মসলার নামে কী খাচ্ছি আমরা?
সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ভেজাল বিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ড চললেও অতি লোভী ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন পন্থায় খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল দিয়েই যাচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ভেজাল মসলার কারখানা থেকে যা উদ্ধার করা হয়েছে তা রীতিমত চমকে উঠার মতো।
ঘাসের বীজ ও ছোট কাওন, যা পাখীর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তা ভেজাল মসলার মূল উপকরণ। আর ঘাসের বীজ গুঁড়া করে মোশানো হয় ক্ষতিকর রং। এতে লাল রং মেশালে হয়ে যায় মরিচের গুঁড়া। হলুদ রং মেশালে হয়ে যায় হলুদের গুঁড়া। এর সঙ্গে পচা কাঁচামরিচ শুকিয়ে গুঁড়া করে মেশালে হালকা ঝাল হয়। তবে ভেজাল হলুদের গুঁড়ার মধ্যে মেশানো হয় খানিকাটা আসল হলুদের গুঁড়া। ফলে কোনভাবেই বোঝার উপায় থাকে না এটি আসল না নকল।
ঈদের সময় মসলার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কিছু অসাধু ব্যক্তি ক্ষতিকর পদার্থ দিয়ে ভেজাল হলুদ-মরিচের গুঁড়া তৈরি করে আসছে– এ তথ্য জানিয়েছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট একেএম আনোয়ার পাশা।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ‘হাসিনা মার্কেটে’র মসলা পট্টিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে ভেজাল মসলা তৈরির সঙ্গে জড়িত আট ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন মেয়াদের সাজা দিয়েছেন। তিন জনকে এক বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তারা হলেন- সুমন মিয়া, গিয়াসউদ্দিন, মনির হোসেন। পাঁচজনকে করা হয় এক লাখ করে জরিমানা। তারা হলেন- কাউছার আলী, আব্দুল জলিল, খাজা মিয়া, মনির হোসেন ও দুলাল মিয়া।
অভিযান নেতৃত্বদানকারী র্যাব-২-এর সহ-অধিনায়ক মেজর সৈয়দ সালাহ্উদ্দিন মাহমুদ জানান, অভিযুক্ত ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, অধিক লাভের আশায় তিনি পনের বছর যাবৎ ভেজাল মসলা তৈরি করে আসছেন। সাধারণত গভীর রাতে রং মেশানোর কাজ করা হয়। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে মসলার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দিনের বেলায়ও ভেজাল করা হতো।
গিয়াসউদ্দিন আরো জানান, তার তৈরি ভেজাল মসলার বেশিরভাগই ঢাকার বাইরে সবরাহ করা হয়। আর জেনেশুনেই ঢাকার বাইরে থেকে বিভিন্ন পার্টি এসে এসব ভেজাল মসলার অর্ডার দেয়। আসল হলুদ ও মরিচের গুঁড়া ২৫০ টাকা কেজি হলেও ভেজাল গুঁড়ার কেজি মাত্র ১৩০ টাকা। তিনি না করলে তার কারখানা চলবে না। কাস্টমার অন্যখানে চলে যায়, তাই সে অনেকের মত ভেজাল কাজটি করতে বাধ্য।
একই মার্কেটের ব্যবসায়ী মনির হোসেন জানিয়েছেন, তারা তিনজন মিলে এই কারখানার মালিক এবং সারা বাংলাদেশ থেকে তারা ভেজাল মসলার অর্ডার নেন এবং ডিলারদের ঠিকানা মোতাবেক পাঠিয়ে দেয়া হয়।
অভিযানে ধ্বংস করা হয় প্রায় দুইশ মণ ভেজাল মসলা।
মন্তব্য চালু নেই