মানুষের যে আচরণগুলো একেবারেই অযৌক্তিক!

বিজ্ঞান কি সব রহস্যের সমাধান করতে পারে? গবেষণাগারে বসে মহাকাশের অনেক তথ্যই হয়ত চলে আসে তার কাছে, কিন্তু মানবমন যে তার চেয়েও জটিল। এই ফিচারটি এমন কিছু স্বাভাবিক কিন্তু রহস্যময় আচরণ নিয়ে বলবে যা কিনা বিজ্ঞানের কাছে আজও একটি প্রশ্ন। এই প্রশ্নের সমাধান হয় নি। কেন আমরা লজ্জায় রাঙ্গা হই, স্বপ্ন দেখি বা চুম্বন করি আবেগে আপ্লুত হয়ে বিজ্ঞান কিন্তু জানে না তার উত্তর আজও।

কুসংস্কার
মানুষ খুব সহজে কুসংস্কার দ্বারা প্রভাবিত হয়। খেয়াল করে দেখুন, ছোট বেলায় শুনেছেন ভুতের গল্প। আপনি জানেন, ভুত বলে কিছু নেই। তবু ভয় কিন্তু আপনার কাটে নি। আপনি এখনো যখন হরর মুভি দেখেন, তখনো সেই ছেলেবেলার বিশ্বাস ফিরে আসে আর পেছন থেকে হঠাৎ স্পর্শে দারুণ চমকে ওঠেন আপনি। আমরা জোতিষশাস্ত্র, ভ্যাম্পায়ার, পিচাশ, প্রেতাত্মা সহ আরও অনেক কুসংস্কারে ক্রমাগত প্রভাবিত হই এবং প্রমাণ থাকলেও মন থেকে নাকচ করে দিতে পারি না। বরং নিজে নিজে কল্পনায় আরও অনেক কিছু দেখি যা আসলে ঘটে নি। বিজ্ঞানের কাছে বুদ্ধিমান মানবজাতির এই অযৌক্তিক আচরণের কোন ব্যাখ্যা নেই!

অপরের সাহায্য করা
মানুষের প্রকৃতি অনুযায়ীই সে অপরকে সাহায্য করে। অপরের ভাল করা, শুভাকাঙ্ক্ষা ধারণ করা মানুষের সহজাত। সে কেন এটা করে বা এতে তার বিশেষ কোন উপকার আছে কিনা এগুলো কিছুই সে চিন্তা করে না। কিন্তু এই স্বভাবের কারণ কি? নিউ জার্সির রাটগার্স ইউনিভার্সিটির রবার্ট ট্রাইভার্স একটি বিতর্ক তোলেন। তিনি বলেন, সাহায্যের বিনিময়ে সুবিধা পাওয়ার প্রত্যাশা মানুষের থাকে। তবে যতই আমরা বড় হতে থাকি ততই বদলায় আমাদের অপরের প্রতি অনুভূতিগুলো।

চুম্বন
একজন মানুষ শুধু আরেকজন মানুষের ঠোঁটে ঠোঁট রেখেই চুমু দেয় না সে চুম্বন করে পছন্দের বস্তুকেও। সংস্কৃতি ভেদে এর চর্চা আবার আলাদা হয়। অর্থেও আছে বৈচিত্র। চুনবন প্রকাশ করতে পারে প্রেমের আবেগ, প্যাশন, আকর্ষণ, শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা, বন্ধুত্ব, শান্তি, শুভকামনা এবং আরও অনেক কিছু। একটি তত্ত্বে মানুষের এই চুম্বনে আবেগ প্রকাশের ধরনকে যুক্ত করা হয়েছে স্তন্যপানের স্মৃতির সাথে। প্রাচীনকালে মায়েরা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো ছাড়াতে মুখে মুখ দিয়ে খাওয়াতেন। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, সেই ধারায় আবেগ এবং স্নেহ প্রকাশে আমরা ঠোটকে ব্যবহার করে থাকি। আবার একটি ব্যাখ্যায় একে মানুষের পাকা ফল খেতে পছন্দ করার সাথে তুলনা করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, চুম্বন করটিসল লেবেল কে নিয়ন্ত্রণ রাখে, ফলে স্ট্রেস কমে এবং অক্সিটোসিন হরমোনকে ঠিক রাখে। তাই এটি সুস্বাস্থ এবং সুখী জীবনের জন্য উপকারি।

হাসি
বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীন স্টিমুলির নির্দিষ্ট মাত্রার প্রতিক্রিয়ায় উতপত্তি হয় হাসির। কিন্তু আমরা শুধু একটি আবেগের প্রকাশে হাসি না। আনন্দে হাসি, হাসি দুঃখে, রাগে, এমনকি বিব্রতকর পরিস্থিতি সামাল দিতেও। হাসি একই সাথে করতে পারে ঠাট্টা। আবার এই হাসিই দিতে পারে স্বীকৃতি। নানাবিধ আবেগ প্রকাশের সঙ্গী এই হাসি তাই একটি রহস্য।

আরক্ত হওয়া
একান্তই মানুষের আবেগ প্রকাশের ধরণ এটি। বিব্রত হলে বা স্ট্রেসের সময় আবেগ প্রকাশে আরক্তিম ভাব ফুটে ওঠে মুখে। আবার প্রেমের প্রকাশ বা আকর্ষণের ভাব প্রকাশেও ফুটে ওঠে গালে লাল আভা। মনে করা হয়, আরক্ত হওয়ার এই ঘটনাটি ঘটে সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমের মাত্রাতিরিক্ত স্বক্রিয়তার কারণে। চার্লস ডারউইন ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন কেন আমরা মিথ্যা বলার সময় আরক্ত হই, যা অন্যদের সতর্ক করে দিতে পারে। তিনি এটিকে সবচেয়ে উদ্ভট এবং সবচেয়ে মানবিক আবেগ বলে আখ্যা দিয়েছেন। অনেক বিজ্ঞানীরা একে আবার অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন। কারও কারও মতে এটি ঘটে আবেগের উগ্র প্রকাশকে নমনীয় করতে। আবার কেউ বলেন, এটি পরে আরও গভীর হয়ে মিশে যায় বিব্রত হওয়া, লজ্জা পাওয়ার মত আবেগীয় চর্চায়।

স্বপ্ন
ঘুমের মাঝে আমরা দেখি একটি সিনেমা, যার চিত্র আছে, শব্দ আছে, এমনকি আছে অনুভূতি। তার নাম স্বপ্ন। স্বপ্ন আমাদের স্ট্রেস কমায়, বাস্তব অভিজ্ঞতাকে গুছিয়ে একটা গল্প তৈরি করে, এমনকি অবচেতন মনের এমন সব কথা সামনে আনে যা আমরা জেগে থেকে ভাবতেও পারতাম না যে এই চিন্তা আমাদের মনেই আছে। স্বপ্ন আমাদের সমস্যার সমাধান ও করে তাই। গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা আমাদের দীর্ঘ গভীর স্বপ্নগুলো দেখি আধোঘুমে আধো জাগরণে। অনেক সময় দিনের বেলা ঘটা অনেক ঘটনা মিলে যায় গত রাতে দেখা স্বপ্নের সাথে।

নাক খোঁটা
গবেষণায় দেখা গেছে, কিশোর বয়সীরা দিনে ৩ থেকে ৪ বার নাকে হাত দেয়। কেন দেয়? এর কোন স্বাস্থ্য উপকারিতা তো নেই। আবার বিশেষ কোন সমস্যা আছে নাকে তাও না। তবু দেখা যায়, সব মানুষেরাই এই অদ্ভুত কাজটি করে। অনেকে বলেন, এত ইমিউন সিস্টেম ভাল থাকে!



মন্তব্য চালু নেই