মাত্র ৩০ সেকেন্ডে ব্লাড গ্রুপ টেস্টের পদ্ধতি আবিষ্কৃত

চীনের থার্ড মিলিটারি মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি মাত্র ৩০ সেকেন্ডে একজন রোগীর ব্লাড টাইপ বের করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। একটি রঞ্জিত কাগজের টুকরো ব্যবহার করা হয় এক্ষেত্রে। বর্তমানে ব্যবহৃত উপায়গুলোর চাইতে নতুন এই উপায়টি অনেক কম সময় লাগে এবং এতে খরচটাও হয় কম। এতে তুলনামূলকভাবে দরিদ্র দেশগুলো উপকৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে, রক্ত দান এবং বোন ম্যারো দানের ক্ষেত্রে ব্লাড গ্রুপ জানাটা খুবই জরুরী। এসব ক্ষেত্রে এই গবেষকদের উদ্ভাবিত পদ্ধতিটি কাজে আসবে। তাদের ব্যবহৃত ধারনাটি আসলে নতুন কিছু নয়। ইতোমধ্যেই এমন কিছু টেস্ট আছে যেগুলো অল্প সময়ে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে পারে। কিন্তু অন্যান্য পদ্ধতিতে দরকার হয় প্রশিক্ষিত ব্যক্তি এবং রিভার্স গ্রুপিং এর জন্য প্লাজমা আলাদা করার আলাদা একটি ধাপ। নতুন এই পদ্ধতির ক্ষেত্রে আলাদা কোনো ধাপ ব্যবহার হয় না আর এটি অন্যান্য সব পদ্ধতির চাইতে নিখুঁত।

আমি বা আপনি যারা শহরের বাসিন্দা, নিয়মিত ডাক্তার দেখাই তারা নিজেদের ব্লাড গ্রুপ জানি অনেক কম বয়স থেকেই। কিন্তু সব দেশে বা সব জায়গার মানুষের জন্য সেটা খাটে না। অনেকেই জানেও না ব্লাড গ্রুপ কি। আর এসব জায়গায় ব্লাড গ্রুপ টেস্ট করার মতো সুবিধাও থাকে না। এমন অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এই পদ্ধতি বেশী জরুরী। সেখানে কোনো ইমার্জেন্সিতে রক্ত দেওয়ার দরকার পড়লে ব্লাড গ্রুপ চট করে জানা যায় না। অনেক ইমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্টে শুধু ও টাইপ ব্লাড থাকে যা সবাইকে দেওয়া যায়। কিন্তু সবাইকে ও টাইপ ব্লাড দিতে গিয়ে স্টক কমে যায়।

এ পজিটিভ ব্লাড গ্রুপটাই বেশ সচরাচর পাওয়া যায়, অন্য গ্রুপগুলো অতটা পাওয়া যায় না। ভুল গ্রুপের রক্ত দিলে রোগীর শরীরে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে, এমনকি তিনি মারাও যেতে পারেন। ব্লাড গ্রুপ চেক করার জন্য আধা ঘন্টার মতো সময় লাগে। এ সময়টা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে চীনের এই নতুন পদ্ধতিতে।

সবার রক্তে একটি বিশেষ অ্যান্টিজেন থাকে। একেক ব্লাড গ্রুপে একেক রকমের অ্যান্টিজেন পাওয়া যায়। এক গ্রুপের রক্তের অ্যান্টিজেনের সাথে অন্য গ্রুপের অ্যান্টিবডির মিশ্রণে ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া দেখা যায় শরীরে। এই নতুন পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয় একটি কাগজের স্ট্রিপ যাতে রং এবং অ্যান্টিবডির মিশ্রণ দেওয়া থাকে। এতে রক্ত দিলে অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেনের বিক্রিয়ায় রং পরিবর্তন হয়, বোঝা যায় রোগীর রক্ত কী গ্রুপের। ৩,৫৫০ মানুষের ওপর পরীক্ষা করে দেখা যায়, এই পদ্ধতি মাত্র আধা মিনিট থেকে ২ মিনিট সময় নেয় এবং ৯৯.৯ শতাংশ নিখুঁত। এই টেস্টে কোনো ল্যাবেরও দরকার হয় না।

ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ অনেক। অনুন্নত এলাকায়, যুদ্ধাক্রান্ত দেশে, হাসপাতাল থেকে দূরের এলাকাগুলোতে এর উপকারিতা দ্রুত বোঝা যাবে।

সূত্র: আই এফ এল সায়েন্স



মন্তব্য চালু নেই