মন্ত্রিত্ব নেই তাই রাজনীতিতেও নেই ম.খা আলমগীর!

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বহুল আলোচিত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। এক সময়কার জাঁদরেল এ আমলা সরকারি দায়িত্বে থাকা অবস্থাতেই রাজনীতিতে ব্যাপক সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তাকে আর রাজনীতির মাঠে দেখা যাচ্ছে না। তিনি এখন রাজধানীর গুলশান-১ এ লোটাস কামাল টাওয়ারের দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়েই দিনের বেশিরভাগ সময় কাটান। তিনি ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান। নতুন ব্যাংক তাই দম ফেলার ফুরসত নেই। সম্প্রতি তার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একান্ত আলাপ হয় সাংবাদিকদের।
প্রশ্ন- ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আপনাকে এখন আর রাজনীতি মাঠে দেখা যাচ্ছে না, এমনটা হওয়ার পেছনে কারণ কী?
জবাবে ম.খা আলমগীর- এখনতো আমি মন্ত্রী নেই। মন্ত্রী না থাকলে কীভাবে রাজনীতির মাঠে থাকি। এখন বেশিরভাগ সময় দি ফারমার্স ব্যাংকের পেছনে দেই। এ কারণেই মূলত রাজনীতির মাঠে কম দেখা যায়।

প্রশ্ন- আপনি তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নারায়ণগঞ্জের ৭ খুন এবং গণমাধ্যম ও বিভিন্ন মহল কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রতি সন্দেহের আঙ্গুল তুলছে। এ আপনার কী মনে হয়?
জবাবে ম.খা আলমগীর- নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনা মর্মান্তিক। এই ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছে। আমি আশা করি, বিচারিক ব্যবস্থায় সত্যিকারের দোষীকে শনাক্ত করে যথাযোগ্য শাস্তি দেয়া সম্ভব হবে। সরকার যেভাবে এই হত্যাকাণ্ডের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে দোষীদের শাস্তি দেয়ার পর এ ধরনের ন্যক্কারজনক ও বর্বরোচিত অপরাধের ঘটনা সংঘটিত করার সাহস কোনো দুবৃত্ত দেখাতে পারবে না।

প্রশ্ন- ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মেয়েজামাই র্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। তিনি সংশ্লিষ্টতার কথা আদালতে স্বীকারও করেছেন। বিএনপি নেতারা তো এখন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেয়ার দাবি করছেন।
জবাবে ম.খা আলমগীর- তারেক সাঈদ একজন বয়স্ক লোক ও পৃথক ব্যক্তি। তার সংশ্লিষ্টতার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি তার ব্যক্তিগত দায়। এই অপরাধের দায় ভিন্ন কোনো ব্যক্তির ওপর চাপানো আইনসিদ্ধ নয়।

প্রশ্ন- ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কীভাবে দেখছেন? যেখানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে?
জবাবে ম.খা আলমগীর- এরকম একটি হত্যাকাণ্ড জাতির জন্য লজ্জাজনক। এ সম্পর্কে সরকার প্রাথমিক পদক্ষেপ নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত কাজ চলছে। আশা করি, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকে আইন মোতাবেক বিচারে সোপর্দ ও শাস্তি দেয়ার জন্য সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এর বাইরে যাওয়া অনভিপ্রেত নয়। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুস্পষ্ট করে বলেছেন, অপরাধী যেই হোক কেউ রেহাই পাবে না।

প্রশ্ন- রাজধানীর মিরপুরের কালশীর বিহারী পল্লীতে আগুন দিয়ে দশজন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। সরকারদলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে বিহারীরা।
জবাবে ম.খা আলমগীর- কালশীর ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এর পেছনে জড়িতদেরকে সরকার খুঁজে বের করার জন্য জোর তদন্ত চালাচ্ছে। আমি আশা করি সংশ্লিষ্ট সবাই তাদের বিচারের আওতায় আনার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করবেন। আর সহযোগিতা না করে বিহারী বলে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে, তিনি কোনো শক্তির স্বার্থ রক্ষা করতে আগ্রহী।

প্রশ্ন- বিএনপি ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে আপনি কী বলবেন?
জবাবে ম.খা আলমগীর- বিএনপি নির্বাচনে না এসে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন ও সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে গেছে। তাই তাদের পক্ষে আন্দোলন করার কোনো সুযোগ নেই। বিএনপির অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ড তাদের অনুকূলে নেই। তাই জনগণ আন্দোলন করার মতো সমর্থন কোনো দিনই দেবে না। তারা অপসংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার অপচেষ্টা করছে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের কারণে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে।

প্রশ্ন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্তরাষ্ট্রে বসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে বিভিন্ন কথা বলছেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারাও বেশ কড়া জবাব দিয়েছেন।
জবাবে ম.খা আলমগীর- বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। আর তারই পুত্র ওই ছোকরাকে নিয়ে কোনো কথা বলব না।

আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতার জন্ম ১৯৪২ সালের ১ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করেন। পেশা জীবনে প্রথমের দিকে সাংবাদিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন।

তিনি নওগাঁর মহকুমা অফিসার, যশোরের জেলা প্রশাসক, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক, শিল্প ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কৃষি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে সুশীল প্রশাসন পুনঃস্থাপন কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন।

সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলা ভাষায় এ পর্যন্ত প্রায় ২০টিরও বেশি বই লিখেছেন। ২০০৩ সালে তার লেখা ‘জেলের কথা’ ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ২০০৯ সালে ‘নোটস ফ্রম প্রিজন- বাংলাদেশ’ বইটিও সাড়া ফেলে।

(সংগৃহীত)



মন্তব্য চালু নেই