মহিলার পেটের ওজনই ৬০ কেজি! পেট কাটার পর যা বেরলো আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না

কিছু কিছু ঘটনা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকে। ২০১৪ সালের মার্সিডিজ তালামান্তের কেসটি যেমন। মেক্সিকোর মার্সিডিজ তালামান্তে ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছিলেন। এমনিতেই চেহারা একটু ভারি। কিন্তু হঠাৎ করে ন’-দশ মাসের মধ্যে ৬৫ কেজি থেকে ওজন বেড়ে যখন ১২৫ কেজি হয়ে গেল, তখন মার্সিডিজের মনে হল, নাঃ, এ বার সত্যিই ওজন কমানোর দিকে নজর দিতে হবে। তত দিনে ভারি চেহারার জন্য নড়াচড়া করার ক্ষমতাও প্রায় লুপ্ত হয়ে গিয়েছে তাঁর। ডাক্তারদের কাছে গেলেন তিনি। ডাক্তাররা এক নজর দেখেই বুঝে গেলেন, মার্সিডিজের শারীরিক ওজনের বেশিরভাগটাই জমে রয়েছে তাঁর পেটে। মার্সিডিজের পেটের আকার তত দিনে পর্বতপ্রমাণ হয়ে গিয়েছে। প্রাথমিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেই ডাক্তাররা তাঁর অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তখনও তাঁদের জানা ছিল না, মহিলার পেটে কী বাসা বেঁধে রয়েছে!

অপারেশনের সময়ে পেট কেটে দেখা যায়, মার্সিডিজের ডিম্বাশয়ে একটি টিউমার হয়েছে। কিন্তু সে যেমন-তেমন টিউমার নয়। রোগিনীর পেট থেকে সেই টিউমার বের করতে রীতিমতো বেগ পেতে হয় ডাক্তারদের। কয়েক জন ডাক্তার মিলে ধরাধরি করে মার্সিডিজের শরীর থেকে উদ্ধার করেন একটি বড়সড় পাথরের আকারের টিউমার, যার ওজন ৬০ কেজির কাছাকাছি।

মেক্সিকোর কাবো সান লুকাস হাসপাতালের ডাক্তার মোইসে আরন নুনেজ জানান, ‘সারা পৃথিবীতেই এর চেয়ে বড় আকারের ওভারিয়ান টিউমারের কোনও দৃষ্টান্ত নেই।’ ডাক্তাররা জানিয়েছেন, রোগিনীর সঙ্গে কথা বলে, এবং শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে অনুমান করা যাচ্ছে, বিগত পাঁচ বছর ধরে একটু একটু করে এই টিউমার বড় হচ্ছিল মার্সিডিজের শরীরে।

কিন্তু ৫১ বছর বয়সি মার্সিডিজ কিছু টের পাননি? তিনি বলছেন, সে রকম কিছু পরিবর্তন অনুভব করেননি শরীরে। কিন্তু বিগত বছর খানেক ধরে লক্ষ করছিলেন, খাওয়াদাওয়ার অভ্যাসে কিছু‌ বদল না এলেও ওজন বে়ড়ে যাচ্ছে অস্বাভাবিক রকমের। মেয়ে মারিয়াও মা-কে বলেন, শুধু তাঁর ওজনই বাড়ছে না, পাশাপাশি অসুস্থও দেখাচ্ছে তাঁকে। তখনই ডাক্তারের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত হন মারিয়া।

বছর দু’য়েক কেটে গিয়েছে মারিয়ার অপারেশনের পরে। এখন সুস্থই রয়েছেন তিনি। এখনও সেই অসুস্থতার দিনগুলোর কথা মনে পড়লেই শিউরে ওঠেন। মেয়ের কথা শুনে ডাক্তারের কাছে না গেলে তাঁর যে মৃত্যুও হতে পারত, তা অপারেশনের পরে-পরেই বুঝে গিয়েছিলেন। এখন ধন্যবাদ দেন নিজের ভাগ্যকে। সে দিন ৪ ঘন্টার অপারেশনের শেষে কয়েক দিন বিছনায়া শুয়ে থাকার পরে যখন প্রথমবার মাটিতে পা দিলেন, কেমন লেগেছিল তখন? ‘মনে হচ্ছিল যেন হাওয়ায় উড়ে যাচ্ছি,’ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে হাসতে হাসতে বলছেন পৃথিবীর বৃহত্তম টিউমারের অধিকারিণী।



মন্তব্য চালু নেই