‘মশাল’ তুমি কার?

আনুষ্ঠানিক ভাঙনের পর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের দুই অংশই নিজেদের ‘মূল জাসদ’ হিসেবে দাবি করছে। একইসঙ্গে নিবন্ধিত ত্রয়োদশ দলটির নির্বাচনী প্রতীক ‘মশাল’র দাবি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) হাজির হয়েছেন দুই অংশের নেতারা। বিভক্ত সংগঠনের দুই কমিটির নতুন নেতৃত্বের তালিকাও জমা পড়েছে ইসিতে।

গত মঙ্গলবার হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন ও শরীফ নুরুল আম্বিয়া নেতৃত্বাধীন কমিটির এই তালিকা ইসিতে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে শুধু দলীয় প্রতীক মশাল নয়, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েরও দখল পেতে আইনের আশ্রয় নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদ থেকে বেরিয়ে যাওয়া অংশের নেতারা।

গত ১২ মার্চ জাসদের জাতীয় কাউন্সিলে সংসদ সদস্য শিরিন আক্তারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে শরীফ নুরুল আম্বিয়া নেতৃত্বে পৃথক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ভাঙনের পর বিভক্ত দুই কমিটিই নিজেদের মূল জাসদ ও মশাল প্রতীকের দাবিদার। এরই প্রেক্ষিতে বিভক্ত দুই কমিটিই ‘মশাল’ প্রতীক নিজেদের দাবি করে ইসিতে চিঠি দিয়েছে।

নিবন্ধন ও প্রতীকের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বাংলামেইলকে বলেন, ‘উভয় পক্ষেরই দাবির বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা হবে। এরপর কমিশনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন যাছাই-বাছাই কমিটির প্রধান যুগ্ম-সচিব জেসমিন টুলী বলেন, ‘বিষয়টি পর্যালোচনা করে কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে।’

২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর ত্রয়োদশ রাজনৈতিক দল হিসেবে মশাল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয় হাসানুল হক ইনু নেতৃত্বাধীন জাসদ। সম্প্রতি জাতীয় কাউন্সিলে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সংসদ সদস্য শিরিন আক্তারকে সাধারণ সম্পাদক করায় বিরোধিতা করে ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদ থেকে বেরিয়ে যায় একটি অংশ। পরে তারাও আলাদা কমিটি ঘোষণা করে। ওই কমিটিতে শরীফ নুরুল আম্বিয়াকে সভাপতি ও সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। আগের কমিটির কার্যকরী সদস্য সাংসদ মঈন উদ্দীন খান বাদলকে করা হয়েছে কার্যকরী সভাপতি।

বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে মঈন উদ্দীন খান বাদল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে আমরাও গেছি উনারাও গেছেন। আমরা আমাদের কথা বলেছি। ইসি দেখবে মেজরিটি কে। তখন তারা বিধি-বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। যারা মেজরিটি নিবন্ধন তাদের, প্রতীকও তাদের। দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির ১৪ জনের একজন মারা গেছেন। একজন অসুস্থ আর একজন তার অবস্থান পরিষ্কার করেননি। বাকি ১১ জনের মধ্যে সাতজন আমাদের সঙ্গে আছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের প্রতীক মশাল। আমরাই মূল জাসদ। জাসদের ছয় সাংসদের চারজনই আমাদের অংশে। আগের কমিটির নয়জনের মধ্যে ছয়জনই আমাদের সঙ্গে। দেশের অধিকাংশ জেলা কমিটি আমাদের। সুতরাং মশাল নিয়ে প্রশ্ন উঠলে যথাসময়ে আমরাই তার দাবিদার হবো।’

কার্যালয় প্রসঙ্গে বাদল বলেন, ‘জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় চারজনের নামে। এরা হলেন- শ্রমিক নেতা আব্দুল কাদের, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, কাজী আরেফ আহমেদ এবং হাসানুল হক ইনু। এর মধ্যে কাজী আরেফ মারা গেছেন। আব্দুল কাদের অসুস্থ, তিনি আমাদের সমর্থন জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জন্য আমরা আদালতে যাবো। বিবাদ মিটিয়ে দেয়ার আবেদন জানাবো।’

সংসদ সদস্য পদ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জাসদের ছয়জন সংসদ সদস্যর মধ্যে চারজন আমাদের সঙ্গে, এখানে কোনো সঙ্কট নেই। এই চারজন যখন স্পিকারকে জানাবো তখন তিনিই বিবেচনা করবেন।’

এদিকে ইনু নেতৃত্বাধীন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার বলেন, ‘আমরা বাহাত্তর সাল থেকেই জাসদ। আমাদের প্রতীক মশাল। নিজেদের মূল দলের বাইরে অন্য কোনো কিছু বিবেচনা বা ভাববার সুযোগ নেই।’

ইসি কর্মকর্তারা বলেন, ‘কোনো সংসদ সদস্য দল থেকে বহিষ্কার হলে বিষয়টি নির্বাচন কমিশন ও জাতীয় সংসদের বিবেচনার বিষয় হবে।’

এদিকে গত বছর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নিয়ে দল থেকে বহিষ্কার ও প্রতীক নিয়ে এনপিপির জটিলতাও কমিশনে উপস্থাপন হয়েছে। তার কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।

এছাড়া দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে জাতীয় পার্টি ও জেপির মধ্যে বিরোধ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। শেষ পর্যন্ত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির কাছেই লাঙ্গল থাকে। ২০০৮ সালে নিবন্ধনের সময় জাতীয় পার্টি নামে চারটি দল আবেদন করলে ইসি জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি নামে আলাদা নিবন্ধন ও প্রতীক বরাদ্দ দেয় ইসি বলে জানান কর্মকর্তারা।

বর্তমানে ইসিতে ৪০টি নিবন্ধিত দল রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই