মানুষকে ভালোবাসতেই যার জন্ম

বাঙালির আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার ইতিহাস হাজার বছরের। এখানকার জমিন রক্তাক্ত হয়েছে বহুবার। বাঙালির আকাশে মুক্তির সূর্য উঁকি দিয়ে নিমিষেই মিলে গেছে তিমিরে। যে সূর্য ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশী প্রান্তরে অস্ত যায়, তা ডুবন্ত থাকে দুশ বছর।

বাঙালির ইতিহাস হাজার বছরের শোষণের ইতিহাস। এখানকার মানুষ শোষিত হয়েছেন ঔপনিবেশিকদের চাবুকে। শোষিত হয়েছেন নিজ গোত্রের শাসকদের যাঁতাকলে। সব অন্যায় আর শোষণের বিরুদ্ধে বারবার বিদ্রোহ করেও বাঙালির মুক্তির মশাল আঁধারেই থেকে গেছে। বিদ্রোহের আগুন ক্ষণে ক্ষণে জ্বলে উঠলেও শোষকের ফুঁৎকারে নিমিষেই যেন তা মিলে গেছে।

অমন হাজার বছরের বিদ্রোহের আগুনের সন্নিবেশ ঘটিয়ে জন্মেছিলেন টুঙ্গিপাড়ার সেই ছেলেটি। যার জন্মদিবসে ধরণীতে বাঙালির স্বাধীনতার আকাশে ফুটেছিল মুক্তির আভা। যার জন্ম মানেই শোষিতের জয়গান আর শোষকের প্রস্থান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কোনো সীমারেখায় সে নামের বন্দনা করা যায় না। তিনি জন্মেছিলেন বাঙালির মুক্তির তাগিদেই। তবে শুধু জাতিসত্তার প্রশ্নেই নয়, তিনি এসেছিলেন মানবমুক্তির কেতন উড়িয়ে।

আজ ১৭ মার্চ। ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ লুৎফুর রহমান এবং সায়রা বেগমের ঘরে জন্ম নেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সর্বনাশী ঘাতকের বুলেটে মাত্র ৫৫ বছর বয়সেই জীবন দিতে হয়েছে ইতিহাসের এই মহামানবকে। সাড়ে পাঁচ দশকের জীবদ্দশায় বঙ্গবন্ধু জন্ম দিয়েছিলেন হিমালয়সম এক বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাস।

তাই তো কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো বঙ্গবন্ধুর সৃষ্টকর্মের বিশালতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় তিনি হিমালয়ের মতো।’ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, দৃঢ়তা, সাহসিকতা আর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বর্ণনায় ফিদেল ক্যাস্ট্রো সেদিন যথার্থই বলেছিলেন।

রাজনৈতিক জীবনের ৩৮ বছরের অর্ধেক সময় ধরে কারাগার প্রকোষ্ঠেই কাটাতে হয়েছে তাকে। এরই মধ্যে দল ভেঙেছেন, আবা্র গড়েছেন নিজস্ব সাংগঠনিক প্রজ্ঞা বলেই। আস্থা-অবিচলের নেতৃত্বে দলের প্রধানও হয়েছেন। রাষ্ট্র ভেঙে, রাষ্ট্র গড়েছেন। নিজ হাতে গড়া রাষ্ট্রের প্রধানও হয়েছেন।

স্বপ্ন দেখতেই যেন তার জন্ম। স্বপ্নের রূপায়ণও করেছেন প্রতি পদে। তার চলার পথ কখনই মসৃণ ছিল না। তবে অর্জন ছিল প্রতিক্ষণেই। মানুষের ভালোবাসা অর্জনই ছিল বঙ্গবন্ধুর সৃষ্টিকর্মের বিশেষত্ব।

স্বাধীনতার পরের বছর। ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে জানতে চেয়েছিলেন, ‘আপনার শক্তি কোথায়?` বঙ্গবন্ধু সে প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘আমি আমার জনগণকে ভালোবাসি।’ ‘আর আপনার দুর্বল দিকটা কী?` বঙ্গবন্ধুর উত্তর, ‘আমি আমার জনগণকে খুব বেশি ভালোবাসি।`

সত্যিই জনগণের প্রতি ভালোবাসা ছিল দুর্বলতা। যে দুর্বলতার মূল্য দিতে হয়েছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে।



মন্তব্য চালু নেই