মতিঝিলে তরুণীর সাত টুকরা লাশ

রাজধানীর মতিঝিল থানাধীন ফকিরেরপুল এলাকায় অজ্ঞাতনামা এক তরুণীর সাত টুকরা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার বিকেলের দিকে স্থানীয়দের দেওয়া খবরের ভিত্তিতে মতিঝিল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের টুকরোগুলো উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ফকিরেরপুল এলাকার ১৯৩/১ চারতলা একটি ভবন। নাম রোকেয়া আহসান মঞ্জিল। ভবনের নীচে থাই লেমিনেশনের একটি কারখানা। দ্বিতীয় তলায় মালিকের বড় ছেলে আলহাজ্জ ওয়ালী উল্লাহ ও তৃতীয় তলায় ছোট ছেলে মুবারক উল্লাহ মন্টি থাকেন। চতুর্থ তলায় দুইটি পরিবার ভাড়া থাকেন। দুই ছেলের বাবা গত ছয়মাস আগে মারা গেছেন। এখন ওই ভবনটি তারাই পরিচালনা করেন। সেই চারতলা ভবনের সিড়ি চলে গেছে একেবারে ৭ম তলা পর্যন্ত। ছাদ করা না হলেও সিড়ি আগেই বানিয়ে রেখেছেন।

সেই ৭ম তলার চিলেকোঠা রুম থেকে ওই তরুণীর মাথা পাওয়া যায়। কেউ একজন ফোন করে জানায় ওই ভবনের সিঁড়ি ঘরে একটি লাশ পড়ে আছে। পুলিশ খবর পেয়ে বিকেল ৩টার দিকে ছুটে যায়। এরপর পুরো ভবন তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা, গোয়েন্দা পুলিশ ও সিআইডি কর্মকর্তারা।

ওই ভবন ছাড়াও আশেপাশের ওলি-গলি ও ছাদ তন্ন-তন্ন করে খোঁজা হয়। শেষে পানির ট্যাংকির বিপরীত পাশে ওয়াসার গাড়ি রাখার টিনের চালায় পাওয়া যায় কোমর থেকে গলা পর্যন্ত একটি অংশ। এরপর ১নং গলির আরেকটি ছাদ থেকে দুই পা ও দুই হাতের টুকরো পাওয়া যায়। তার পাশের ছাদ থেকে মেলে উরুর আরো এক টুকরো।

লাশের টুকরো উদ্ধার করা মতিঝিল থানার এসআই জামাল ও আব্দুল আউয়াল  জানান, চার জায়গা থেকে অজ্ঞাতনামা তরুণীর সাত টুকরো লাশ উদ্ধার করা হয়। পরনে কোনো কাপড় ছিল না। মুখমণ্ডল ঝলসানো কালি মাখানো ছিল। পুলিশের ধারণা মেয়েটিকে যাতে কেউ চিনতে না পারে সেজন্য মুখটি আগুন দিয়ে ঝলসে দেওয়া হয়েছে এবং পরে কালি মাখানো হয়েছে।

ঘটনাস্থলে আসা সিআইডির পরিদর্শক আওরঙ্গজেব  জানান, লাশের সুরত দেখে মনে হয়, গতকাল রাতের কোনো এক সময় মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর হত্যাকারীরা ধরা পড়বে এমন আশঙ্কায় মেয়েটিকে টুকরো করে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেয়।

ওয়াসার গাড়ি রাখা স্থানের নিরাপত্তা কর্মী আনোয়ার হোসেন  জানান, সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করি। রাতের বেলা কেউ থাকে না। এখানে কেউ প্রবেশও করে না। তিনি ধারণা করছেন, রাতের কোনো এক সময় অন্য কোনো ভবন থেকে লাশের টুকরোগুলো ফেলে দিয়েছে।

রোকেয়া মঞ্জিলের ভাড়াটিয়া মালতী রানী  জানান, তারা ওই ভবনে প্রায় ১০ বছর থেকে আছেন। বাইরের কেউ ভেতরে প্রবেশ করার সুযোগ নেই। উপরে কেউ রাতের বেলা উঠে থাকতে পারে। আর এ ব্যাপারে তারা পুলিশের কাছেই প্রথম জানতে পেরেছেন।

থাই লেমিনেশনের ওয়ার্ক ইনচার্জ জুয়েল জানান, এটি একটি সংরক্ষিত বিল্ডিং। এখানে কেউ বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারে না। কি কারণে ভবনের ওপরে লাশের মাথা গেল তা জানেন না তিনি। এছাড়া কেউ মেয়ে নিয়ে ভবনে উঠেছে কি না তাও দেখেননি।

এ ব্যাপারে মতিঝিল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিএম ফরমান আলী  জানান, মেয়েটিকে কেউ হয়তো তুলে এনে ধর্ষণ করার পর তাকে হত্যা করেছে। চিনতে পারবে এই মনে করে হত্যাকারীরা তার লাশ টুকরো করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দিয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ও ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এর আগে ২০১২ সালের ২ জুন রাজধানীর হাতিরপুল এলাকায় এক তরুণীর ২৬ টুকরো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মাথাসহ শরীরের বেশকিছু অংশের হাড়-মাংস আলাদা করে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলা হয় পার্শ্ববর্তী ভবনের ছাদসহ আশপাশের চারদিকে। আর নাড়িভূড়িসহ বাকি অংশ ফেলা হয় টয়লেটের কমোডে।

আর ২০১৩ সালের ১৮ অক্টোবর রাজধানীর ভাষানটেক থেকে অজ্ঞাত (২৩) এক তরুণীর গলে যাওয়া সাত টুকরো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।



মন্তব্য চালু নেই