তিস্তা নিয়ে আস্থা রাখুন : মমতা
মমতা মীমাংসায় আসবেন, আশা রাষ্ট্রপতির
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার বিকেলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করতে বঙ্গভবনে গেলে আবদুল হামিদ এ আশা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান,পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় ৩৫ মিনিট দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন আবদুল হামিদ।
“সাক্ষাতের সময় রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান হবে।”
বঙ্গভবনে আসার আগে সোনারগাঁও হোটেলে দুই বাংলার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে এক মত বিনিময়ে মমতাও বলেন, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি আলোচনা করবেন।
দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর কারণে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ দূর করতে তিনি সেতু হিসাবে কাজ করবেন জানিয়ে এ বিষয়ে ‘আস্থা রাখার’ আহ্বান জানান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
২০১১ সালে ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময়ই তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও মমতার বিরোধিতার কারণেই শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। সে সময় সই হওয়া স্থল সীমান্ত চুক্তির প্রটোকল বাস্তবায়নও তার আপত্তির কারণে ঝুলে থাকে।
প্রেস সচিব বলেন, “বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাণিজ্য অবকাঠামো উন্নয়ন ও আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের উদ্যোগের কথা রাষ্ট্রপতি বৈঠকে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এর ফলে বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে পারস্পরিক অধিকতর উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।”
রাষ্ট্রপতি তার সাম্প্রতিক ভারত সফরের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেশী দেশটির আথিথেয়তারও প্রশংসা করেন বলে ইহসানুল করিম জানান।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যেসব সমস্যা আছে সেগুলো একসঙ্গে বসে সমাধান করা হবে।
দুই দেশ মিলে সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজনের পরিকল্পনার কথাও রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরেন তিনি।
মমতা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে পর্যটন খাতের ‘পারস্পরিক বিকাশের’ সুযোগ রয়েছে। এই খাত বিকশিত হলে বিদেশি পর্যটকরা দুই দেশেই সফরে আসতে আরও আগ্রহী হবে।
আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা সরাসরি বাস এবং খুলনা-কলকাতা ট্রেন চালুর আগ্রহের কথাও রাষ্ট্রপতির সামনে তুলে ধরেন মমতা।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জানান, তার তৃণমূল সরকার বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মস্থান আসানসোলে ‘কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং কলকাতায় ‘নজরুল তীর্থ’ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।
সাক্ষাতের সময় রাষ্ট্রপতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ প্রতিষ্ঠা, ‘কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং ‘নজরুল তীর্থ’ স্থাপনের উদ্যোগের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, এর ফলে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও গভীর হবে।
রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা খানম, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পর্যটন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ও এমপি মুনমুন সেন, অভিনেতা দীপক অধিকারী দেব, ভারতের হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণসহ রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাৎ শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতির বাসভবনে যান এবং আবদুল হামিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিন দিনের সফরে শুক্রবার রাতে ঢাকায় পৌঁছান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করেন মমতা বন্দোপ্যাধায়।
মন্তব্য চালু নেই