইতে গেলে মা বোনেরা জুতা ঝাড়ু নিয়ে প্রস্তুত থাকবে। তাদের জুতা পেটা করা হবে।’ এসময় আইভী, আকরাম, আনোয়ার ও রাব্বিদের বয়কট করার জন্য নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রতি যুবলীগের এ নেতা আহ্বান জানান।

জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম আরো বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে ত্বকী হত্যার পর থেকে ষড়যন্ত্র ও অপরাজনীতি শুরু হয়েছে। কিছু সুশীল নামধারী হলুদ সাংবাদিকেরাও এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। অপরাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আইভী, আকরাম, আনোয়ার।

এস এম আকরাম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তিনি ৫ বছর এমপি ছিলেন। কিন্তু কোনো উন্নয়ন করেননি। তিনি এখন বলেন নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। উনার বোনেরা কেন উনার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন? কেন তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন সেই কথা তিনি বলেন না। ভাই বোনদের সম্পত্তি যাকে অস্থির করে তোলে, তিনি নারায়ণগঞ্জের জনগণকে কী শান্তি দিবেন?’

মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে হামজা আনোয়ার আখ্যা দিয়ে যুবলীগ নেতা শাহ নিজাম বলেন, ‘আনোয়ার হোসেন নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে দরকষাকষি করছেন। যে প্রার্থী বেশি টাকা দেবেন উনি নাকি তাকেই সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন। তার লোক দিয়ে সেলিম ওসমানের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি নাকি ডুবন্ত নৌকার ডুবুড়ি। নৌকা বা জাহাজ যাই ডুবুক তা নদী থেকে উদ্ধার করতে হামজা ছুটে যেত। উনি এখন হামজা হয়েছেন। আজ থেকে উনার নাম হামজা আনোয়ার।’

প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা শামসুজ্জামান ভাষানী, শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল, ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল, শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি নাজমুল আলম সজল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হক নিপু, সভাপতি সাফায়েত আলম সানি, সহ সভাপতি মহসিন, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন প্রমুখ।

উল্লেখ্য, গত ২৯ মে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে মানববন্ধন ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মান্না সাত খুনের ঘটনায় শামীম ওসমানকে গ্রেপ্তার না করা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন।

মান্না বলেছিলেন, ‘আমার কাছে অবাক লাগছে সাত খুনের ঘটনায় শামীম ওসমানকে কেন তদন্তকারীরা জিজ্ঞাসাবাদ করছে না। ঘটনার ১০ মিনিট পরে শামীম ওসমানের সঙ্গে নূর হোসেনের কী কথা হয়েছিল সে বিষয়ে কেন জানতে চাচ্ছেনা পুলিশ। শামীম ওসমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশ কী ভয় পায়।’



মন্তব্য চালু নেই