মাথার তালুর ব্রণ দূর করার উপায়

মুখের ব্রণের মত মাথার তালুতেও ব্রণ হতে পারে। তরুণ থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত যেকোন মানুষের ব্রণের সমস্যা হতে পারে। শরীরের অন্যান্য অংশের মতোই মাথার তালুর ছিদ্র দিয়েও সিবাম নিঃসৃত হয়। যখন ব্যাকটেরিয়া মাথার তালুর মৃত চামড়া ও সিবামের মধ্যে আবদ্ধ হয় তখন ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্রণের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।

বিভিন্ন কারণে মাথার তালুর ব্রণ হয় যেমন- হরমোনের পরিবর্তন, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, অ্যালার্জির কারণে, স্বাস্থ্যবিধি না মানা, আদ্র পরিবেশে থাকা, দূষণ, তেল ও রাসায়নিকের সংস্পর্শ, মাথায় আঁটসাঁট করে স্কার্ফ বা হেট পরলে এবং মাথার তালুতে অভ্যাসগতভাবে চুলকালে। স্ট্রেস, ক্লান্তি এবং বিষণ্ণতা ও এই সমস্যাটির জন্য দায়ী। নিউ ইয়র্ক শহরের ডারমাটোলজিস্ট হোয়াইটনি বুয়ে বলেন, “স্কাল্পের ব্রণ হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে চুলের ফলিকলে কোষ ও তেল জমে থাকা”। তিনি আরো বলেন, “মরা চামড়ার কোষ ও তেল যখন স্কাল্পে একত্রিত হয় তখন তারা ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য হিসেবে পরিগণিত হয়, এর ফলেই ব্রণের সৃষ্টি হয়”।

মাথার তালু যেহেতু চুল দিয়ে ঢাকা থাকে তাই ব্রণ হলেও খুব একটা দেখা যায়না। তবে ব্যথা ও অস্বস্তি হয় এবং চুলের যত্ন নেয়াও কঠিন হয়ে পরে। চুল আঁচড়ানোটা হয়ে পড়ে বেদনাদায়ক। অন্য লক্ষণের মধ্যে চুলকানি ও প্রদাহ হতে দেখা যায়।

যদি প্রতিকারের ব্যবস্থা করা না হয় তাহলে স্টেফাইলোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে চুলের ফলিকল আক্রান্ত হয়ে ফলিকিউলিটিস হতে পারে। মাথার তালুর ব্রণ শরীরের অন্যান্য অংশের চেয়ে কোমল ও যন্ত্রণাদায়ক হয়। সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায় মাথার ব্রণ। এই যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য চুলের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দরকার। নিরাময় প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার জন্য কিছু ঘরোয়া প্রতিকার আছে। আজ সেগুলোই জেনে নিব আমরা।

১। হলুদ
মাথার তালুর ব্রণ নিরাময়ের জন্য হলুদ অত্যন্ত চমৎকার প্রাকৃতিক উপাদান। হলুদের কারকিউমিন উপাদান অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিওক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফ্লামেটোরি গুন থাকে। এরা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে বাঁধা দেয়, ব্যথা দূর করে ও ব্রণের প্রাদুর্ভাবে বাঁধা দেয়। আধা টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়ার সাথে আধা টেবিল চামচ এক্সট্রা ভার্জিন নারিকেল তেল মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। আক্রান্ত স্থানে এই পেস্টটি লাগান। এক ঘন্টা পরে ধুয়ে ফেলুন ও শ্যাম্পু করে নিন। প্রতিদিন একবার এটি করতে পারেন।

২। অ্যালোভেরা
মাথার তালুর ব্রণ দূর করার আরেকটি জনপ্রিয় উপাদান হচ্ছে অ্যালোভেরা। অ্যালোভেরা ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে পারে, সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে, প্রদাহ কমাতে পারে এবং নিরাময়কে উদ্দীপিত করে। এমনকি স্কাল্পের pH এর ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে অ্যালোভেরা। একটি অ্যালোভেরার পাতা থেকে জেল বাহির করে নিন। আক্রান্ত স্থানে এই জেল লাগান দিনে দুই বার এক সপ্তাহ যাবত। এছাড়া আধা কাপ অ্যালোভেরার সাথে একটি লেবুর অর্ধেক অংশ এর রস মিশিয়েও মাথার তালুতে ও চুলে লাগাতে পারেন। ৩০ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন একবার এটি ব্যবহার করুন কয়েকদিন যাবত।

৩। টমেটো জুস
টমেটো চমৎকারভাবে চুল ও ত্বকের pH এর ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করে। এছাড়াও টমেটোতে স্যালিসাইলিক এসিড থাকে যা ব্রণ দূর করার সবচেয়ে ভালো উপাদান। মাথার তালুর ব্রণ দূর করতে উচ্চমাত্রার স্যালিসাইলিক এসিড অত্যন্ত কার্যকরী। আপনার চুলের বৃদ্ধির জন্য, উজ্জ্বলতার জন্য এবং অবশ্যই বিরক্তিকর স্কাল্পের ব্রণ দূর করার জন্য টমেটো জুস ব্যবহার করুন।

৪। ট্রি টি ওয়েল
এসেনশিয়াল অয়েলের শক্তিশালী অ্যান্টিইনফ্লামেটরি উপাদান থাকে। স্কাল্পের ব্রণ দূর করতে এটি শ্যাম্পুর সাথে ব্যবহার করলে ভালো কাজ করে। এছাড়াও ২/৩ টেবিলচামচ অলিভ ওয়েল বা নারিকেল তেলের সাথে ৫ ফোঁটা ট্রি টি ওয়েল মিশিয়ে স্কাল্পে লাগিয়ে ১-২ ঘন্টা রেখে দিন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন একবার এটি ব্যবহার করুন।

তাছাড়া আপেল সাইডার ভিনেগার, নিম ও রসুন ব্যবহার করা যায় স্কাল্পের ব্রণ দূর করতে। যদি ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার করার পরও নিরাময়ের লক্ষণ প্রকাশ না পায় তাহলে ডারমাটোলজিস্টের শরণাপন্ন হতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হতে পারে।



মন্তব্য চালু নেই