মতিঝিলে যুবলীগ কর্মী হত্যার পেছনে ‘রাজনৈতিক বিরোধ’
মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে যুবলীগ কর্মী হত্যার পেছনে রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এই ঘটনা অনুসন্ধানের দায়িত্বে থাকা পুলিশের একজন কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন। তবে অনুসন্ধান একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে জানিয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
শুক্রবার রাতে দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত হওয়ার পর ভোরে হাসপাতালে মারা যান যুবলীগ কর্মী রিজভী হাসান বাবু। এখনো আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন আরেক যুবলীগ কর্মী হাসানুল হক ইমন।
যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে ওই এলাকাটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। ওই ওয়ার্ড যুবলীগেরই কর্মী ছিলেন বাবু। যুবলীগের এই ওয়ার্ডের সভাপতি মারুফ রেজা সাগর বলেন, ‘বাবু হত্যার পেছনে অবশ্যই রাজনৈতিক কারণ আছে। এটা মিল্কি (যুবলীগ নেতা) হত্যার মতোই একটি ঘটনা। আওয়ামী লীগের এক নেতার নির্দেশে হিরক, তুষার, সানি, রাজাসহ আট থেকে ১০ জন এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এরা ওই আওয়ামী লীগ নেতার চিহ্নিত ক্যাডার।’
সাগর জানান, ‘যুবলীগের আগামী সম্মেলনে বাবু ওই ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলেন। গত পরশু বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মিলনের সঙ্গে বাবুর বৈঠক হয়। সেখানে এ নিয়ে দুইজনের ঝগড়া-ফ্যাসাদ হয়।’
ওই ঘটনা নিয়ে তদন্ত করছেন এমন একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের উপ-পরিদর্শক বলেন, ‘ঘটনার মোটিভ উদ্ধারে আমরা কাজ করছি। তবে এখন পর্যন্ত বিস্তারিত জানানোর মতো কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে দেখে মনে হচ্ছে এর পেছনে রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে।’
মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক দুলাল কুণ্ডু জানান, গতকাল রাতে মতিঝিল এজিবি কলোনির ক্লাবে আড্ডা দিচ্ছিলেন যুবলীগের কয়েকজন কর্মী। হঠাৎ কয়েকজন চার থেকে পাঁচ জন দুর্বৃত্ত এসে তাদেরকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
বাবুর মাথা, বাম পাজর ও বুকে গুলি লাগে। আর ইমনের গুলি লাগে বাম পাজর ও পায়ে।
মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মারুফ রেজা সাগর গণমাধ্যমের কাছে তিনজনের নামে অভিযোগ করেছেন।
তবে কারা এই হামলা করেছে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি জানিয়ে মতিঝিল থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, যুবলীগের একজন নেতা কয়েকজন সন্ত্রাসীর নামে অভিযোগ করেছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত নন তারা। আজ মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর তার স্বজন এবং সঙ্গীদের সঙ্গে কথা বললেই বেশ কিছু বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা ও আশেপাশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিবাদ পুরনো। ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে মরিয়া নেতা-কর্মীরা প্রায়ই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ায় নিজেদের মধ্যে। আর এই গৃহবিবাদে প্রাণহানি একেবারেই বিরল নয়। কিন্তু রাজধানীতে ঘটা এসব অপরাধের বিচার কতটা হয়, সে নিয়ে আছে প্রশ্ন।
২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে খুন হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কি। পুলিশের তদন্তে জানা যায়, এলাকায় আধিপত্য, টাকার ভাগাভাগিসহ নানা বিরোধে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হন মিল্কি। এই ঘটনায় র্যাবের সঙ্গে ক্রসফায়ারে যুবলীগ নেতা তারেক নিহত হন। সংগঠনের আরও কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ।
ওই বছরেরই ৭ নভেম্বর মতিঝিলে সমবায় ব্যাংক ভবনে আওয়ামী লীগের নেতা ও পরিবহন ব্যবসায়ী খায়রুল আলম মোল্লাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরিবারের অভিযোগ, সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের টোল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে।ঢাকাটাইমস
মন্তব্য চালু নেই