মানুষের মাংস খাওয়া অভ্যাস, ফ্রিজে জমিয়ে রাখতেন মানুষের মৃতদেহ! এই তরুণীর রহস্য কী?

২০১৩ সালের ঘটনা। ইন্দোনেশিয়ার একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদে কেঁপে গিয়েছিল গোটা দুনিয়া। খবরে প্রকাশ পেয়েছিল এক তরুণীর কাহিনি, মানুষের মাংস খেয়ে পেট ভরানো যাঁর অভ্যেস, নেশাও বলা যায়। দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় এই খবর। কিন্তু এই খবরের কতটুকু সত্যি?

সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত খবরটি পড়ে হাড় হিম হয়ে গিয়েছিল অনেকেরই। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল এক শিউরে ওঠার মতো কাহিনি। জাকার্তা-নিবাসী ২৯ বছরের এই তরুণীর শখ ছিল মানুষের মাংস খাওয়া। নিজের বাড়িতে পরিচিতদের ডেকে এনে খাবার পরিবেশন করতেন তরুণী। সেই খাবারে মেশানো থাকত বিষ। অভ্যাগতের মৃত্যু হলেই তাঁকে কেটে তাঁর শরীর থেকে কাঁচা মাংস চিবিয়ে খেতেন তরুণী। উদ্বৃত্ত মাংস রেখে দিতেন ফ্রিজে।

খবরে দাবি করা হয়েছিল, নিজের স্বামীকে পর্যন্ত খুন করে তার মাংস খেয়ে ফেলেছেন তরুণী। তাঁর বাড়িতে যখন বন্ধুবান্ধবরা আসতেন, তখন ফ্রিজ থেকে অনেক সময়ে নরমাংস বার করে রান্না করে তাঁদের আপ্যায়ন করতেন তিনি। বন্ধুরা জানতেও পারতেন না যে, যে সু্স্বাদু মাংস তাঁরা খাচ্ছেন, তা আসলে মানুষের মাংস। রান্নার ব্যাপারে সুনাম ছিল তরুণীর।

পুলিশের কাছে অনেক দিন ধরেই বেশ কিছু মানুষের নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার খবর আসছিল, যাঁদের শেষ দেখা গিয়েছিল ওই তরুণীর বাড়িতে প্রবেশ করতে। সন্দেহবশত পুলিশ হানা দেয় ওই তরুণীর বাড়িতে। বাড়ি তল্লাশি করতে গিয়ে ফ্রিজ খুলতেই উন্মোচিত হয় সত্য। দেখা যায়, ফ্রিজের তাক ভর্তি করে সাজানো রয়েছে নরমাংস।

পুলিশের কাছে তরুণী স্বীকার করেন, কমবেশি ৩০ জন যুবতী-সহ আরও বেশ কয়েক জনকে হত্যা করে তাঁদের মাংস তিনি খেয়েছিলেন। পুলিশ গ্রেফতার করে তরুণীকে জেলে পাঠায়। কিন্তু মানুষের স্বভাব এত সহজে যাওয়ার নয়। প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, কারাবাসের সময়ে এক মহিলা রক্ষীকে পর্যন্ত হত্যা করে তাঁর মাংস খেয়ে ফেলেছিলেন তরুণী।

ইন্দোনেশিয়ান ওয়েবসাইটে খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পরে ঘটনাটির বীভৎসতা দ্রুত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ভাইরাল হয়ে যায় এই খবর। কিন্তু পাঠকদের প্রাথমিক বিহ্বলতাটুকু থিতু হয়ে যাওয়ার পর থেকেই উঠতে থাকে নানা প্রশ্ন। সবথেকে বড় প্রশ্ন, তরুণীর নাম প্রকাশ করা হল না কেন খবরে? কেবল মাত্র একটি নিউজসাইটই এই হাড়-হিম করা ঘটনার হদিশ পেল কী ভাবে? সংবাদে দাবি করা হয়েছে, তরুণী থাকতেন জাকার্তায়। কিন্তু জাকার্তায় কর্মরত অন্যান্য অনেক সাংবাদিকই বিষয়টির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে থাকেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁরা বলেন, যদি এমন ঘটনা ঘটেই থাকে, তা হলে তাঁদের কাছে নিশ্চয়ই খবর আসত। তা ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার কোন জেলে বন্দি রয়েছেন ওই তরুণী, কী শাস্তি দেওয়া হয়েছে তাঁকে— এই সমস্ত প্রশ্নও উঠতে থাকে। খবরের সত্যতা নিয়ে এহেন বিতর্ক যখন তুঙ্গে তখনই সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটটিও খবরের যাবতীয় দায় সাংবাদিকের উপর চাপিয়ে নিজেরা হাত ধুয়ে ফেলে।

বর্তমানে এই খবরকে ভুয়ো খবর বলেই মনে করেন অনেকে। অবশ্য খবরটির অসত্যতা নিয়েও কোনও নির্ভুল প্রমাণ তেমন নেই। ফলে আজও ইন্দোনেশিয়ার নরখাদক তরুণীর খবর ইন্টারনেটের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়ায়, মানুষজন শিউরে ওঠেন বীভৎসতার এই চরম দৃষ্টান্তের কথা জেনে।



মন্তব্য চালু নেই